তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান এবং একে প্রভাবমুক্ত রাখাই আমার লক্ষ্য। সেখান থেকে যারাই জিতে আসে আসবে। সেটা হলো বাস্তবতা। মানুষ যাকে চাইবে সে-ই জয়ী হয়ে আসবে। যেমন আওয়ামী লীগকে চেয়েছে (ক্ষমতায়) আওয়ামী লীগ চলে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবণে সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
তিনি গত ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে থাইল্যান্ড সফর করেন। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক এই সফরে তিনি ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০ তম অধিবেশনেও যোগ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা হচ্ছে এই প্রক্রিয়াটাকে আরো গণমুখি এবং স্বচ্ছ করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রথম আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। আগে কখনও এটা করা হয়নি।
অতীতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আর্থিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার এটাকে সেখান থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত করে দিয়েছে। আলাদা বাজেট দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিত করেছি যে, দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
সরকার প্রধান বলেন, এখন কোন কোন দল থেকে মানুষকে ভোটে না যেতে বলা হচ্ছে। প্রশ্নটা হচ্ছে মানুষ কেন ভোটে যাবেনা? এটাতো তার অধিকার। তার এলাকায় সে যাকে চায় তাকে সে ভোট দেবে। তাদের এই ভোটের অধিকারে হস্তক্ষেপ কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনী ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন সেই ’৭৫ সালের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন, ‘৭৭ সালের ‘হ্যাঁ-না’ ভোট থেকে নিয়ে যতগুলো নির্বাচন প্রত্যেকটা নির্বাচনকে নিয়ে যদি তুলনা করা হয় তাহলে দেখবেন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যেকটি নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার নির্বাচনই হয়েছে। যেটা আমাদের লক্ষ্য ছিল । কারণ, এদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছি।
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জন করে কেন? কারণ তাদের নির্বাচন করার মত সক্ষমতাই নাই।
তিনি উদাহারণ দেন-: যেমন ধরুন সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচন করতে হলে জনগণকে তো দেখাতে হবে আপনাদের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন বা নেতা কে হবেন? একজন নেতাকে তো দেখাতে হবে। আপনাদের কাছে যদি এখন উপযুক্ত নেতা না থাকে তখন তো আপনাকে একটা ছুতা খুঁজতে হয়। হ্যাঁ নির্বাচন করলাম না, বাস্তবতা সেটাই। আমাদের দেশে ওটাই এখন হচ্ছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বা পলাতক আসামীকে যদি জনগণের সামনে দেখান তাহলে পাবলিকতো সেটা মেনে নেবেনা।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করতে গেলে তো ঝুঁকি নিতে হয়। এ সময় ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর তাঁকে দেশে আসতে না দেওয়ার এবং শেখ রেহানার পাসপোর্টটি পর্যন্ত নবায়ন না করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যেখানে তাঁর বাবার খুনিরা পুরস্কার প্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন এবং সাজাপ্রাপ্তও ছিলো তাদের ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ প্রদান করা হয়, তারাই ক্ষমতায়। তারাই মন্ত্রী-উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘ওই অবস্থাতেই তো আমি দেশে ফিরে এসেছি, জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বারবার আঘাত এসেছে কিন্তু আমি বেঁচে গেছি। বেঁচেও গেছি এবং বারবার নির্বাচনেও জিতে ক্ষমতায় এসেছি এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই আজকে দেশের উন্নতি হয়েছে। বিশে^র বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার বা কথা বলার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ।# বাসস