স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী,পাবনা: পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে কথিত ‘অডিট আপত্তিকে পুঁজি করে রেল মন্ত্রনালয় কর্তৃক ডিজিকে অপসারণ করার সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া শুরু । রেইলনিউজ টয়েন্টিফোর ডটকম নামক রেলভবনে অস্তিস্বহীন একটি অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করায় রেলমন্ত্রনালয়সহ বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অনলাইন পোর্টালে প্রচারিত সংবাদকে অপপ্রচার ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
রেলমন্ত্রনালয়সহ বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিস,রাজশাহীস্থ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তর,ঈশ্বরদীর বিভিন্ন অফিসসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দেওয়া তথ্য ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি, মনিরুজ্জামান মনি কর্তৃক গণমাধ্যমে দেওয়া প্রতিবাদ লিপি স‚ত্রে এসবতথ্য জানাগেছে।
স‚ত্রমতে,বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ইতিহাসে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এক অনন্য মাইলফলক। এটি কেবল একটি রেললাইন নয় এটি একটি অর্থনৈতিক করিডোর, একটি উন্নয়নের ধারা এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন। প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্প দেশের অন্যতম বৃহৎ ও জটিল প্রকৌশল প্রকল্প। এর সফল বাস্তবায়ন দেশবাসীকে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু যে সময়টিতে প্রকল্পটি তার সাফল্যের শিখরে, তখনই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এবং একটি বিশেষ অংশ সংবাদমাধ্যমের অপব্যবহার করে প্রকল্পের ব্যয়কে কেন্দ্র করে “১৩ হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তি” শিরোনামে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এই অপপ্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তথ্য বিকৃত এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এক বিপজ্জনক নজির।
প্রকৌশল বাস্তবতা ও অডিট আপত্তির বিরুদ্ধে যুক্তিপ‚র্ণ প্রতিবাদ করে বলা হয় আন্তর্জাতিকমানের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় স্বাভাবিক। এই প্রকল্পে ভূমিকম্প সহনশীল রেললাইন, হাইড্রোলজিক্যাল ও টেকনিক্যাল পরীক্ষাসম‚হ, নদীশাসন, টানেলিং, একাধিক স্টেশন নির্মাণ, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং জটিল কারিগরি সংযোজন রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতেও এমন প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় খুব স্বাভাবিক, বিশেষত যেখানে প্রকল্পটি নদী ও সমতলভ‚মির মাঝামাঝি ভ‚প্রকৃতিতে অবস্থিত। ২. অতিরিক্ত জমি (এজিএল) প্রকল্প রক্ষায় অপরিহার্য । অতিরিক্ত গ্র্যান্ড অফ ল্যান্ড (এজিএল) প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ও স¤প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ। ভবিষ্যতে রেললাইন স¤প্রসারণ, নিরাপত্তা বাফার, সাইডিং রেল, সিগন্যালিং ব্যবস্থা, সাবস্টেশন ইত্যাদির জন্য জমি প্রয়োজন হয়। এই জমি অধিগ্রহণকে “অতিরিক্ত ব্যয়” হিসেবে দেখানো প্রকৌশল অজ্ঞতার পরিচায়ক। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যর্থতা নয় বরং সাফল্যের প্রতীক ।
বিশ্ব যখন লকডাউনে স্থবির, বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই প্রকল্প চালু রেখেছিল। এতে ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও, কাজ বন্ধ না হওয়ার ফলে ভবিষ্যতের বড় ধরনের ক্ষতি থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। সুরক্ষা সামগ্রী, শ্রমিকের আবাসন, চিকিৎসা সহায়তা, পরিবহন ইত্যাদি খাতে ব্যয় সাফল্যের গৌরব অর্জিত হয়েছে। তথ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় আধুনিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিএমএস), রিপোর্টিং সফটওয়্যার, ক্লাউড সার্ভার, প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার সবকিছু একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রকল্পে অপরিহার্য। এসব ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় বলা মানে অজ্ঞতা অথবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সামিল। প্রোভিশনিং ব্যয় আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ ও নীতিনির্ধারিত ব্যয়েঢর অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী বড় প্রকল্পে অনিশ্চিত খরচ মোকাবিলায় ‘প্রোভিশনিং’ খাতে একটি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। এটি দুর্নীতি নয়, বরং সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ধরা হয়।বিশেষ সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে কতিপয় ব্যক্তি স¤প্রতি ঐঅনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে রেল অঙ্গনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে ।
পোষ্য সোসাইটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে,বাংলাদেশ রেলওয়ের হাজারো পোষ্য পরিবার, যারা তাদের প‚র্বপুরুষদের রক্ত-ঘামে নির্মিত এই রেলপথের উত্তরাধিকার বহন করছেন, তারা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সন্তানেরা এই উন্নয়নের সুফল ভোগ করবে, সে সম্ভাবনাকে ধ্বংসের চক্রান্তের সময় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কেবল একটি রেলপথ নয় এটি বাংলাদেশের সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস ও উন্নয়নের প্রতীক। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো মানেই দেশের প্রবৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং গণমানুষের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা। বিবৃতিতে চলমান ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে রেলওয়ের কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, শ্রমিক এবং দেশের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। একই সাথে রেলকে ধ্বংসের সকল প্রকার ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দেশের গুরুত্বপ‚র্ণ রেলবিভাগের এই রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন রক্ষার অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়।
এদিকে রেলনিউজ পোর্টালে মিথ্যা বানোয়াট নিউজ প্রচার করে রেল মন্ত্রনালয়ের ভাবম‚র্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে দাবি করে রেলভবনের দায়িত্বশীল স‚ত্র বলেছে, রেল মন্ত্রনালয় থেকে ডিজির অপসারণ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি ।স‚ত্রটি আরও বলেছে, অপপ্রচারে অংশ নেওয়া নিউজ পোর্টালের কোন অস্তিত্ব নেই। কে সম্পাদনা করেন তাও রেল ভবনের জানা নেই।#