বিশেষ প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে চলতি বছরের জুলাই আগষ্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে শহিদ ও আহতদের স্বরণে স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর’২৪) উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে প্রতিবন্ধী সাহায্য ও সহায়তা কেন্দ্রের অফিসার মুনসুর আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্বরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার। কোরআন তেলায়াত,গীতাপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুতে শহিদ ও আহতদের স্বরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
শাম্মী আক্তার বলেন-ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতের পরিবারের পাশে থাকবে সরকার। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার সবপ্ন পূরণে তাদের অবদান স্বরণীয় হয়ে থাকবে। স্বরণ
সভায় উপস্থিত-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকায় অংশ নেওয়া গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদ (৩০) বক্তব্যকালে বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ননা করে বলেন, পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। নির্বিচারে গুলি করা দেখে মনের টানেই আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলনে গিয়ে নিহতের লাশ আর আহতদের যন্ত্রনা নিজ চোখে দেখেছি। নিজে অন্তত ৩হাজার মানুষকে গুলবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন। নিজ হাতে ৭ জনের লাশ বের করেছেন। ঢাকার বনশ্রীতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে দেখেছেন পেছন থেকে পুলিশ, উপরে চক্কর দেওয়া হেলিকেপ্টার থেকে আশপাশে নির্বিচারে গুলি ছুড়ার দৃশ্য। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রনি আহমেদ নিজেও। রনি আহমেদ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার রাজশাহীর চন্ডিপুর গ্রামের এলাহি বক্স ওরফে আফাং মিয়ার দ্বিতীয় ছেলে। বাবা পেশায় কৃষক। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন রনি আহমেদ।
২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভারসিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সাইন্স থেকে ইলেট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। পরে ঢাকায় জেড থ্রি করপোরেশনে চাকরিজীবন শুরু করেন। বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানী এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-এ কর্মরত।
তিনি বলেন, ১৯ জুলাই দুপুরে বাসায় ফেরার সময় পুলিশকে গুলি করতে দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলেন না। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজনেক একত্রিত করে আন্দোলনে অংশ নেন । ঘটনাস্থল এলাকার এ ব্লক,জি ব্লকসহ রাস্তায় বেরিকেড দেন। মাগরিবের আযান হবে এরকম মূহুর্তে ড্রোন এসে দেখে যাওয়ার পর উপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে গুলি ছুড়ছে। পুলিশ-বিজিবি সোসাইটির মধ্যে ঢুকে এভিনিউ রোডে গুলি করা শুরু করলো। সামনের ৬/৭ জন, গুলি লেগে তারা পড়ে গেল। তাদের লাশ নেওয়ার জন্য গুলি করতে করতে ভেতরে ধাওয়া করে চলে আসলো পুলিশ।
সেই সময়ে ,বিজিবির ছোড়া গুলি বাম পায়ের উরু ভেদ করে এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ জায়গায় অনেক রক্তপাত হচ্ছিলো। আশপাশে তেমন কেউ ছিল না, ভাবছিলেন আর বাঁচবেননা। তখন কালেমা পড়া শুরু করেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রামপুরার বনশ্রী এলাকার এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের এক মহিলার বাসায় নিয়ে গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। তাৎক্ষনিক একজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে চলে যান । পরে এ্যাডভান্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিপুল সংখ্যক গুলি বিদ্ধ মানুষ। সিট নাই, ফ্লোরে তাদের চিকিৎসা চলছে। আমি ৩ নম্বর রোডের এফ ব্লকের ২৮ নম্বর বাসায় চলে আসি। সেখান থেকে চুপি চুপি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম।
২৬ জুলাই ডাক্তার বললো এখানে আইসেননা না,তুলে নিয়ে যাবে। পরে ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরলেও ভয়ে নিজ বাসায় ছিলেননা। পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ৫আগষ্ট সেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর নিজ বাড়িতে ফেরেন।
আগষ্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে বাঘা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘুমের মধ্যে এখনো লাফিয়ে উঠি। গুলির শব্দ আমার কানে বাজে।
বক্তারা বলেন, দেশে যেন এমন পরিস্থিতি আর দেখতে না হয়। নতুন স্বপ্নে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বির্নিমাণে নিজেদের অবস্থান থেকে নীতি নৈতিকতার সাথে জনগন ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আজকের সভা থেকে এই হোক আমাদের সকলের অঙ্গিকার। রনির নাম করণে তার বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা পাকা করনের দাবিসহ আহত হয়ে পঙুত্ব বরণকারিদের উন্নত চিকিৎসা ও নিহতের যুক্তিসন্মত ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আফম হাসানের স্বাগত বক্তব্যর পর বক্তব্য রাখেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি সাবিহা সুলতানা ডলি, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফকরুল হাসান বাবুল,বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন,উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা জিন্নাত আলী,বর্তমান আমির আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাহদেলৈা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম,সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মিঞা,বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ আলী। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আশাদুজ্জামান, কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান,সাবেক মেযর নজরুল ইসলাম,শিক্ষক বাবুল ইসলাম,হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম,শিক্ষক পরিমল চন্দ্র সহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধান,রাজনৈতিক,সামাজিক ব্যক্তিবর্গ,শিক্ষক,গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদের বাবা এবং তার স্বজনরা । #