# আবুল কালাম আজাদ…………………………………..
কুয়াশার চাদরে মোড়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের মাটির রাস্তা ধরে ব্যস্ত পায়ে ছুটে চলছেন করিম গাছি। মাজায় তার মোটা দড়ি, হাতে বিশেষ এক ধরনের কাস্তে, ছোট্ট হাতুড়, বাটাল ও মাটির হাড়ি। শীত এলেই তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সন্ধ্যা নামলে গ্রামের প্রতিটি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য হাড়ি বাঁধেন করিম। খেজুরের গাছের বুক চিড়ে ফোটায় ফোটায় পড়া মিষ্টি রসে সেই হাড়ি ভরে ওঠে। করিম সকালে সেই রসের হাড়ি সংগ্রহ করেন। বাড়ির উঠানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে রস জাল দিয়ে তৈরি করেন খেজুরের গুড় বা পাটালি গুড়।
রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, দুর্গাপুর, পুঠিয়াসহ ৯টি উপজেলাতেই শীতের শুরুতে এভাবে রস সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় খেজুরের গুড়। খেজুরের গাছ কমে এলেও গুড়ের চাহিদা দিন দিন আরও বাড়ছে। প্রতি শীতে রাজশাহী থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গুড় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে, যা থেকে প্রান্তিক পরিবারগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। গত বছর পাটালির পাইকারি দাম ৮৫ টাকা ছিল, তবে এবার তা ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পিঠা, পুলি, পায়েশ ও মিষ্টি গ্রামবাংলার অত্যতম ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
শীত এলে এই খাবারের কদরও বেড়ে যায়। আর এই মিষ্টিযুক্ত খাবার তৈরির অন্যতম উপাদান খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড় বা পাটালি গুড়ের কাচামালই হলো খেজুরের রস। বাংলা মাস অগ্রহায়ণ থেকে শুরু করে মাঘের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলে খেজুরের গুড় উৎপাদন ও বিক্রি। গাছে রস না থাকায় ফের একটি বছরের জন্য অপেক্ষা শুরু হয় গুড় উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের।
রাজশাহীর বাঘা মাজারে বসে গুড়ের অন্যতম বড় হাট। রবি ও বৃহস্পতিবার বাঘার এই হাট থেকে ৫০ টির মতো ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গুড়ের আড়তদাররা গুড় সংগ্রহ করে নিয়ে যান। বাঘা ছাড়াও পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলাতেও রয়েছে গুড়ের হাট। এসব হাট থেকেও প্রতি হাটবারে বিপুল পরিমাণে গুড় রাজশাহীর বাইরে বিক্রি হয়। বাঘা হাটের পাইকার ব্যবসায়ী এমদাদুল হক। তিনি গ্রামের পরিবারগুলো থেকে গুড় কিনে হাটবারে ট্রাকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুড় বিক্রি করেন। এমদাদুল জানান, গত বছর প্রতি কেজি গুড়ের পাইকারি দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। তবে এ বছর তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি ৭৫ ক্যারেট গুড় টাঙ্গাইলের এক আড়তে পাঠানোর জন্য অর্ডার পেয়েছেন।
ক্যারেটে পুরে ট্রাকে করে সেই গুড়গুলো গন্তব্যে পাঠানোর জন্য কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতি ক্যারেটে গুড় ধরে ৩২ থেকে ৩৫ কেজি। বাঘার মনিগ্রাম ও আড়ানিসহ আশপাশের গ্রামের গৃহস্থরা এই হাটে গুড় নিয়ে আসেন। তারা বাড়িতেই গুড় তৈরি করেন। সেই গুড় হাট থেকে স্থানীয় পাইকাররা কিনে নেন। এর পর তা ক্যারেট বোঝাই করে টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁ, বরিশাল, ভোলা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে পাঠানো হয়। বাঘার এই হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ হাজার ক্যারেট গুড় ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়। বাঘাসহ রাজশাহীর অন্যান্য গুড়ের হাটগুলো থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০ কোটি টাকার গুড় হাতবদল হয়।#