# বাগমারা প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাগমারায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী পথশিশু সালমার ধর্ষক এখনও শনাক্ত হয়নি। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো নিশ্চিতভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজন মাদকসেবীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ভুক্তভোগী শিশুর চাচা ও মামলার বাদী মানিক পাটয়ারি অভিযোগ করেন, “আমরা দীপু (১৮) নামে এক বখাটেকে সন্দেহ করছি। সালমা বারবার ইশারায় তাকেই দেখিয়েছে। আমরা যখন কয়েকজন যুবককে একত্রে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করি, তখন সে সরাসরি দীপুর দিকে ইশারা করে। এমনকি মোবাইলে দীপুর ছবি দেখানো হলে সে চিৎকার করে ওঠে। দীপু পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং নিপেন নামে এক ব্যক্তির ছেলে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে দীপু বলেন, “ঘটনার রাতে আমি বাড়িতেই ঘুমাচ্ছিলাম।” তার বাবা নিপেনও একই দাবি করেন। তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, “এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। সাধারণত মাদকসেবীরা এমন বিকৃত মানসিকতার হয়ে থাকে। তবে দীপুর মাদকসেবনের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবুও তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত চলছে।”
তিনি আরও জানান, “ভিকটিম বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারপ্রেটারের মাধ্যমে ৩০ জুন, সোমবার রাজশাহী জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা গোপন রাখা হয়েছে।” ধর্ষণের শিকার শিশুটি বর্তমানে রাজশাহীর শাহ মখদুম এলাকায় অবস্থিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা শেষে তাকে সেখানেই স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে দ্রুত অপরাধীর গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাহেরপুর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, “একজন প্রতিবন্ধী শিশুর ওপর এ ধরনের বর্বরতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়।”
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুর রহমান জানান, “আমরা ঘটনাস্থলের আশেপাশের অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এলাকাটিতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। প্রাথমিকভাবে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল, কিন্তু তথ্যের অভাবে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে ধর্ষক শনাক্ত করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, ২৩ জুন রাত ১১টার দিকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ গেট এলাকায় এক রক্তাক্ত বাকপ্রতিবন্ধী শিশুকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ৩টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।#