মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হাইওয়ে পুলিশের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে আসছি ঝিনাইদহ সন্ত্রাস-কবলিত একটি এলাকা। ওখানে সত্যিকার অর্থে কী হয়েছে- সেটা আমাদের জানতে হবে। আমরা তদন্ত করছি, তদন্তের পর আপনাদের সবকিছু জানাব।’
আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে ডরিন সন্দেহজনকদের নাম বলেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন তদন্ত চলে, তখন আমাদের মন্ত্রী, আইজিপি কিংবা তদন্ত কর্মকর্তাদের পক্ষে তদন্ত না করে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষ হলে এগুলো নিয়ে কথা বলব।
গত ২২ মে ভারতে কলকাতার নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর কক্ষে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
হাইওয়ে পুলিশের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল কাজটি হলো সড়ককে নিরাপদ রাখা। মানুষের শরীরে যদি রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে মানুষ বিকল হয়ে পড়বে। তেমনই সড়কে যদি পরিবহন ঠিকভাবে চলে তাহলেই ব্যবসা-বাণিজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকবে। নৌ পথে নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হয়েছে নৌ পুলিশ, হাইওয়ে নিরাপদ রাখতে হাইওয়ে পুলিশ তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমি মনে করি, সবাই যদি আইন মেনে চলে, তবে কাউকে আর জরিমানা দিতে হবে না।
অনুষ্ঠানে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল¬াহ আল-মামুন সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাইওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) নূর মোহাম্মদ মজুমদার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রমের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রর্দশন করা হয়। পরে কেক কেটে হাইওয়ে পুলিশের ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ হবে জনগণের প্রথম ভরসাস্থল- এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা ও মাদক চোরাচালান বন্ধে ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে যাচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের সকল সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশ যেন জনগণের কাছে সমাদৃত ও মহাসড়কে চলাচলরত জনগণের নিরাপত্তা ও ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়, ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সেই কামনা করছি।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে হাইওয়েতে যানবাহন চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন। কেবল হাইওয়ে পুলিশের একার পক্ষে মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব না। তাই সকলের যথাযথভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিত।
সভাপতির বক্তৃতায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, হাইওয়ে পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় মহাসড়কে ডাকাতি এখন অনেক কমে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইওয়ে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করেছেন, প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস ও ইকুইপমেন্ট দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন- যার ফলে হাইওয়ে পুলিশের উলে¬খযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের যে ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয়েছে তাতে শীঘ্রই বাংলাদেশ পুলিশ একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছে। আমি আশা করছি দুই মাসের মধ্যে একটি হেলিকপ্টার আসবে। ভবিষ্যতে আরও হেলিকপ্টার বাহিনীতে যোগ হবে। এর ফলে নৌপথ, সড়ক পথ ও আকাশ পথে বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করার সক্ষমতা অর্জন করবে।
তিনি বলেন, এক সময় সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গি দমনে সফল হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
আইজিপি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা বডি-ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করছেন। আমাদের সদস্যরা কীভাবে কাজ করছেন- তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মহাসড়কে যানজটের অবস্থা জানতে আমরা ড্রোন ব্যবহার করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়েনে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ঈদের সময় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে পুলিশ যেন কোন গাড়ি না থামায়, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ ও সড়ক পরিবহন সংগঠনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।#বাসস