ভৈরব নদ খননে সুফল আদৌ পাবে কি যশোরবাসী
-
প্রকাশের সময় :
রবিবার, ১২ জুন, ২০২২
-
২৩০
বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
ছবি: উৎপোল ঘোষ
# উৎপল ঘোষ,(ক্রাইম রিপোর্টার) যশোর থেকে…………………………
ভৈরব নদ খননের সুফল আদৌ পাবে কি যশোরবাসী ? এ প্রশ্ন এখন সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে বহুল প্রত্যাশিত ভৈরব নদের খনন কাজ চলমান থাকলেও তার সুফল নিয়ে ধুয়াশা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে খনন কাজে নদী আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় এটি সরু খালে পরিণত হতে চলেছে। শহরাংশের দুই তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই খনন কাজ শুরু করায় নদ আরও ছোট হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ২৭২ কোটি টাকার ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯৬ কিলোমিটার পুনঃ খননকাজ চলমান রয়েছে। নদের শহর অংশের ১০ কিলোমিটার এলাকার খনন কাজ শেষ হলেই প্রকল্পের শতভাগ বাস্তবায়ন হবে বলে দাবি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যশোর নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে শহরাংশের খনন কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বৃষ্টির কারণে প্রকল্পের কাজ ফের ব্যাহত হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এজন্য চলতি জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ না করেই আবার বাড়ানোর আবেদন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ অবস্থায় প্রকল্পের ভবিষ্যত আবারও অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। এদিকে খনন কাজ চলমান থাকলেও এর স্বচ্ছতা নিয়ে সর্বমহলে ঝড় উঠেছে। শহরবাসীর অভিযোগ নদ খননের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাযথ নিয়ম মানছে না। নদী খননের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী আইনে খনন করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। দায়সারা গোছে নদ খননের মাটি তীরে না ফেলে তা নদের ভেতরেই ফেলা হচ্ছে। এতে বৃষ্টির পানিতে মাটি ধুয়ে আবারো নদে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে কোথাও কোথাও ভৈরব নদ সরু খালে পরিণত হয়েছে।
যশোর শহরের নীলগঞ্জ ব্রিজ থেকে শহরের কাঠেরপুল ব্রিজের এলাকায় বর্তমান নদের খনন কাজ চলমান রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ অংশে নদ থেকে যে মাটি খনন করা হচ্ছে সে মাটি তীরে না ফেলে নদের ভেতরেই উঁচু করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এসব এলাকায় নদের সীমানা চিহ্নিত না করেই ভেতরের দিক থেকে একটু খনন করে পাশেই মাটি ফেলে রাখা হচ্ছে। অনেক স্থানে নদ খননের মাটি স্থানীয় লোকজন নিয়ে গেলেও সেটি দেখার কেউ নেই।
আবার খনন এলাকায় কোনো কোনো স্থানে এখনও অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এরমধ্যে নীলগঞ্জ শ্মশান ঘাটের বিপরীত দিকে নদের পাড়ের দিকে তাকালে একটি অবৈধ স্থাপনা এখনও অক্ষত দেখা যাবে। শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা সেতু ও কাঠেরপুল সেতুর পাশে দেখা গেছে এ অংশের নদের পাড়ে এখনও বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনার আংশিক অংশ নদের ভেতরে আছে বলে দীর্ঘদিন অভিযোগ উঠে আসলেও প্রভাবশালীদের চাপের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে সাহস পায় না।
অভিযোগ রয়েছে দড়াটানা সেতুর পশ্চিমাংশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় নদের প্রস্থ সেখানে ২২০-২৫০ ফুট। অথচ পূর্বাংশে প্রস্থ ১৭০-১৯০ ফুট সেখানে। এ অংশে নদের প্রকৃত সীমানা না নির্ধারণ করেই খনন কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভৈরব খননের শুরু থেকেই আমরা দাবি করে আসছি নদ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে নদীতট সংরক্ষণের বিষয়টির ওপর। অথচ ভৈরব নদ খননের নকশায় নদীতটের বিষয়টি মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একেবারেই উদাসীনতা রয়েছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূরদর্শিতা ও স্বচ্ছতার অভাবের কারণে সরকারের গৃহিত এ মেগা প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হয়ে বারবার পেছাচ্ছে। এর ফলে নদের নাব্যতা যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি খননের সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদ খননের ক্ষেত্রে শুরু থেকে আমরা নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি। এরমধ্যে ঠিকাদার জটিলতার কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে শহরাংশের কাজ শুরু করতে পারেনি। শেষমেষ ঠিকাদার পাওয়া গেলেও বৃষ্টির কারণে খনন কাজে ব্যাহত হচ্ছে। যেকারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খনন কাজ শেষ করা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খনন কাজে কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। আমরা নদের তীরেই মাটি রাখছি। এসব মাটি পর্যায়ক্রমে এখান থেকে সরিয়ে ফেলারও পরিকল্পনা আছে। ফলে নদের পাড়ের মাটি পরবর্তীতে নদে পড়ে যে ভরাটের কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, শহর অংশের কাজ শেষ হলেই আমরা ভৈরবের খননের সুফল পাবো।#
এডিট:আরজা/০৯
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