বিশেষ প্রতিনিধি: এলাকার বাইরে ধান কাটতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যারা মারা গেছেন তাদের একজন শ্রমিক বাবুল প্রামানিক (৪২)। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে ধান কাটতে বাগমারা গিয়ে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন বাবুল প্রামানিক নামে এই শ্রমিক। তিনি বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের পলাশিফতেপুর গ্রামের মৃত রিয়াজ প্রামানিকের ছেলে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর’২৫) সকাল ৯টায় জানাজার নামাজ শেষে এলাকার কবরস্থানে বাবুলের মরদেহ দাফন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় মেম্বর মোস্তাফিজুর রহমান শিশির।
তিনি জানান, গ্রামের ৩জন মিলে ধান কাটতে গিয়েছিল। সোমবার রাতে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে মঙ্গলবার দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন,পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বাবুল প্রামানিক । ‘শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। তাঁকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা । বাবুলের ফুফাতো ভাই আমির হোসেন জানান ,গত শনিবার তিনিসহ বাবুল ও সিদ্দিক ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কাঠালবাড়ি গ্রামে গিয়েছিলেন। সোমবার (২২-০৯-২০২৫)দুপুরে ক্ষেত থেকে আঁটিবাঁধা ধান নিয়ে কাদামাখা রাস্তা বয়ে গৃহস্থের বাড়ি ফেরার পথে মাটিতে পা পিচলে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। তখন বুকে ও মাজায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে । গৃহস্তের বাড়িতে নেওয়ার পর স্থানীয় চিকিৎসক এসে ইনজেকশন ও ঔষধ দেন। কিছুটা স্বস্তি বোধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। সন্ধ্যার আগে অসুস্থবোধ করলে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত বাবুল তিন সন্তানের বাবা ছিলেন। তাঁর সংসারে ছিল- মা , স্ত্রী, ১৬ বছরের ছেলে আশিক, ১২ বছরের মেয়ে খাদিজা, ও ৩ বছরের মেয়ে আছিয়া। খাদিজা স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বড়ছেলে লেখা পড়া বাদ দিয়েছে।
স্ত্রী আরজিনা বেগম বলেন,অনেক আশা নিয়ে ধান কাটতে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু হাসি মুখে তাঁর আর বাড়ি ফেরা হলো না। ফিরেছে তাঁর নিথর দেহ। মা জাহেরা বলেন, ‘ছেলেটা ধান কাটতি যাবার আগে কইয়ে গেছে, বাড়ি আইসে আমার কাপড় কিইনে দিবি। এখন কেডা কাপড় কিনে দিবি। তিনটা সন্তানরে এতিম করে ছাওয়ালডা আমার অকালে চইলে গেল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, তিনি তাঁদের পাশের থাকার চেষ্টা করবেন । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবুলের মতো ধান কাটতে গিয়ে ২০২২ সালের ৪ মে- গোচর গ্রামের কদম আলী,২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর পূর্ব কালিদাশখালি গ্রামের নয়ন হোসেন(২২), ও ২০২৪ সালের ৫ মে বলরামপুর গ্রামের আশিক ইসলাম(২৪)মারা যায়। ২০১৭ সালের ৪ মে- কাটা ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক উল্টে কালিদাশখালি চরের সোহেল রানা(২৬),জয়েন মোল্লা(৩৫) মারা যান।#