সবুজনগর ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ খাতের জন্য আরেক মাইলফলক এবং এটি যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার বাসিন্দাদের এবং সারাদেশের জনগণকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন এবং এটি রাজধানী ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, এটি (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) যোগাযোগ খাতের জন্য নতুন মাইলফলক। আমি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করেছি। এর অবশিষ্ট অংশের কাজ শিগগিরই শেষ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় ঢাকাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে যানজট কমাতে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কুড়িল, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার ও কমলাপুরের অন্তর্ভুক্ত ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এলাকাগুলো যানজট নিরসনে ব্যাপক অগ্রগতির সাক্ষী হবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধনকালে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
পরে দেশ ও জনগণের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান। শেখ হাসিনা এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে এক্সপ্রেসওয়ের নামফলক উন্মোচন করেন, পরে মোনাজাত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এক্সপ্রেসওয়ে টোল প্লাজায় টোল পরিশোধের পর গাড়ি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি অতিক্রম করেন।
শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে কাওলা ও পুরাতন বাণিজ্য মেলা প্রান্তে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধন শেষে কাওলা প্রান্তে রঙিন বেলুন উড়িয়ে দেওয়া হয়।
আগামীকাল বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বোর্ডিংয়ের জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীতে দু’টি র্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘন্টায় ৬০ কিমি।
থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। মোটরবাইক এখনই চলতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশের অবকাঠামোগত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল হতে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কসহ মোট ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ১০ হাজার ৮১০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। ১৯ হাজার ৮৯৯ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুত ও সার্ফেসিং এবং বিভিন্ন মহাসড়কে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৬ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় সড়ক-মহাসড়ক ছিল ১৫ হাজার ১৫১ কিলোমিটার, বর্তমানে তা ১ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে একই দিনে একযোগে ‘শত সড়ক’ এবং ‘শত সেত’ু উদ্বোধনের দৃষ্টান্তও তাঁর সরকার স্থাপন করেছে বলে উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমবার সরকারে আসার পরেই আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নে নজর দিয়েছিলাম। বর্তমানে ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করে ওয়াদা রক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায় না। মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক উদ্বোধন করলাম। এগুলো সবই জনগণের স্বার্থে।
মূলত সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিযে যাচ্ছে এবং দারিদ্রের হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা বা নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় সাময়িক সমস্যায় পড়েছে দেশের অর্থনীতি। নাহলে তাঁর সরকার দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো।
এজন্য আমি বলেছি, দেশে কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। নিজের ফসল নিজে ফলাবো। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করে খাবো। কারও কাছে হাত পাতবো না। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না,’ বলেন তিনি।
গত ১৪ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। সেই অন্ধকার আর নেই। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যাবো আমরাই।
শুধু বর্তমান দেশের সাধারণ জনগণের ভবিষ্যত যাতে আলোকজ্জ্বল হয় সেজন্যই তাঁর সরকার ন্যাশনাল পেনশন স্কিম চালু করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এটা তাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল এবং তারা তা পূরণ করতে পেরেছেন। আজকে যে এত উন্নয়ন তার একটাই কারণ, ২০০৯ সাল থেকে সরকারে এসে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করে তার সরকার দেশে স্থিতিশিলতা বজায় রাখতে পেরেছে।
তিনি বলেন, যাদের জন্মই হয়েছে অগণতান্ত্রিক ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে, উচ্চ আদালত যাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে তাদের হাতে গড়া দল কি গণতন্ত্র দেবে? তারাতো গণতন্ত্র দিতে জানে না। তারপরেও তারা আন্দোলনের নামে অনেক সময় অনেক কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জনগণকে আশ^স্ত করে বলেন, জানি, মাঝে মাঝে আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে অনেকেই একটু ঘাবড়ে যান। তারপর আবার স্যাংশনও আসে-কাজেই সেক্ষেত্রে আমি একটা কথাই বলবো, এই মাটি আমাদের। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা দেশ দিয়ে গেছেন। কাজেই এই সমস্ত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বাংলাদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে।
তবে বাংলাদেশ তো ৬ ঋতুর দেশ, ৬ ঋতুর দেশে আমরা তো দেখি, কখনো বর্ষা, কখনো ঝড়, কখনো জলোচ্ছ্বাস, কখনো রৌদ্রজ্জ্বল, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস দেখে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা আন্দোলনের নামে রোজই ক্ষমতা থেকে আমাদের ফেলে দিচ্ছে, আমি আপনাদের বলতে চাই, যারা এখানে উপস্থিত সকলকে আমি বলব, কবির ভাষায়- মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে,/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।
তিনি যোগ করেন, মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি। কিন্তু তারপরইতো আবার সূর্য ওঠে। কাজেই ওই ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলে ঠেলেই এগিয়ে গেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়েই নৌকা আজকে তীরে ঠেকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এই নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে এবং এই নৌকা মার্কাই আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশও দেবে। যেখানে স্মার্ট জ্ঞান সম্পন্ন প্রযুক্তিনির্ভর জনগোষ্ঠী তৈরী করবে সরকার। যেখানে সরকার যেমন স্মার্ট হবে তেমনি অর্থনীতি এবং সমাজ ও হবে স্মার্ট। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সেভাবে গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।#