দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ১১৪ রানের জবাবে ১৭ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৯৪ রান তুলে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলো বাংলাদেশ। কারন শেষ ৩ ওভারে ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ২০ রান দরকার ছিলো টাইগারদের। কিন্তু শেষ ৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষের রোমাঞ্চে জয়ের সুর্বন সুযোগ হাতছাড়া করলো টাইগাররা।
শ্রীলংকার বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ^কাপ শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। ২ ম্যাচ শেষে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে আছে টাইগাররা। নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে সুপার এইট নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা বাংলাদেশের তানজিম হাসানের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে চার মারেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তবে ওভারের শেষ বলে আরেক ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সকে খালি হাতে বিদায় দেন তানজিম।
নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন তানজিম। ১১ বলে ১৮ রান করা ডি কককে বোল্ড করেন তানজিম। ইনিংসে চতুর্থ ওভারে উইকেট শিকারের তালিকায় নাম তোলেন তাসকিন । দারুন এক ডেলিভারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আইডেন মার্করামকে (৪) বোল্ড করেন তাসকিন।
নিজের প্রথম দুই ওভারে উইকেট নেওয়া তানজিম তার ঝলক অব্যাহত রাখেন। তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে মিডল অর্ডার ব্যাটার ট্রিস্টান স্টাবসকে খালি হাতে সাজঘরে ফেরত পাঠান তানজিম। পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই নিয়ে চতুর্থবার বিশ^কাপে পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট শিকার করলো বাংলাদেশ
এ অবস্থায় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হেনরিচ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। উইকেট ধরে খেলে ১০ ওভার শেষে দলের রান ৫৭তে নেন তারা। ততক্ষণে উইকেটে সেট হয়ে যান ক্লাসেন ও মিলার।
১১তম ওভারে প্রথমবারের মত বোলিং আক্রমনে আসেন স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ডেলিভারিতে মিলারকে বিদায়ের পথ তৈরি করেছিলেন রিয়াদ। কিন্ত উইকেটের পেছনে মিলারের ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস।
জীবন পেয়ে ক্লাসেনকে নিয়ে ১৭তম ওভারে দলের রান ১শ পার করেন মিলার। ডেথ ওভারে মারমুখী হবার পরিকল্পনায় ছিলেন ক্লাসেন ও মিলার। কিন্তু ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ক্লাসেনের উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৪ বলে দলের সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন ক্লাসেন। পরের ওভারে মিলারকে বোল্ড করেন রিশাদ। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৮ বলে ২৯ রান করেন মিলার। পঞ্চম উইকেটে ৭৯ বলে ৭৯ রান যোগ করেন ক্লাসেন- মিলার।
দলীয় ১০৬ রানের মধ্যে ক্লাসেন ও মিলার ফেরার পর ইনিংসের বাকী ১০ বলে ৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রানের সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা।
৪ ওভার করে বল করে তানজিম ১৮ রানে ৩টি ও তাসকিন ১৯ রানে ২ উইকেট নেন। ৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন তানজিম। আগের ম্যাচের হিরো রিশাদ ৩২ রানে নেন ১ উইকেট। এ ছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান কোন উইকেট না পেলেও ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৮ রান দিয়েছেন।
১১৪ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন ওপেনার তানজিদ হাসান। পেসার কাগিসো রাবাদার করা ঐ ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৯ বলে ৯ রান করা তানজিদ।
দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তিন নম্বরে নামা লিটন দাস। দু’জনের ২৫ বলে ২০ রানের জুটিতে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ২৯ রান পায় বাংলাদেশ।
