আবু সুফিয়ান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: গুজব, মাদক, কিশোর অপরাধ, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী একের পর এক সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে প্রশংসা কুড়ানো তরুণ সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম এখন মস্তিষ্কের বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায়। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা এই যুবকের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ লাখ টাকা, যা তার কৃষক বাবার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই দেশবাসীর সহানুভূতি, দোয়া ও আর্থিক সহায়তা কামনা করেছেন সাইফুল ও তার পরিবার।
পঞ্চগড়ের এই তরুণ শুধু নিজ গ্রাম বা জেলা নয়, সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কুমিল্লা টাউন হলে ‘তুচ্ছ ঘটনায় হানাহানি নয়, আসুন মানুষকে ভালোবাসি’ লেখা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আলোড়ন তোলেন। কিশোর গ্যাং ও সামাজিক অপরাধ নিয়ে প্রচার চালান সিরাজগঞ্জে। প্রশ্নফাঁস, কুসংস্কার, দুর্নীতি বিরোধী কর্মসূচি থেকে শুরু করে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অচলাবস্থা নিরসনে ঢাকায় একক মানববন্ধনও করেন।
মানুষকে সচেতন করতে পায়ে হেটে তেঁতুলিয়া-টেকনাফ পদযাত্রাও করে পায়ে হেটে৷ তবে গত চার মাস ধরে সাইফুল ভুগছেন গুরুতর স্নায়বিক রোগে। বাম হাত ও পা ক্রমেই অবশ হয়ে পড়েছে, এখন নিজের কাজ নিজে করতে পারছেন না। ঢাকা ও দিনাজপুরের খ্যাতনামা নিউরোলজিস্টদের অধীনে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হতে পারেননি তিনি। বর্তমানে তার পুরো শরীরেই অবশ ভাব ছড়িয়ে পড়ছে।
চিকিৎসকদের ধারণা, সাইফুল ‘মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS)’ নামের এক বিরল ও জটিল মস্তিষ্কজনিত রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে। তবে এই চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা, যা সাইফুলের পরিবারের সামর্থ্যের বাইরে।
সাইফুলের বাবা আবদুল মজিদ বলেন, “ঢাকা ও দিনাজপুরে অনেক বড় ডাক্তার দেখিয়েছি, কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। দেশের মানুষের দোয়া আর সহযোগিতাই আমাদের শেষ ভরসা।” সাইফুল ইসলাম শান্তি বলেন,আমি চাই শুধু বেঁচে থাকতে, আবার মানুষের পাশে দাঁড়াতে। জীবনের বড় একটা সময় সমাজের ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা করেছি, আজ নিজেই অসহায়। চার মাস ধরে আমি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছি, শরীর আর চলছে না, কিন্তু মন এখনো হেরে যায়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ছাড়া সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সেই ব্যয় আমার পরিবারের সামর্থ্যের বাইরে। আপনাদের ভালোবাসা, দোয়া আর সামান্য সহযোগিতা হয়তো আমাকে আবার দাঁড়াতে সাহায্য করবে। আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসা ও সহানুভূতির শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি।
স্থানীয় সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন বলেন, “সাইফুল একজন ব্যতিক্রমধর্মী তরুণ, যিনি নিজের জীবন দিয়ে সমাজের জন্য কাজ করেছেন। এখন সে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।#