1. admin@sobujnagar.com : admin :
  2. sobujnoger@gmail.com : Rokon :
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ:
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন শরীফ উদ্দিন প্রবীন বিএনপি নেতাদের মনোনয়ন দেয়ায় নির্বাচনী এলাকায় নতুন করে স্বস্তি: সিরাজুল ইসলাম সরদার শিবগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে জামাতের মতবিনিময় সভা  চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি’র অভিযান, বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি)র তল্লাশি অভিযান পত্নীতলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা: দুই ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: বিএনপির রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের সমীকরণ ​ আত্রাইয়ে কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীত, খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আত্রাইয়ে উপজেলা বিএনপির আনন্দ মিছিল শিবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি কর্তৃক ২৯টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার

ধর্ম, শান্তি ও মানবতার সন্ধানে

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১২৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

৥ ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম ৥ ​

ভূমিকা: ​পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্ম সবসময়ই মানব সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। এটি মানুষকে নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়। কিন্তু একই সাথে, ধর্মের নামে সংঘাত, হানাহানি এবং রক্তপাতের ঘটনাও কম নয়। অনেক সময় ক্ষুব্ধ মানুষ তাই প্রশ্ন করে, ধর্ম কি আসলে পৃথিবীর শান্তির পথে বাধা? ধর্মকে বাদ দিলে কি পৃথিবী আরও শান্তিপূর্ণ হবে? এই নিবন্ধে আমরা ধর্মতত্ত্বের গভীরতা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। ​

ধর্মের অপব্যবহার বা বিকৃত ব্যাখ্যায় বহু মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এই নিবন্ধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং সার্বিক ধর্মতত্ত্বের বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা দেখাব যে, ধর্ম প্রকৃতপক্ষে শান্তি ও সহাবস্থানেরই শিক্ষা দেয়। ধর্মকে যারা ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তারাই এর প্রকৃত সৌন্দর্যকে নষ্ট করে। ​

ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য: শান্তি ও সহাবস্থান ​ধর্মের মূল উদ্দেশ্য কখনো হানাহানি বা সংঘাত নয়, বরং মানবজাতির মধ্যে সম্প্রীতি, ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠা করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ​”হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই সর্বাধিক সম্মানিত, যে সর্বাধিক মুত্তাকী (আল্লাহভীরু)।” (কুরআন, ৪৯:১৩) ​

এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে বলে যে, আল্লাহ মানুষকে জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছেন একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য, সংঘাতের জন্য নয়। ইসলামে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের কোনো ধারণা নেই। শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি শুধু তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। ​

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ​”আল্লাহর সৃষ্ট সকল প্রাণী তাঁর পরিবারের সদস্য। আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই সর্বাধিক প্রিয়, যে তাঁর পরিবারের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালু।” (সহিহ মুসলিম) ​ধর্মের এই শিক্ষাগুলো মানুষকে শুধু নিজ ধর্মের অনুসারীদের প্রতি নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির প্রতি দয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়। ​

হানাহানির কারণ: ধর্ম নয়, ধর্মের অপব্যবহার ​যারা মনে করেন, ধর্মের কারণে সংঘাত হয়, তারা আসলে ধর্মকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। সংঘাতের মূল কারণ হলো: ​রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ: ধর্মকে প্রায়শই রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র নিজেদের ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করে। তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

​অন্ধ অনুকরণ ও অজ্ঞতা: অনেকে ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জন না করে পূর্বপুরুষ বা তথাকথিত ধর্মগুরুদের কথা blindly অনুসরণ করে। তারা ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দেয়। ​

সহনশীলতার অভাব: অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করার প্রবণতা সংঘাতের জন্ম দেয়। প্রকৃত ধর্ম সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দেয়। ​ধর্মের অপব্যবহারের ফলে যে হানাহানি হয়, তার দায় ধর্মকে দেওয়া যায় না। যেমন, কেউ ছুরি দিয়ে অপরাধ করলে তার দায় যেমন ছুরির উপর বর্তায় না, তেমনি ধর্মের নামে কেউ অন্যায় করলে তার দায় ধর্মের নয়, বরং সেই অন্যায়কারীর। ​

এই প্রসঙ্গে একটি গল্প বলা যেতে পারে। এক লোক একটি নতুন সুন্দর গাড়ি কিনলো। কিন্তু সে গাড়িটি চালালো না, বরং তার রঙ, ডিজাইন এবং ব্র্যান্ড নিয়ে অন্যদের সাথে ঝগড়া শুরু করলো। আরেকজন এসে বললো, ‘গাড়িটি তো চলার জন্য, ঝগড়া করার জন্য নয়।’ ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো মানবজীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করে তোলা, কিন্তু কিছু মানুষ ধর্মের বাহ্যিক রূপ নিয়ে ঝগড়া করে এর মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যায়। ​

সত্যের পথ: জ্ঞান ও প্রজ্ঞার চর্চা ​আপনার বলা এই কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, “সত্য অন্বেষণকারীর তুলনায় হুজুগে সমর্থনকারীরা সংখ্যায় বেশী হওয়ার কারণে সত্য মুখ থুবড়ে পড়ে!” এটি একটি চরম সত্য। ধর্মের প্রকৃত রূপ ও সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা থাকতে হবে। ​

পবিত্র কোরআনে বারবার জ্ঞান অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, ​”যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?” (কুরআন, ৩৯:৯) ​

এই আয়াতটি জ্ঞান অর্জন ও অজ্ঞতার পার্থক্য তুলে ধরেছে। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা উপলব্ধি করতে পারেন এবং এর অপব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন। অজ্ঞতা এমন এক অন্ধকার সাগর, যেখানে মানুষ সত্যের আলো খুঁজে পায় না এবং হুজুগের ঢেউয়ে ভেসে যায়। ​

উপসংহার: ​ধর্মকে বাদ দিয়ে পৃথিবী শান্ত হবে, এমনটা ভাবা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতোই। কারণ ধর্ম মানব সমাজে নৈতিকতা, শান্তি এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ধর্মের মূল শিক্ষা কখনও হানাহানির নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহাবস্থানের। ​

ধর্মের নামে যত সংঘাত হয়েছে, তার মূলে রয়েছে ক্ষমতা, লোভ, অজ্ঞতা এবং অসহিষ্ণুতা। ধর্মকে পুঁজি করে যারা সংঘাতের পথ বেছে নেয়, তারা আসলে ধর্মের প্রকৃত রূপকে বিকৃত করে। আমাদের কাজ হওয়া উচিত ধর্মকে বাদ দেওয়া নয়, বরং ধর্মের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং এর অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। সত্য, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার আলোকেই কেবল আমরা ধর্মকে তার প্রকৃত মহিমায় ফিরিয়ে আনতে পারি এবং একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠন করতে পারি!#

——- লেখক একজন শিক্ষক কবি গবেষক এবং নিবন্ধকার

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট