1. admin@sobujnagar.com : admin :
  2. sobujnoger@gmail.com : Rokon :
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:
সাইটসেভার্স এর সহযোগিতায়,ব্র্যাকের উদ্যোগে দাকোপে উপজেলা পর্যায়ে অবহিতকরণ সভা  কালীগঞ্জে গাজীপুরের নবাগত ডিসির মতবিনিময় আত্রাইয়ে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান উদ্বোধন পত্নীতলায় আশা শিক্ষা কর্মসূচির অভিভাবক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ খুব তাড়াতাড়ি সকল পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে: রাজশাহীতে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা রূপসা বর্নমালা শিক্ষালয়ে ফলাফল প্রকাশ ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত তানোরে আমণের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা তানোরে বিদ্যুৎ শাটডাউনে জড়িতরা বহাল তবিয়তে রকমারি সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন আত্রাই উপজেলার কৃষকরা

শ্রম আইন লঙ্ঘন করে গেটম্যানদের কাজ করাচ্ছেন রাজশাহী রেল কর্তৃপক্ষ

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২
  • ১৫৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

আবুল কালাম আজাদ ………………..

শ্রম আইনে একজন শ্রমিকের ৮ ঘন্টা কাজের  নিয়ম থাকলেও   শ্রম আইন লঙ্ঘন করে রেলের গেটম্যানদের ১০ থেকে ১২ ঘন্টার বেশি কাজ করাচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত সময়ের কাজের জন্য তাদের দেওয়া হয়না কোন সুযোগ সুবিধা।

 

বেতন সীমিত, কিন্তু কাজের সময়ের হিসাব নেই, থাকার স্থানেও নেই তেমন সুবিধা, এর মধ্যেই চলে রেলের গেটম্যানদের কাজ।ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেও কাজের বিরাম নেই। বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও.   টেনশন’নিয়ে ছুটতে হয় বেশ দূরে।বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও যেতে পারেনা দায়িত্বের খাতিরে। লোকজন সিগনাল মানে না, ব্যারিকেড মানে না। আর দুর্ঘটনা হলে দোষ হয় গেটম্যানদের। ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন রাজশাহীর ভদ্রা লেভেল ক্রসিংয়ের কর্তব্যরত একজন গেটম্যান ।

 

লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথম প্রশ্নটি ওঠে- গেটম্যান কি করছিলো,কোথায় ছিল? এছাড়া শাস্তির প্রথম কোপটিও পড়ে তাদের উপরেই। দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তি ছাড়াও সকল সুবিধাবঞ্চিত গেটম্যানদের  কষ্টগাথা জীবন থেকে যায় আড়ালেই।

 

চট্টগ্রামের খৈয়াছড়ায় ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১১ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনা সামনে এসেছে লেভেল ক্রসিংয়ে দূর্ঘটনার বিভীষিকার কথা। গত ২৯ জুলাইয়ের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর ঐ লেভেল ক্রসিং গেটের পাহারাদার সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে রেল পুলিশ।

স্থানীয়রা তার দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুললেও সাদ্দামের দাবি, তিনি ব্যারিয়ার নামিয়ে যানবাহন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি যাওয়ার জন্য কেউ একজন সেই ব্যারিয়ার তুলে দিয়েছিল।এই দুর্ঘটনার পর পূর্ব রেল দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না হওয়ায় ‘প্রকৃত ঘটনা’ জানা সম্ভব হয়নি।

 

এক সমিক্ষায় জানাগেছে ২০২১ সালে রেলপথে ৯৯টি দুর্ঘটনায় ১০৫ জনের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে লেভেল ক্রসিংয়েই ঘটেছে ১৮টি দুর্ঘটনা, যেসব ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২২৭ জন। এর মধ্যে ১৯১ জনই প্রাণ হারিয়েছেন লেভেল ক্রসিংয়ে।

 

পশ্চিম রেলের বেশ কয়েকজন গেটম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জনবল কম থাকায় তাদের দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। জরুরি প্রয়োজনেও ছুটি মেলে না, কর্মস্থলে নেই স্যানিটেশন ,পানির ব্যবস্থা। রোদ-বৃস্টিতে ভিজে পথচারী, যানবান ও ট্রেনের নিরাপত্তা দেন তারা।একে তারা নিজেদের বঞ্চনার জীবন বলছেন ।

 

প্রায় চার বছর ধরে  রাজশাহী রেলগেটের গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন  সাকিল। দিনে ৮ ঘণ্টা কখনওবা তার বেশি সময় দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের।পারিবারিক অসুবিধা বা জরুরী প্রয়োজনে ছুটিও মিলেনা তাদের। মানুষ ঈদে বাড়িতে যায়, আমরা ডিউটি করি। ঈদের ছুটিতে যানবাহনের চাপ  থাকায় তাদের কাজ আরও বেড়ে যায়। আক্ষেপ করে কথা বলছিলেন কাশিয়াডাঙ্গা রেলগেটের গেটম্যান জহুরুল ইসলাম।

 

তিনি আরো বলেন, চাকরিতে যোগদানের পর তিনি কোনদিন ছুটি পাননি । গত ঈদুল আযহায় মায়ের আকুতিতে গেটে একজন লোক রেখে তিনি দেশের বাড়িতে যান। এরপর তার চাকরি যায়যায় অবস্থা। অনেক অনুরোধ বিনয়ের পর তাকে ছয় দিন অনুপস্থিত দেখিয়ে চাকুরী রক্ষা হয়।

 

রেলের নিয়মানুযায়ী অনুযায়ী, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে তিন শিফটে ৪ জন করে  ১২ জন গেটম্যান থাকার কথা। কিন্তু কোনো কোনো লেভেল ক্রসিংয়ে এর অর্ধেকও  নেই। ফলে আট ঘণ্টারও বেশি ডিউটি করতে হয় অনেককে। অনেক ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টাও ডিউটি করতে হয়।

 

নওগাঁ জেলা শহরের ২ নম্বর রেল গেটের গেট কিপার মানিক মিয়া জানান, রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্পের অধীনে তিনিসহ দুজন এই গেটে দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। তাদের শ্রম আইন লঙ্ঘন করে রেল কতৃপক্ষ যান্ত্রীকের মত বিরামহীন ভাবে কাজ করাচ্ছেন।

 

২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া দুটি প্রকল্পের আওতায় রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭০২টি লেভেল ক্রসিং উন্নয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় অস্থায়ী ভিত্তিতে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। তারা প্রতি মাসে ১৪, ৪৫০ টাকা করে বেতন পান। আর যারা স্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের অধীনে চাকরি করেন, তাদের বেতন প্রকল্পের কর্মীদের চাইতে খানিকটা বেশি। তবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দুধরনের কর্মীরই অভিযোগ একই।

 

আব্দুলপুরের লেভেল ক্রসিং গেটের গেটম্যান নূরনবী বলেন, লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানরা  “মাসের বেতন অনেক সময় দুই মাস পরে পাই, অনেকসময় তিন চারমাসেও হয়। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা ডিউটি করে যদি মাসের বেতন মাসে না পাওয়া যায়, তাহলে খাব কী? এছাড়া তাদের ঈদ বোনাস ও নিয়ে ছিনিমিনি করা হয়। সম্প্রতি গত ঈদুল আযহায় তাদের বোনাসও দেওয়া হয়নি। বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল কীভাবে দিব? বেতন ১৪ হাজার টাকা, সেটাও দেয়া হয় অনিয়মিত।  তিন মাস পর পাইলে তো সংসার সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

 

গেটম্যানেরা জানাই,অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দিনরাত পরিশ্রমের করার পর লেভেল ক্রসিংয়ে  দায়িত্বে অবহেলার কারণে’ তাদের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনার অভিযোগ চাপিয়ে দেয়াটা মানতে নারাজ তারা।দূর্ঘটনার জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষেও ।

 

তাদের ভাষ্য, দু-একটি দুর্ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলা থাকতে পারে। কিন্তু সব জায়গাতে ট্রেন আসার সংকেত পেয়ে ব্যারিকেড ফেলা হলেও মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাসসহ পথচারীরা ব্যারিকেড তুলে, কিংবা ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হয়। আর তাতেই দুর্ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।

 

রাজশাহীর  বর্নালী রেলগেটের  শাহিন রেজা বলেন , ট্রেন গেট ক্রসিং এর সময় ঝামেলা করে বেশি মোটর বাইক চালকেরা।তারা ব্যারিকেডের কোনো তোয়াক্কাই করে না। একে তো মানুষজন ব্যারিকেড ফেলার পরেও সেটার তোয়াক্কা করে না, তার উপর এই লেভেল ক্রসিংয়ের দুইটা ব্যারিকেডের মধ্যে একটা প্রায় নষ্ট। সময়মত ব্যারিকেড নামানো যায় না। বারবার (কর্তৃপক্ষকে) বলার পরেও তারা বিষয়টা আমলে নেননা।

 

মানুষ আইন মানে না, অনেক সময় ক্রসিংয়ের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকেও অনেকে লাফ দিয়া নামার চেষ্টা করে, তাদের কিছু হলেও দোষ গেট রক্ষকের। এছাড়া স্থানীয় নেতা, বখাটে মাস্তানদের ঝামেলা বেশি। তারা বাইক নিয়ে আসে। ব্যারিকেড ফেলার পরে যেতে না দিলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এমনকি শারীরিক নির্যাতন করে তারা।

 

রেলওয়ে উন্নয়ন প্রকল্প আওতায় নিযুক্ত গেট ম্যানদের দাবি , “তাদের সময়মত বেতন দেয়া, বেতনে বৃদ্ধি, দ্রুত সময়ে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, ও বছরে তিনটি উৎসব ভাতা , কর্ম স্থল থাকার ঘর  থাকার উপযুক্ত করা, স্যানিটেশন ও পানির ব্যবস্থা করা,রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাতা দেওয়া ও ইউনিফর্ম, জরুরী প্রয়োজনে তাদের ছুটি দেওয়া, রেলের হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা সেবার সুযোগ দেওয়াসহ   তাদের দাবিগুলি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান গেটম্যানরা।

 

রেলওয়ে পশ্চিম রাজশাহীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ: আবু জাফর বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে গেট মেনদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।ট্রেন না থাকলেও কোনো যানবাহন যদি ক্রসিংয়ের কাছে গিয়ে লাইনের সাথে আটকে যায়; তাহলে সেক্ষেত্রে কী করতে হবে, ট্রেন আসার আগে কিভাবে ব্যারিয়ার ফেলতে হবে- এসব বিষয়ে গেটম্যানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কতার জন্য ঘণ্টা বসানো হয়েছে।লোকবল সংকটের জন্য গেট ম্যানরা

 

ছুটি ভোগ করতে পারেনা। তবে জরুরী বিশেষ প্রয়োজনে অন্যগেট থেকে লোক এনে ছুটি দেয়া হয়। এছাড়া তাদের সমস্যাগুলি সমানের চেস্টা করা হচ্ছে।

 

গেটম্যানদের সার্বিক সমস্যার বিষয় নিয়ে রেলওয়ে পশ্চিমের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন,  রেলওয়ের আইন অনুযায়ী, রেলপথের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্যে চলাচল আইনত নিষিদ্ধ। ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে। রেলওয়ে আইন ১৮৯০-এর ১২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ট্রেনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে বা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হবে।

 

তিনি আরো বলেন, লোকবল কম থাকায় গেটম্যানরা নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের কর্তব্য পালন করে থাকে।তাদের থাকার জায়গার সমস্যা সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না।  দ্রুত তাদের থাকার ঘর বসবাসের উপযুক্ত করে, বিদ্যুত,সানিটেশন ও পানির ব্যবস্থা করা হবে।

 

এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে তাদের বেতন নিয়মিত করা, স্থায়ী কর্মচারীদের মত তাদের  রেলের হাসপাতালে চিকিৎসহসহ তাদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করবেন ।

 

প্রকল্প গেটম্যানদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, রেলের আইন অনুযায়ী চাকরি স্থায়ীকরণ হয়। রেলের উন্নয়ন  প্রকল্পের আওতায় গেটম্যানদের চাকুরি স্থায়ীকরণে আইনি বাধা আছে, তবুও  তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

পরিশেষে লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকুক কিংবা না থাকুক অথবা  ব্যারিয়ার দিয়ে বন্ধ থাকুক বা না থাকুক- সবক্ষেত্রেই পারাপারের সময় সড়কযানের চালককে নিজ দায়িত্বে ট্রেন চলাচলের গতিবিধি খেয়াল করে সকলকে গেট পারাপারের পরামর্শ দেন পশ্চিম রেলের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।#

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট