বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় টাইফয়েড টিকাদান অভিযান’২৫ সম্পর্কে উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার(১০-০৯-২০২৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে এর আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আশাদুজ্জামান আশাদ। সভায় ডাঃ সৌমিতা পান্ডে জানান, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পেইন শুরু হবে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ টিকা পাবে। স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে এবং ইপিআই সেন্টারে টিকা দেওয়া হবে। টিকা পেতে নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর। তিনি সবাইকে দ্রুত নিবন্ধনের আহ্বান জানান। ১৮ কর্ম দিবসের মাসব্যাপি- উপজেলায় প্রায় ৪৭ হাজার শিশুকে বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
তিনি বলেন,’টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এটি শতভাগ নিরাপদ। পৃথিবীর অনেক দেশে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আগে দেশে এই ভ্যাকসিন বেসরকারি পর্যায়ে কিনে দেওয়া হতো, এবার সরকার বিনামূল্যে দেশের প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি শিশুকে দেবে সরকার।’
ডাঃ আশাদুজজামান জানান, টাইফয়েড হলো স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি সিস্টেমিক সংক্রমণ, যা সাধারণত দূষিত খাদ্য বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। উপসর্গগুলো প্রায়ই অস্পষ্ট থাকে এবং অনেক সময় অন্যান্য জ্বরজনিত রোগের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। গুরুতর ক্ষেত্রে জটিলতা বা মৃত্যু ঘটতে পারে। দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও নিরাপদ পানির অভাবে টাইফয়েড বেশি দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, এক ডোজের ইনজেকটেবল এই টিকা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায় ভ্যাকসিনটি এসেছে। তিনি বলেন, যেকোনো ওষুধের মতো এরও কিছু সাইড ইফেক্ট থাকতে পারে, তবে বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
সভায় উপস্থিত ছিলেন-বিএনপি নেতা সহকারি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন,জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মিঞা, মাওলানা সাজেদুর রহমান সহ মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকগন।
কলেজ শিক্ষক আব্দুল হানিফ মিয়া বলেন, ‘এবারই প্রথম সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে, তাই কিছুটা ভয় পাচ্ছি। তবে নিরাপদ ভ্যাকসিন হিসেবে বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বরাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বর্তমানে টাইফয়েড জ্বর নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়ভাবে স্থায়ী ও প্রাদুর্ভাব, উভয় পরিস্থিতির জন্য তিন ধরনের ভ্যাকসিন সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) সব বয়সের জন্য রুটিন টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যবহারে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, কারণ এটি উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে, কম বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী এবং দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেয়। সংস্থাটি বলেছে, টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি অবশ্যই রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য প্রচেষ্টার সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা, পানির মান ও স্যানিটেশন উন্নয়ন এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ।#