মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি: ঠুনকো অজুহাতে একজন সাংবাদিককে মারার এক সপ্তাহের ব্যবধানে রেলকর্মীরা পিটিয়ে আহত করেছন এক সেনা সদস্যকে। ১২ জানুয়ারী রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এই ঘটনা ঘটে। ট্রেনে ও প্ল্যাটফর্মে এক সেনাসদস্যকে মারপিটের অভিযোগে রেলওয়ের গার্ডসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের আটক করে সেনাবাহিনীর একটি দল। পরে তাদের রাজশাহী রেলওয়ে থানায় রাখা হয়। আটক তিনজন হলেন- ঢাকা-রাজশাহী রুটের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড আতিকুর রহমান, অ্যাটেনডেন্ট মনছেহার আলী ও মো. মনির। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তাদের রেলওয়ে থানায় রাখা হয়েছিল। তাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ,ঢাকা থেকে রাজশাহী গামী সিল্কসিটি ট্রেনে পাওয়ার কার ড্রাইভার ও টিটিই এর সাথে ট্রেনের মধ্যে বাকবাতিন্ডা হয় এবং সেটি ট্রেনের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান হয়। এর পরও বিষয়টি নুর সালাম ও কবিরকে বিষয়টি জানালে সেনা সদস্যকে মারার জন্য ট্রেন লাইটিং অফিসের ইস্তিয়াক,ইব্রাহীম,রফিক,কনক, টিটো,সুজন চপল, রাসেল,শাহীন ও ঝলক সহ ১৫/২০ জন দেশীয় অস্ত্র বাঁশ,স্লাইরেঞ্জ,পাইপ নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করে। ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশনে থামার সাথে সাথে তারা ঐ সেনা সদস্যকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।এতে সে অজ্ঞান হয়ে প্লাটফরমে পড়ে যায়। যাত্রীদের সেবার সুস্থ হয়ে তিনি সেনা ক্যাম্পে বিষয়টি জানালে রাতেই সেনাবাহিনী স্টেশন ঘিরে অপরাধীদের ধরতে অভিযানে নামে।
জানা গেছে,রাজশাহী রেল স্টেশনের ট্রেন লাইটিং অফিসের ডিউটি ইনচার্জ কবির( জেএলই) ও রেলওয়ে শ্রমিক দলের কর্মী নামধারী নুর সালাম ( অবঃ) রাজশাহী রেলস্টেশনে অধিপত্তি বিস্তারে গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট।তারা বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে টিকিট কালোবাজারি ও ট্রেনের পাওয়ার কারে টিকিট বিহীন যাত্রী পরিবহন করে আসছে। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তাকে লাঞ্ছিত করে নুর সালাম ও কবির সন্ত্রাসি গ্যাং।
উল্লখ্য যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদ চলমান আইপি চ্যানেলে পাওয়ার কারে টিকিট বিহীন যাত্রীর নিকট টাকা নেয়ার ভিডিওসহ সংবাদ প্রচার হয়। এর জের ধরে ঐদিন রাতে একজন সিনিয়র সাংবাদিককে শারীরিক লাঞ্ছিত করে তারা। এছাড়া এ ঘটনায় রেল জিআরপি থানায় অভিযোগ গ্রহন না করার জন্য থানা কর্মকর্তাকে ভয় দেখান। এর ফলে কয়েকদিন থানায় গেলেও থানা কোন জিডি বা মামলা গ্রহন করেনি।
স্টশনে কর্মরত কর্মচারীরা বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গন অভ্যুত্থানের পর থেকে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কর্মচারীদের মামলার ও বদলীর ভয়দিখিয়ে চাঁদা বাজি করে আসছে নুর সালাম ও কবির। এছাড়া,প্রকাশ্যে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির পাশাপাশি ট্রেনের পাওয়ারকার নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে তারা। তথ্যমতে প্রতিটা আন্তনগর ট্রেন টাকার বিনিময়ে টিকিট বিহীন যাত্রী বহন করে আসছে। নুর সালাম ও কবিরের কর্মকান্ডে বিব্রত খোদ রেল শ্রমিকদলের নেতা কর্মীরা।
রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘আটক তিনজনকে থানায় রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হয়তো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য, ট্রেনের বগি ও পাওয়ার কারে টিকিটবিহীন যাত্রী উঠিয়ে বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন রেলওয়ের এক শ্রেণির কর্মচারীরা। রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল আন্তঃনগর ট্রেনের পাওয়ার কারেই বিনা টিকিটের যাত্রীদের বসানোর ব্যবস্থা করা হয় বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি বিনা টিকিটের ট্রেনের যাত্রীর কাছ থেকে এক পাওয়ার কার চালকের টাকা নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। এর জের ধরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে একজন সাংবাদিককে মারধর করা হয়। এবার বিনা টিকিটের যাত্রীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হলেন সেনাসদস্য।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য পশ্চিম রেলের মহব্যবস্থাপক মামুনুল হকের সরকারি মুঠোফোনে ও পশ্চিম রেলের প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর সরকারি মুঠোফোন কল করলেও তা না ধরায় তাদের কো বক্তব্য নেয়া যায়নি।#