বিশেষ প্রতিনিধি………………………………………………………………..
এবারই প্রথম সাড়ে ৩বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন খানপুর এলাকার কৃষক সালাম আলী,রাব্বি হোসেন ও কামরুল ইসলাম। তার পাশের ২বিঘা জমিতে চাষ করেছেন কার্তিক প্রামানিক ও তার ভাই গনেশ প্রামানিক। কৃষি বিভাগের প্রনোদণা কর্মসূচির আওতায় প্রমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন তারা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদর থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর গ্রাম। নদীর তীর রক্ষা বাঁধের বাঘা-লালপুর সড়ক হয়ে যাওয়ার পথে গ্রামটির দক্ষিনে পদ্মার চরে অসংখ্য সূর্যমুখীর খেত নজর কাড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বাতাসে দোল খাচ্ছে। হলুদ গালিচার সূর্যমূখী ফুলে শুধু কৃষকের মুখে হাসিই ফোটেনি, উৎপাদন-ফলনেও আশায় বুক বেঁধেছে তারা। প্রথম আবাদেই যে বাজিমাত করেছে, নিঃসন্দেহে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।সূর্যমুখীর ফুলের দানায় শেষ হাসিও হাসবেন কৃষক।
স্থানীয়রা জানান,সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। কেউ এসে সেই খেতের ছবি তুলেন, কেউবা পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তারা জানান,পড়ন্ত বিকালে সূর্যমুখীর বাগানগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় থাকে বেশি।
গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় তাদের। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ হতো না। সবাই পড়ে থাকত অন্য ফসলের আবাদ নিয়ে। কিন্তু বেলে দোআঁশ মাটির এ এলাকায় সূর্যমুখীর চাষ যে লাভজনক, বিষয়টা প্রথম ধরতে পারেন গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের সালাম আলী ।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন সালাম আলী সহ কয়েকজন কৃষক। এসব জমির অধিকাংশ গাছে ফুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শতভাগ জমিতেই ভালো বীজ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, সূর্যমুখীর চাষ চাষিদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। অন্য ফসল ছেড়ে এবার এ ফুলের চাষ করছেন গড়গড়ি,বাজুবাঘা ইউনিয়ন ও আড়ানি পৌর এলাকার কয়েকজন কৃষক। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমূখী ফুলচাষ ।
সালাম আলী জানান, ১ বিঘা জমি লীজ নিতে লেগেছে ২০ হাজার টাকা। জমির লীজ বাদে,বিঘা প্রতি ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে ৩বিঘা জমিতে ৩জন মিলে সূর্যমুখী লাগিয়েছিলেন। সবমিলে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। রাব্বি হোসেন জানান, আখ কেটে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে গাছে ফুল এসেছে জানান । কৃষক কার্তিক প্রামানিক বলেন, তারা দুই ভাই ধানের পাশাপাশি সবজির আবাদ করেন। তবে কৃষি অফিসারের পরামর্শে এবারই প্রথম দুই ভাই ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শে পরিচর্যা করছেন। ক্ষেত ভালো হইছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, বাঘা উপজেলা কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব জানান, সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম, খাটুনি নেই, লাভও আছে। বিঘা প্রতি বীজ লাগে ১ কেজি। সার লাগে ৭০ কেজি ডিএপি ও এমওপি ২৫ কেজি। প্রনোদণা হিসেবে কৃষক প্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সারসহ ১ কেজি করে কাবেরি চ্যাম্পিয়ন হাইব্রিড সুর্যসুখী বীজ দেওয়া হয়েছে। বিঘা প্রতি ফলন হবে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫মণ। ১মণ বীজ থেকে ৮-১০ কেজি তৈল পাওয়া যাবে।
বৈশাখের শেষের দিকে এ ফসল কর্তন করা যাবে। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মাসে কৃষকচাষ করেছে। এ ফুলের বীজ থেকে শর্ষে ভাঙানোর মেশিনের মাধ্যমে তেল তৈরি করা যায়। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকতা কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পরীক্ষামূলক এ বছর উপজেলার ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এ ফুল রোপণের ১১০ থেকে ১২০ দিনের মাথায় ফুল থেকে বীজ পাওয়া যায়। মাটির অদ্রতা বুঝে ২বার সেচ দিতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই তেমন হয় না।
তিনি বলেন, সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, অতিরিক্ত উপ পরিচালক(শস্য) মোছাঃ সাবিনা বেগম বলেন, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতসহ তেল জাতীয় ও দানা জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তারে প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখীতে উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।#