কিন্তু সপ্তম ওভারের প্রথম বোলিং আক্রমনে এসে প্রথম ডেলিভারিতেই লিটনকে বিদায় করেন স্পিনার কেশব মহারাজ। কভারে মিলারকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৯ রান ক্েরন লিটন।
লিটন ফেরার পর ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। পেসার এনরিচ নর্টির বলে পুল করতে গিয়ে ৩ রানে মিড উইকেটে মার্করামকে ক্যাচ দেন তিনি।
সাকিবের মত নর্টির শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন শান্তও। ১টি ছক্কায় ২৩ বলে ১৪ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। এতে দশম ওভারে ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহ। ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে ব্যক্তিগত ৬ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মাহমুদুল্লাহ।
জীবন পেয়ে হৃদয়কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান মাহমুদুল্লাহ। দেখেশুনে খেলে ৪৫ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন দু’জনে। ১৮তম ওভারে রাবাদার বলে আম্পায়ারস কলে লেগ বিফোর আউট হন ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৭ রান করা হৃদয়।
হৃদয় যখন ফিরেন তখন জিততে ১৭ বলে ২০ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের। ১৮তম ওভারে ২ ও ১৯তম ওভারে ৭ রান আসে। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১১ রানের সমীকরণ পায় বাংলাদেশ।
মহারাজের করা শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে চার রান আসে। তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৮ রানে আউট হন জাকের। চতুর্থ বলে ১ রান এলে পরের ডেলিভারিতে বাউন্ডারি সীমানায় লাফ দিয়ে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচ নেন মার্করাম। শেষ হয় মাহমুদুল্লাহর ২৭ বলে ২০ রানের ইনিংস, শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন।
শেষ বলে ৬ রানের প্রয়োজনে তাসকিন ১ রানের বেশি নিতে না পারলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৯ রান করে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার মহারাজ ৩টি, রাবাদা-নর্টি ২টি করে উইকেট নেন।
৪৪ বলে ৪৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে ম্যাচ সেনরা হন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাসেন।
আগামী ১৩ জুন কিংসটাউনে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস :
হেনড্রিক্স এলবিডব্লু ব তানজিম ০
ডি কক ব তানজিম ১৮
মার্করাম ব তাসকিন ৪
স্টাবস ক সাকিব ব তানজিম ০
ক্লাসেন ব তাসকিন ৪৬
মিলার ব রিশাদ ২৯
জানসেন অপরাজিত ৫
মহারাজ অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-৪) ৭
মোট (২০ ওভার) ১১৩/৬
উইকেট পতন : ১-১১ (হেনড্রিক্স), ২-১৯ (ডি কক), ৩-২৩ (মার্করাম), ৪-২৩ (স্টাবস), ৫-১০২ (ক্লাসেন), ৬-১০৬ (মিলার)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তানজিম : ৪-০-১৮-৩ (ও-২),
তাসকিন : ৪-০-১৯-২,
মুস্তাফিজুর : ৪-০-১৮-০ (ও-১),
রিশাদ : ৪-০-৩২-১,
সাকিব : ১-০-৬-০,
মাহমুদুল্লাহ : ৩-০-১৭-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তানজিদ ক ডি কক ব রাবাদা ৯
নাজমুল ক মার্করাম ব নর্টি ১৪
লিটন ক মিলার ব মহারাজ ৯
সাকিব ক মার্করাম ব নর্টি ৩
হৃদয় এলবিডব্লু ব রাবাদা ৩৭
মাহমুদুল্লাহ ক মার্করাম ব মহারাজ ২০
জাকের ক মার্করাম ব মহারাজ ৮
রিশাদ অপরাজিত ০
তাসকিন অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-১, ও-৫) ৮
মোট (২০ ওভার) ১০৯/৭
উইকেট পতন: ১-৯ (তানজিদ), ২-২৯ (লিটন), ৩-৩৭ (সাকিব), ৪-৫০ (নাজমুল), ৫-৯৪ (হৃদয়), ৬-১০৭ (জাকের), ৭-১০৮ (মাহমুদুল্লাহ)।
দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিং :
জানসেন : ৪-০-১৭-০ (ও-২),
রাবাদা : ৪-০-১৯-২,
বার্টম্যান : ৪-০-২৭-০,
মহারাজ : ৪-০-২৭-৩ (ও-২),
নর্টি : ৪-০-১৭-২ (ও-২, নো-১)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ রানে জয়ী।# বাসস