এসএন ডেস্ক : ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিৎস্কি আজ বলেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা যেকোনো সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাশিয়া ঢাকার পাশে থাকবে।
তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে (জেপিসি) এক দল সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘আমরা এখানে (বাংলাদেশ) যে কোনো বেআইনি কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। আমরা এখানে আমেরিকা বা পশ্চিমা দেশগুলোর যে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে থাকব।
মান্তিৎস্কি বলেন, তার দেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কোনো পশ্চিমা দেশ কর্তৃক একতরফাভাবে আরোপিত কোনো নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি দেয় না।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা কোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে মস্কোর অবস্থান কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।
বাংলা ট্রিবিউনের কূটনৈতিক প্রতিবেদক শেখ শাহরিয়ার জামানের সঞ্চালনায় স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম “টকস উইথ অ্যাম্বাসেডর” শিরোনামের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেপিসির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম।
আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই’।
তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত মাসে বলেছিলেন যে, মস্কো বেশ কয়েক বার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলেছে।
মান্তিৎস্কি বলেন, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামকে সরাসরি সমর্থন করেছিল এবং বর্তমান রাশিয়া অর্থপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরের বৈশ্বিক খ্যাতি সত্ত্বেও রাশিয়ার বাজারে এর প্রবেশাধিকার কম ছিল কিন্তু অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রাশিয়া ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাশিয়ার ব্যবসায়িক মহল ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশসহ নতুন সরবরাহকারীদের সন্ধান করছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ তার প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে এবং রাষ্ট্রদূত আশা করেন যে মেগা প্রকল্পটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
মস্কো দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি সরবরাহ, প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ এবং পারমাণবিক বর্জ্য পরিচালনায় অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক প্রকল্পটির পুরো মেয়াদ জুড়ে আমাদের বাংলাদেশী অংশীদারদের সহায়তা করব।’
তিনি বলেন, রাশিয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি সম্পূর্ণ পারমাণবিক সেক্টর, একটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু শিল্প তৈরি করা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২২ সালে রাশিয়ান জেএসসি ‘গ্লভকোসমস’ এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড বঙ্গবন্ধু-২ পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট সিস্টেম তৈরী ও উৎক্ষেপণসহ বাংলাদেশে রাশিয়ান মহাকাশ শিল্প পণ্য ও পরিষেবার প্রচারে সহযোগিতার জন্য একটি স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের পরে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং এমনকি কোভিড-১৯ মহামারীও এতে বাধা হয়নি। ফলে ২০২১ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ ২৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছে।
তিনি বলেন, কিন্তু ২০২২ সালে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করে, যার ফলে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য লেনদেন ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্রাস পায়।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, রাশিয়া-বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ আবার ২০২১ সালের সূচকের কাছাকাছি পৌঁছবে।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া বাংলাদেশে গম ও সার রপ্তানি বাড়িয়েছে। রাশিয়ান কোম্পানিগুলো জিটুজি ভিত্তিতে ১ মিলিয়ন টন শস্যের পাশাপাশি প্রতি বছর ৫০০,০০০ টন পটাসিয়াম ক্লোরাইড সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, মস্কো বিশ্বাস করে যে, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হওয়া উচিত নয়। বরং আসিয়ান, আইওআরএ, সার্ক এবং বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক কাঠামোর কাঠামোর আওতায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার অঞ্চল হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, কিন্তু রাশিয়া ‘দুর্ভাগ্যবশত’ সম্প্রতি অঞ্চল-বহির্ভূত গোষ্ঠিকে তাদের ‘নিজস্ব সংকীর্ণ স্বার্থপর উদ্দেশ্য’ পূরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান বিন্যাসকে পুনর্বিন্যস্ত করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা করতে দেখছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের’ ধারণাটির ঐক্য গড়ার পরিবর্তে ধ্বংসাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মান্তিৎস্কি অভিযোগ করেন যে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আসল লক্ষ্য হলো এ অঞ্চলের দেশগুলোকে ‘কোয়াড’ ও এইউকেইউএস-এর মতো ‘স্বাথান্বেষী গোষ্ঠী’তে বিভক্ত করা এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের আঞ্চলিক ব্যবস্থার বহুপক্ষীয় নীতিগুলোকে দুর্বল করে দেওয়া যাতে ওয়াশিংটনের নিজস্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।# সূত্র: বাসস