
মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) দেউল বটতলা মোড়ের কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স সরকার টেড্রার্সের বিরুদ্ধে সার বিপণন নীতিমালা লঙ্ঘন করে, চোরাপথে রশিদ বিহীন নন-ইউরিয়া সার এনে মজুদ ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান,লাইসেন্স ব্যতিত তারা বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার এবং কীটনাশক পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে কীটনাশক ব্যবসায়ী রাশেল সরকার ও রুবেল সরকার দু’ট্রাক নন- ইউরিয়া সার নিয়ে আসে। একটি কলমা ইউপি এলাকায় যায় আর অপরটির সার সরকার টেড্রার্সে মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। তবে এসব সারের কোনো ক্রয় রশিদ ছিলনা। ফলে সার আসল-নকল না কোনো ডিলারের সরকারি বরাদ্দের তা বোঝার উপায় নাই।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাশেল সরকার বলেন,তানোরে সারের সংকট বাইরে থেকে সার না আনলে আলু চাষ হবে না।তিনি বলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও বিএস বিপ্লব সাহেবের সঙ্গে কথা বলে বাইরে থেকে এসব সার আনা হয়েছে, তিনি বলেন জামাল মেম্বার ও ভাই ভাই দই ভান্ডারের আলুর প্রজেক্টের জন্য এসব সার আনা হয়েছে। তিনি বলেন,তিনি ট্রাকে করে সার এনে বিভিন্ন আলুর প্রজেক্টে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কতিপয় কৃষি কর্মকর্তার মদদে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র ক্রয় রশিদ ছাড়াই নন ইউরিয়া সার চোরাপথে এনে মজুদ ও বিক্রি করছে। সচেতন মহলের ভাষ্য সরকার অনুমোদিত ডিলারগণ যখন অগ্রিম টাকা দিয়েও চাহিদামত এসব সার পাচ্ছেন না। তখন মধ্যস্বত্ত্বভোগী একশ্রেণীর কীটনাশক ব্যবসায়ী লাইসেন্স ব্যতিত কিভাবে বিক্রি করছে। এসব কারণে সরকার অনুমোদিত ডিলারদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার বিসিআইসি অনুমোদিত এক সার ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই কৃষি কর্মকর্তার সময়ে সার নিয়ে যা চলছে, তাতে তাদের ব্যবসা করা দায়, এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার কোনো উপায় থাকবে না। কারণ ব্যাংক ঋণের টাকায় তাদের ব্যবসা এভাবে চোরাপথে সার আসা বন্ধ না হলে তাদের দেউলিয়া হতে হবে। তাদের গুদাম ও দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন এবং ব্যাংকের ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে, কিন্ত্ত তারা বাইরে এক ছটাক সার এনে বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ মধ্যস্বত্ত্বভোগী একশ্রেণীর কীটনাশক ব্যবসায়ী লাইসেন্স ব্যতিত বাইরে থেকে সার এনে বেশী দামে বিক্রি করছে। তিনি বলেন,যদি সেটাই হয় তাহলে সার বিক্রি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। আবার এসব সারের ক্রয় রশিদ না থাকায় সার কিনে কেউ প্রতারিত হলে তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তানোর পৌর এলাকার তালন্দ বাজারের বালাইনাশক ব্যবসায়ী মনিরুলের দোকানে সার পেয়ে কোন মেমো দেখাতে না পারার অপরাধে ১ লাখ ২৬ হাজার, একই কারনে টিপুর ১০ হাজার ও গণেশের ১৫ হাজার এবং কলমা ইউপির সার ব্যবসায়ী নজরুলের পাচারে দায়ে এক লাখ টাকা, ধানতৈড় মোড়ের খুচরা সার ব্যবসায়ী জসিমের ট্রাকে করে সার নামানোর দায়ে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। অথচ এখন প্রকাশ্যে একই অপরাধ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে সবাই চুপ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন,বাইরে থেকে সার আসলে ভালো তবে,তিনি কাউকে অনুমতি দেননি। আপনাকে ম্যানেজ করা হয়েছে এ কথা তারা বলছে এই প্রশ্নের জবাব এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন আদো আমি তাকে চিনি কিনা সন্দেহ আছে। এ বিষয়ে সে আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগই করেনি।
রাজশাহী জেলা বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার সমিতির এক জৈষ্ঠ ডিলার বলেন, অনুমোদিত ডিলার বা ডিলারের মাধ্যমে ব্যতিত এভাবে ট্রাকে করে সার নিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই, এটা অবৈধ, রশিদ বিহীন এসব সার, তিনি পুলিশে ধরিয়ে দেবার আহবান জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সার ডিলার সমিতির এক ডিলার বলেন, কোনো কৃষকের পক্ষে ক্রয় রশিদ ব্যতিত এক সঙ্গে এতো বিপুল পরিমাণ সার নিয়ে আসা অসম্ভব। তিনি বলেন, যেখানে আমরা চাহিদা মতো নন-ইউরিয়া সার পায় না, সেখানে সাধারণ কৃষক কিভাবে একসঙ্গে এতো সার পায়। তিনি বলেন, যদি সাধারণ কৃষকেরা এভাবে সার আনে তাহলে ব্যাংক ঋণের কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তাদের ডিলারি করার কোনো মানে হয় না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জামাল মেম্বার বলেন, কৃষি কর্মকর্তার সহযোগীতায় তিনি বাইরে থেকে সার আনছেন, এখানে সাংবাদিকের খবর করার কি আছে বুঝিনা,এটা আমি আর কৃষি কর্মকর্তা বুঝবো।#