বিশেষ প্রতিনিধি: পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে স্বস্তি ফিরলেও মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বানভাসি মানুষ। পানি নামেনি অনেকের বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। কাজে ফিরতে পারছেন না বন্যায় আক্রান্ত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষ। পাশাপাশি গো খাদ্যের সংকট রয়েছে। সুপেয় পানির সংকটও রয়েছে এলাকায় । পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের।
জানা যায়, রাজশাহী বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলে এবার বন্যার পানিতে ১৭শ‘ বিঘা জমির আবাদি ফসলসহ গোচরণভূমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বেড়ার অর্ধেক পানিতে ডুবে যায় লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে চকরাজাপুর ও গড়গড়ি ইউনিয়নের ২ হাজার ৪শ‘ পরিবার। আতারপাড়া গ্রামের সুমন হাওলাদার জানান,পানি কমলেও তার মতো গ্রামের বেশ কিছু পরিবারের ঘরের পানি এখনো নামেনি। মহিদ ঢালী,ইব্রাহীম হাওলাদার,মাদার ব্যাপারি,জবলু কাজিসহ কয়েকজন জানান,মাঝে মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত থেমে নেই। এতে ঘর থেকে বের হতে পারছিনা।
ওই গ্রামের সানোয়ারা,পবলী জানান,স্বামী নাই, আয়-উপার্জনের মতো কেহ নাই। তারা ছাড়াও রাজিয়া জানান, ১সন্তান রেখে তার স্বামী চলে গেছে। অসহায় অবস্থায় আছেন। রানা কাজি জানান, বন্যার কারণে কাজ বন্ধ। বেকার হয়ে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল হাওলাদার জানান, আতারপাড়া গ্রামে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা শতাধিক। পানি কমলেও কোথাও কোথাও ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তার এলাকার পানিবন্দী মানুষকে সহায়তা করেছেন। কালিদাশখালি গ্রামের চান মিস্ত্রী জানান,ঘরে হাঁটু পানি ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। ৪ জনের সংসার তা,। এলাকায় কাজ নেই, নিরুপায় হয়ে আছি।
বন্যার পানি কমলেও ক্ষত বিক্ষত সড়কে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ওই গ্রামের বাতেন মোল্লা জানান, নীচ পলাশি -ফতেপুর মাঠে তার আবাদ করা ৫বিঘা জমির কাউন ও ৩বিঘা জমির আধাপাঁকা ধান ডুবে গেছে । আবাদের খরচ বাদেই প্রতি বিঘা জমি লীজ নিতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। কাউন আবাদে খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা।
ইউনিয়নটির সংরক্ষিত (৭.৮.৯) ওয়ার্ডের নারি সদস্য রুনিয়া খাতুন বলেন, ৩০ হাজার টাকা হিসেবে ৩বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভুট্রার আবাদ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । বন্যায় ডুবে সব শেষ। ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, চাহিদা অনুপাতে সবাইকে এখনো সহায়তা দেওয়া যায়নি। পরে সহায়তা পেলে, বাদ পড়াদের আগে দেওয়া হবে। বেসরকারিভাবেও সহায়তা দিচ্ছেন বলেন জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা জিন্নাত আলী জানান,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আতার পাড়া গ্রামের ১০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তারা। চরকরাজাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জগলু শিকদার জানান, বিএনপি ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ৭০০ পরিবারকে চাল, ডাল ও ময়দাসহ ৫০০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। খানপুর গুচ্ছগ্রামের তোহিদ ফকির জানান,সরকারিভাবে ১০কেজি চাল, ১কেজি ডাল, ১কেজি চিনি, ১কেজি লবন, ১লিটার সোয়াবিন তেল ও ১০০ গ্রাম করে-হলুদ,মরিচ , মসলা দিয়েছে।
প্রঙ্গগতঃ চকরাজাপুর ইউনিয়নের- পলাশী ফতেপুর, কালিদাসখালী,আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর, লক্ষীনগর ও গড়গড়ি ইউনিয়নের কড়ারি নওশারা, খানপুর গুচ্ছগ্রাম, আশরাফপুর ও খানপুর নীচ পাড়াসহ ১০ গ্রামের ২ হাজার ৪০০পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ভাঙনের ঝুঁকিতেও রয়েছে, চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ এর চারপাশে ৫০টি পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, ৫০ বিঘা পেয়ারাবাগান, ৩০০ বিঘা কাউন, ৪০০ বিঘা আউস ধান, ২০০বিঘা ভুট্টা, ৫০০ বিঘা পেঁপে ও ২০০ বিঘা কলাবাগানসহ আখ খেত জলমগ্ন হয়ে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, বন্যায় আক্রান্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। চৌমাদিয়া গ্রামের ২২০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও খানপুর গুচ্ছগ্রামের ৮৫ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বাঁকিদের দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। #