বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় পারিবারিক কলহের জের ধরে দুই গ্রামে দুই গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর একটি উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামে অপরটি গড়গড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে। মঙ্গলবার(২১-১০-২০২৫) তাদের মরদেহ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে ।
পুলিশ জানায়,মঙ্গলবার দুপুরে সুলতানপুর গ্রামের শরিফুলের স্ত্রী সোহাগী খাতুন(২৫) বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মারা মারা যায়। তার পরিবার জানায়,পারিবারিক কলহের জের ধরে অভিমানে গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সোহাগী খাতুন গ্রামের আজিজুল-আকলিমা দম্পতির মেয়ে। সে আত্নহত্যা করেছে বলে পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে। একইদিন দুপুরে আটঘরিয়া গ্রামের গৃহবধূ মনিষা খাতুন (১৮) এর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর পর তার স্বামী আজাদ আলী পলাতক রয়েছে। পুলিশ জানায়,সোমবার (২০ অক্টোবর’২৫) রাতের যেকোন সময়ে সে মারা গেছে।
জানা যায়, গত ৪ বছর আগে কাবিন (রেজিস্ট্রি) ছাড়াই একই গ্রামের আজাদ আলীর সাথে তার বিয়ে হয় মনিষার। তাদের ঘরে আড়াই বছরের এক কণ্যা রয়েছে। গৃহবধুর পিতা মুনসাদ আলী জানান, বিয়ের সময় মেয়ের বয়স কম থাকায় কাবিন ছাড়াই বিয়ে দেন। মত্যুর দেড় মাস আগে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে চাইলে ছেলের মামা ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে। তার দাবি, বিয়ের সময় ছেলের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছেন ।
ওই গৃহবধূর মামা সাদ্দাম হোসেন জানান, রাত আড়াইটার দিকে তার মা রুবিনা খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর খবর পেয়ে ফানে আমাকে জানান। সেখানে গিয়ে ঘরের বারান্দায় মরদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখেন। পরে ৯৯৯ কল করে পুলিশকে জানাই। তিনি বলেন, ওই ছেলে কিছুদিন আগে আরেকটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে বিয়ে করেছে বলে শুনেছি । সেই বউকে বাড়িতে চাইলে মাঝে মাঝেই তাদের মতবিরোধ হলে বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা বলতো।
গৃহবধূর মা রুবিনা খাতুন বলেন , তার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার পর ঝুলিয়ে রেখে আত্নহত্যার করেছে বলে প্রচারনা চালাচ্ছে। তাদের মতবিরোধের কারণে মেয়ে আমার বাড়িতে যেতে চাইলেও পাঠাইনি। এমনকি আমার সাথে কথাও বলতে দেন না তারা । আজাদ আলীর (গৃহবধুর স্বামী) মা শরিফা বেগম জানান, গতকাল সন্ধ্যায় আমার ছেলের সাথে তার বউয়ের ঝগড়া হয়। এ সময় বিষ খেয়ে মারা যাবো বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় । তারপর ছেলেকে খুজতে বের হয়। পরে রাত ১১ টার দিকে ঘরে গিয়ে দেখি ছেলের বউ শয়ন কক্ষের তীরের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলে আছে। তার দাবি, তার ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে নি ।
আজাদ আলীর মামা শহিদুল ইসলাম টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, টাকা না জামাইকে একটি মটরসাইকেল দেওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে টাকা চাওয়ার কথা সত্য নয়।
বাঘা থানার এসআই মোজাম্মেল হোসেন বলেন, গলায় দাগ দেখে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার ধারণা করা হয়েছে। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফম আছাদুজ্জামান বলেন, পৃথক দুটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যু সঠিক কারণ জানা যাবে।#