সোয়াবিন তেল নিয়ে দেশ অস্থির
-
প্রকাশের সময় :
সোমবার, ১৬ মে, ২০২২
-
২১৬
বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
# এস. জামান
তেলের ব্যবহার বিশ্বস্বীকৃত। তেল ছাড়া যে মজাদার কোন খাবারই হয়না তা সবার জানা।তেলের ব্যবহারের মধ্যে কাউকে তেল মেরে কাজ আদায় করা কোন নতুন কিছু নয়। তবে বাংলাদেশ সবচেয়ে যে সমস্যার মুখোমুখী তা হলো ভোজ্য তেল। ভোজ্য তেলের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে ।একসময় একমাত্র সরিষার তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার হতো । সে সময় অন্য কোন বিকল্প পথ ছিল না।’৭১ সালের আগে সরিষার তেল রান্ন-বান্নাসহ সকল কাজে ব্যাপক ব্যবহার হতো ।সেসময় দেশের জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি থাকলেও এখন সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ষোল কোটি। তবে বেসরকারি হিসাব মতে প্রায় আঠারো কোটি। সঙ্গত: কারণে তেলের চাহিদা প্রায় দশগুণ বেড়েছে।কিন্তু সরিষার আবাদ তো বাড়েনি বরং কমেছে অনেকাংশে।সরিষা এখন অনেকটা দুষ্প্রাপ্য। অভিযোগ রয়েছে এখন আর খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যায় না পাওয়া যায় তা ভেজালে ভরা।সরিষার আবাদ আগের চেয়ে বহুগুণে কমে গেলেও তেল সরবরাহ ও চাহিদা দু’টোই দারুনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।তবে এখন মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক এত সরিসা কোথা থেকে আসছে?
সরিসার তেলের সংকটে যাতে দেশবাসি না পড়ে তার জন্য সরকার বিদেশ থেকে সোয়াবিন ভোজ্য তেল আমদানীর সুযোগ করে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ।কয়েক দশক ধরে সোয়াবিন তেল বোতলজাত হয়ে দেশে আসে আবার খোলাভাবেও আসে। সোয়াবিন তেল আশির দশকের পর থেকে দেশে আসা শুরু হয় এবং ৯০ দশকে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।আর এখন পুরোটায় সোয়াবিনের উপর ভাসছে দেশ। যেন সোয়াবিনের বিকল্প উপায় আর নেই। বর্তমানে সোয়াবিন বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু যে পরিমাণ হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রচুর সম্ভাবনা থাকার পরও সোয়াবিন বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে ।সূর্য্মুখী, পামওয়েল ও সোয়াবিনের চাষাবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে সংকট সৃষ্টির প্রশ্ন আসতো না। চাষীদের ভূর্তুকী ও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অধিক চাষে আগ্রহী করে তুলতে পারলে তেল সংকট দূর করা সম্ভব হবে। তানা হলে সরকার যতই মনিটরিং করুক না কেন এ সংকট থেকেই যাবে।এক মাসের ব্যাবধানে তেলের মূল্য আড়াইগুণ ছাড়িয়ে গেছে। সুষ্ঠু মনিটরিং পদ্ধতি না থাকার কারণে তেল নিয়ে এত হাউকাউ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।তাহলেই তেলের সংকট কাটিয়ে উঠা অনেকাংশে সম্ভব।
রান্নাবান্নার কাজে ফ্যামিলিতে পামওয়েল ব্যবহার না হলেও বড় বড় হোটেল রেস্তোরা, বিভিন্ন রিচ ফুড তৈরিতে পামওয়েল ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।এখন পামওয়েল প্রচুর পরিমাণ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যে।পামওয়েল ও বিদেশ থেকে আমদানী করা হয় ।তবে সূর্য্মূখী ফুলের তেল যেটুকু হয় তার সবটুকু দেশের মাটিতে উৎপাদন হয়ে থাকে। এই তেল উৎকৃস্টমানের এবং দাম ও বেশি।তারপর দেশে চরম তেল সংকট, কিন্তু কেন? কারা এ সংকট সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার কঠোর মনিটরিং এর মাধ্যমে।মানুষ মরার এ বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট চিরতরে ভেঙ্গে দিয়ে সোয়াবিল তেল সহজলভ্য করে দিতে হবে সবার জন্য।বিভিন্ন সরকারি তথ্যমতে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে সরকার কঠোর হস্তে দমন করার চেস্টা করছে এবং তারই অংশ হিসেবে তল্লাশী অভিযান চালাচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণ বাতলজাত তেল উদ্ধার করছে বিভিন্ন গুদাম থেকে। হাজার হাজার বোতল গোপনে লুকিয়ে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে যা সম্পূর্ণ বেআইনী।তবে অনেকের মতে এভাবে অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের সাইজ করা যাবে বলে মনে হয় না।
