নাজিম হাসান…………………………………..
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার (২৬ জুলাই) এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে ফাঁসি কার্যকরের কথা ছিল বলে কারাগারের ফটকে বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যম কর্মী ভিড় জমালেও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়নি। দুই আসামির ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকর করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার।
ফাঁসি কার্যকরে মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেমড সেলে থাকা অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির সময় ঘনিয়ে এসেছে। যেকোন সময় তাদের ঝুঁলতে হবে ফাঁসির দড়িতে। এ জন্য ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্মরণকালের মধ্যে এই প্রথম দুই আসামির ফাঁসি একই মঞ্চে হতে যাচ্ছে। কারণ এই কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে একটিই। মঙ্গলবার মহড়াও করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হবে, নাকি পর পর হবে- তা নিয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ। তবে ফাঁসি কার্যকরে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এর অংশ হিসেবে ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে তাদের সঙ্গে শেষ দেখা করেছেন। কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের জন্য আহŸান করেছিল। মঙ্গলবার দুজনের পরিবারই সাক্ষাৎ করেছে।
এদিকে,ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে দিনক্ষণ ঠিক করে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। একই দিনে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুযায়ী সুবিধামতো সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্টরা। একজন আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে চার জল্লাদের প্রয়োজন হয়। এদের মধ্যে একজন প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেন। বাকি তিনজন তাকে সহযোগিতা করেন। তাই মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের জন্য আটজন জল্লাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা মহড়াও করেছেন। এই আট জল্লাদের তালিকায় আছেন, ইসলাম, আলম ও ওয়াহাব। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
জল্লাদরা যাবজ্জীবন কারান্ডপ্রাপ্ত আসামি। কঠোর গোপনীতা ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসির প্রক্রিয়া নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে আজ ফাঁসির সময় সম্পর্কে অবগত করে কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গেলে কারা ফটকে ভিড় জমান গণমাধ্যমকর্মীরা।
ঘটনা প্রবাহ ও মামলার বিবরণ সুত্রে জানাগেছে, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রæয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের আহমেদ। পরদিন ২ ফেব্রæয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ৩ ফেব্রæয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রæত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
দÐিতোরা হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ‚তত্ত¡ ও খুনি বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি।পরবর্তীতে দন্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন। তবে আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন হওয়া দুই আসামির দন্ডবৃদ্ধি চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন।#