# মোহা:তসলিম উদ্দিন/ মোহা: সফিকুল ইসলাম, শিবগঞ্জ, চাঁ,নবাবগঞ্জ থকে………………
ডালি বুনা আমাদের পল্লী এলাকায় এশটি ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প। শেষ বয়সে আমি ডালি বুনার মাধ্যমে একদিকে পুরাতন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখছি , অন্যদিকে স্বল্প পরিসরে হলেও সংসার চালাচ্ছি। যা ভিক্ষা করার চেয়ে অনেক ভাল। তাই শেষ বয়সে এসেও আমি নিজ হাতে ডালি বুনে বাজারে বিক্রী করে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়েই বুড়া-বুড়ির সংসার চলছে।
সরজমিনে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রানীনগর ঘুনটোলা গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে ৯০বছর বয়সী তোবজুল হকের সাথে তার নিজ বাড়ির সামনে ডালি বুনার সময় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়।
তিনি আরো জানান, প্রায় ২০ বছর থেকে বাঁশ কিনে ডালি বুনার কাজ করি। আগে দিনে ১৫০/২০০ টাকা আয় হতো। তখন দিনে বড় ডালি একটা ও ছোট ডালি দুটো বানাতে পারতাম। এখন টাকার অভাবে বাঁশ কিনতে পারি না। কোন রকমে এক‘শ টাকা দিয়ে একটা বাঁশ কিনে দুই দিনে একটি বড় ডালি অথবা ছোট ডালি দুইটা বুনাতে পারি। তাতে পুঁজি বাদে দিনে ৫০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ডালি বুনার আগে ঘরামুর কাজ করতাম। তখন ভালই আয় হতো। কিন্তু এখন বয়সের কারণে আর পারি না। তাই ডালি বুনার কাজটাই করি।
তিনি আরো বলেন প্রায় চার বছর আগে পত্রিকায় আমার খবর ছাপানো হয়েছিল। তখন মন্টু ডাক্তারের ছেলে এমপি শিমুল ডাক্তারের একজন লোক এসে আমার ছবি, আইডি কার্ডের ফটো কপি নিয়ে গিয়িেছল এবং বলেছিল বাড়ি করে দিবো। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন খবর হয়নি। বর্তমানে একটি ভাঙ্গা টিনের ঘরে বাস করি। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ,তাই বৃষ্টির সময় অনেক সময় অন্যের ঘরে চলে যাই। কোন মেম্বার চেয়ারম্যান কোন দিন খোঁজ খবর নেয়নি।
দু’জনের সংসারে ভাঙ্গা ঘরে থাকি । জমিজমা একেবারেই সামান্য। মাত্র পৌনে পাঁচ কাঠা অর্থাৎ প্রায় সাত শতক। ছেলে পাঁচ ও মেয়ে তিন জন। ছেলে মেয়ে সবার বিয়ে হয়েছে। সবাই নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমার আয় দিয়ে কোন রকমে সংসার চালায় এবং স্বামী-স্ত্রী দু’জনের বয়স্কভাতার টাকা দিয়ে কাপড়চোপড় ও ঔষধ কিনি। আমার শেষ চাওয়া পাওয়া একটি ঘর ও সামান্য কিছু টাকা। ঘরে বাস করবো ও টাকা বাঁশ কিনে ডালি বুনাবো।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর আগে স্থানীয় একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খ’ শ্রেণীদের মধ্যে তালিকাভুক্ত আছে। ক’ শ্রেণীর কাজ শেষ হলে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাড়ি করে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, তিনি একটি ভাল কাজ করছেন। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করে আরো উৎসাহিত করবো।
এ ব্যপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, শেষ বয়সে এসেও তিনি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন, যা খুব কম মানুষের দ্বারা সম্ভব। তাকে উৎসাহ দিতে তার পুঁজির ব্যাপারে আমাার পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ৯০ বছর বয়সে তোবজুল হক যে ডালি বুনে সংসার চালাচ্ছে যা যুব সমাজকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহমূলক কাজ। শুধু ডালি বুনা নয় শিবগঞ্জে মৃৎশিল্প,নকশীকাঁথা, আমস্বত্ত¡, কুমড়ার বড়ি, প্রভৃতি কুটির শিল্প এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। আমি জন নেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি আকর্ষন করছি যে তিনি যেন অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন উন্নয়নের জোয়ার চলছে আমাদের শিবগঞ্জেও যেন কুটির শিল্পের উন্নয়নের জোয়ার ঘটান। তিনি বৃদ্ধ তোবজুল হকের জন্য সবধরনের সহযোগিতার আশ^াস দেন।#