মোঃ ফিরোজ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নওগাঁর নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্য আত্রাই নদীর দুটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায়, কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে জনমনে। অপরদিকে দিনে ও রাতে নদী সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং জরুরী অবস্থায় করনীয় বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন করাসহ নানা বিষয়ে তৎপরতা চলমান রেখেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল।
সরজমিন নওগাঁ আত্রাইয়ের পতিসরে গিয়ে দেখা যায় লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যার ফলে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের পতিসর-সমসপাড়া পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তার উপর কোমর পানি হওয়ায় যান চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এদিকে ওই এলাকায় পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নভূমি বাহাদুরপুর, দমদত্তবাড়িয়া, হিঙ্গুলকান্দি, জগন্নাথপুরসহ কয়েক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব গ্রামের লোকজন তাদের গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। গো চারণভূমি ও উঁচু জায়গার অভাবে তারা তাদের এসব গবাদি পশু বাড়ির বাইরে বের করতে পারছেন না। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় নদীর পানি কমতে শুরু করায় ওই এলাকাগুলোর পানি দ্রুতই নামতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল।
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ রসুলপুর, সদুপুর, লালুয়া, বেওলা, নন্দনালী, জগদাস, শিকারপুর, দুবাই, গুরনৈ স্থানগুলো দিনে এবং রাতে পরিদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডও সব সময় উপজেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। তবে নদীর তীরবর্তী ও কিছু কিছু নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করায় সাময়িক ভাবে কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। দ্রুতই যেহেতু পানি কমছে সেহেতু পানি কবলিত গ্রামগুলো থেকেও দ্রুত পানি সরে যাবে। তবে আগামীতে যদি আকাশের ভারী বৃষ্টিপাত আর না হয় এবং উজান থেকে পানি আসা কমে তাহলে নতুন করে নওগাঁয় বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাকিবুল হাসান জানান, জেলা প্রশাসক এর সার্বিক নিদের্শনা মোতাবেক সব সময়ই আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়া আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোও সব সময় পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। প্রশাসন যে কোন সমস্যায় সব সময় মানুষের পাশে আছে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বাত্মকভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষার্থে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে একটি করে দল গঠন করা হয়েছে।
উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.ফারুক বকত নিজের বন্যা কবলিত এলাকা সম্পর্কে বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যার কারনে পতিসর-সমসপাড়া পাকা সড়ক বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মাঠের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে বিপাকে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে কয়েক গ্রামের মানুষ। নিচু করে পাকা রাস্তা সংস্কার করায় সড়ক বিভাগকে দায়ী এবং একটু বন্যায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।#