মোঃ মনজুরুল হাসান মিলন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: লোকমুখে শুনা যায় আব্দুল গফুর মাস্টারের বাবা মৃত আফির উদ্দিন (গভমেন্ট ) ছিলেন একজন জমিদার শ্রেনীর লোক। ভালবেসে জাহানারা বেগমকে বিবাহের পর বাবা আফির উদ্দিন ছেলের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে জমি বিক্রি শুরু করে। একদিকে ঘরত্যাগী আ: গফুর নিরুপায় হয়ে তার নামীয় সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এভাবে চলতে থাকে । দু’বোনের বিয়ে হয়ে যায় এরমধ্যে। শেষের পথে বাবা এবং মায়ের মৃত্যু হয়। বাসায় ফিরে এসে আ: গফুর দেখে ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
ইতিমধ্যেই মেধা ও প্রজ্ঞার জোরে আ: গফুর তৎকালীল উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। এরপর চলতে থাকে সংসার । শুরু হয় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়ার কাজ। চাকরীর জন্য চেষ্টা করেও ভাগ্যে মিলেনি সোনার হরিণ। তবে কিছুদিন খন্ডকালীন শিক্ষক পদে কাজ করেছিলেন মালিগছ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এভাবে চলতে চলতে সংসারে অভাব অনটন হানা দেয় ।
অভাবের তাড়নায় স্ত্রী জাহানারা বেগম স্বামী ছেড়ে চলে যায় বাপের বাড়িতে। বড় ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র বাড়ি বাঁধে। সেই থেকে একা হয়ে যায় আ: গফুর মাস্টার । জীবনের ৫০ টি বছর শিক্ষকতায় এবং ৭৫ বছরের জীবনে আজ তিনি একা। কোন রকমে একটি টিনশেটের ঘরে বসবাস করছেন পৈত্রিক ভিটায়।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের ঝালিংগীগছ গ্রামে সকাল সকাল স্যারের বাসায় গিয়ে দেখি স্যার পানি নিয়ে মুখ ধুচ্ছেন। সারা ঘর এলোমেলো । থাকার জন্য নেই চৌকি। বাশের খুটি আর বেড়া দিয়ে বানানো বিছানায় ঘুমান । দু’ একটা রান্নার জিনিসপত্র। এলোমেলা পোশাক – যেন কতদিন পরিষ্কার করা হয়না। পুরোনো কিছু পাত্রে পানি রাখা আছে । এই বাড়িতে কোন টিউবওয়েল নেই। নেই কোন টয়লেটের ব্যবস্থাও । একরুমের একটি টিনের ঘর আর একটা রান্না ঘরে আ: গফুর দিনের পর দিন পার করছে নিদারুন কষ্টে। একটি অপরিস্কার পাতিলে বানানো চা পুরোনো প্লাস্টিকের মগে ঢেলে , একবাড়ি শুকনো মুড়ি নিয়ে বসে পড়ে বারান্দায় । শুকনো মুড়ি চাবাতে চাবাতে আ: গফুর বলেন আর কষ্ট সহ্য হয় না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে মাসে ১২ থেকে ১৫ শত টাকা রোজগার হয়। সব টাকা চলে যায় ঔষুধ কিনতে, আমি হার্টের রোগী, একদিন ঔষুধ না খেলে বুকের ব্যাথায় থাকতে পাড়িনা। খুব কষ্ট হয়- মনে হয় এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে গেল। বাড়ি বাড়ি গেয়ে বাচ্চাদের পড়িয়ে – যা খেতে দেয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকি ।
এভাবেই চলে যায় আর দিন রাত ২৪ ঘন্টা। ৭৫ বছর বয়সেও পননি কোন সরকারি অনুদান। বয়ষ্কভাতার কার্ড নাগরিকের মৌলিক অধিকার হয়েও এখন পাননি স্বীকৃতি। ৫০ বছরের শিক্ষকতার জীবনের হাজার শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন কিন্তু কেউ খবর নেয়নি। মনকষ্টে কাউকে কিছু না বলে নিরবে বেঁচে আছে নির্মম পরিহাসে।#