বিশেষ প্রতিনিধি………………….
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীকে শনিবার (০৬-০৭-২০২৪) জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মতিঝিল এলাকা থেকে আক্কাছ ও তার অপর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেন। পরে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আসামিদের হস্তান্তর করা হয়। শনিবার সকালে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর দুপুরে আক্কাছকে রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
ঢাকায় আক্কাছ আলীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অপর চার সহযোগী আসামি মজনু, টুটুল, আব্দুর রহমান মহুরি ও স্বপনকে শনিবার আদালতে হাজির করা হয়নি। আগামীকাল রোববার তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রুহুল আমিন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন বাঘা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোয়েব খান। এই মামলার প্রধান আসামি মেয়র আক্কাছ আলীকে শনিবার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে এই হত্যা মামলায় আগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করায় মামলার নথি সেখানে রয়েছে। আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে নথি সংশ্লিষ্ট আদালতে ফেরত এলে তখন মেয়র আক্কাছ আলীর রিমান্ড শুনানি হবে।
জানা যায়,গত ২২ জুন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বাঘা উপজেলা আওয়ামীলীগ। এ কর্মসুচিতে অংশ নিয়েছিলেন আশরাফুল ইসলামসহ তার অনুসারিরা। একই দিনে উপজেলা সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে, বাঘা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়েছিলেন,পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজসহ তাদের অনুসারিরা। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে সংঘর্ষে রুপ নেয়। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আশরাফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে উপজেলা চত্বরের ভেতরে নতুন একটি ভবনের সামনে ফেলে রাখা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ২৬ জুন বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাবুল।
সংঘর্ষে নেতা-কর্মীসহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,সাংবাদিক,পথচারিসহ অন্তত ৫০জন আহত হন। ঘটনার পরের দিন বাঘা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে মেয়র আক্কাছকে প্রধান করে ৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০/৩০০সহ জনকে আসামি করে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করেন। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বাবুল হত্যা মামলায়,দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে বাবুলের পরিবারসহ রাজনৈতিক সহপাঠীরা।
এদিকে গত ২২ জুন, ঘটনার ৫দিন পর আক্কাছের অনুসারী আবুল কালাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে রাজশাহীর আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশক্রমে মামলাটি এজাহার হিসেবে গন্য করা হয়।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, বাবুল হত্যা মামলায় প্রধান আসামি আক্কাছ আলীসহ এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সুত্রে জানা যায়,ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আ’লীগের তৃণমূল নেতা আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে অতীতেও পুলিশে বহু অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান,কর্মচারিকে মারপিট,সাংসদকে গালি-গালাজ,ধর্ষণ চেষ্টা,বিবস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় জড়িয়েছে তাঁর নাম। এবার স্থানীয় আ’লীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোলের আবহে সেই সব পুরনো মামলার প্রসঙ্গই উঠে আসতে শুরু করেছে। তবে আগের দায়ের করা রাজনৈতিক অধিকাংশ মামলায় তার রাজনৈতিক সহপাঠীদের নামও রয়েছে অভিযোগে। #