এদের সঙ্গে দেশের একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেস্টা করছে। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলে শ্রীলংকার মত পরিস্থিতি সৃস্টি করারও চেস্টা করছে। এটা করতে দেয় হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।সরকার যে কোন মূল্যে প্রতিহত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে, দেশবাসিও তাই প্রত্যাশা করে তথ্যমন্ত্রী ও এরকমই বলেছেন ।অনেকে বলছেন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? কেন, সরকার। জনগণকে সাথে নিয়ে সরকার অবশ্যই সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে নাটকের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে। আকষ্মিক ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে এসংকট খুব শিগগীরই দূর করতে সচেস্ট হবে প্রশাসনের বিশেষ চৌকস টিম।যারা এ অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে কঠোর শাস্তির মাধ্যমে।যেন ভবিষ্যতে এরকম কর্মকান্ড করার সাহস আর সুযোগ কোনোটাই না পায়।
যারা সুযোগ বুঝে কখনও পিয়াজের দাম, কখনও চিনির দাম, কখনও সোয়াবিন তেলের দাম, কখনও পেট্রোল-ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম, কখনও এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা করার চেস্টা করছে এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তারা যেন কোনভাবেই ছাড় না পায়। এজন্য সরকারকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।এখনই মজুদদারের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে হবে।যারাই এঘটনার সাথে জড়িত তারা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়ে গোটা দেশকে সংকটের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করে।এজন্য গোয়েন্দা নজরদারী ও কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। দেশে আইন আছে, বিচার রয়েছে তারপরও তারা এধরণের ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পায় কি করে। প্রয়োজনে এদের জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। এদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়া উচিত বলে সচেতন মহল মনে করেন। সদ্য স্বাধীনপ্রাপ্ত বাংলাদেশের মানুষ ‘৭৪এর দূর্ভিক্ষের সময় এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল। কিন্তু এখন তো আর সেদিন নেই। তবে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ, অর্থলোভী ব্যক্তি এধরণের অরাজকতা ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি করছে আঙ্গল ফুলে কলাগাছ হওয়ার জন্য।এদের কোন দল নেই নেই নীতি। এরা যে দলেরই হোক না কেন এদেরকে এতটুকু ছাড় দেয়া কোনভাবেই ঠিক হবে না, এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, গোটা সমাজের শত্রু ।
এ মহাসংকট পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে মানুষ হাপিয়ে উঠেছে ।বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে শান্তিতে ঘুমোতে চায়।আর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং সুগঠিত প্রশাসনের মাধ্যম এধরণের ঘটনা সহজেই দূর করে সোয়াবিন তেলের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে একটি সুনির্দিস্ট নীতিমালা প্রণয়ন করবে বলে দেশবাসি আশা করছে।একটি স্বাধীন দেশে নূন্যতম চাহিদা পূরণ করতে না পারলে আর তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু থাকে না।এজন্য সাধারণ মানুষের নায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে কোন মূল্যে চাল, ডাল, তেল এর দাম স্বাভাবিক রাখতে যা যা করার দরকার তা আগে থেকে নিশ্চিত করতে হবে। কোন সংকটকে বড় আকারে বাসা বাঁধতে দেয়া ঠিক হবে না।
এব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার ও সচেতন থাকতে হবে। এরকম পরিস্থির আলামত পেলেই ‘দেখি কিনা করে’ ভেবে বসে না থেকে প্রশাসনকে অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।যাতে যে বীজ থেকে চারাগাছ গজিয়ে উর্দ্ধাকাশে উড়ার কথা ভাবছে তার শিকড় গজানোর আগেই উপড়ে ফেলতে হবে।যারা মুখের ভাত কেড়ে নিতে চাই তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে হবেই।এধরণের ন্যাক্কারজনক এবং অনাকাংখিত ঘটনা যেন দেশে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য স্থিতি থাক এটেই আমার আপনার সবার কাম্য।#
এডিট: আরজা
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