বরিশাল সংবাদদাতা: বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নে মার্চ-এপ্রিল,মে-জুন এই ৪ মাস নদীতে জেলেদের জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ২৩ জুন (বরিবার) ও ২৪ জুন (সোমবার) সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি সদস্য আবুল কালাম জেলেদের ভিজিএফ চাল বিতরণ করেন। এ সময় নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার মাধ্যমিক একাডেমি শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক অনুপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিবন্ধনকৃত দরিদ্র জেলেদের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।চলতি বছরে নিয়ামতি ইউনিয়নের ১৫০ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও দুই ধাপে দুই মাসের চাল একত্রে জনপ্রতি ৮০ কেজি না দিয়ে তাদেরকে দেয়া হয়েছে ৫০ কেজি করে।
ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রকাশ্যে অন্তত জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের বাকি চাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে। চাল বিতরণের প্রথম থেকেই এই অভিযোগ করে আসছিল স্থানীয় জেলেরা। গত ৪ মাসে ১৫০ জন ছেলেদের বরাদ্দের চাল মোট ২৪ টন হলেও সেখান থেকে জেলেদের চাল কম দিয়ে ৯ টন চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম হাওলাদার।
এছাড়া গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদে ২৪ জুন ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ২৬৬ জন দুস্থ নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে অসৎ উদ্দেশ্যে তাদেরকে জন প্রতি দেয়া হয়েছে ২৭/২৮ কেজি চাল। দুস্থ নারীদের জন্য ৭ টন ৯৮০ কেজি চাল থেকেও প্রায় ৬০০ কেজি চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নিয়ামতি ইউনিয়নের ১০ জন জেলেদের জন্য ৫৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও ৫৬০ কেজি চাল এখন পর্যন্ত কোন জেলে পাইনি। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ভিজিএফ ১৪১২ জনের জন্য ১৪ টন ১২০ কেজি চাল নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেয়া হলেও সেখানেও জন প্রতি পরিমাপে কম দিয়ে ও অনেকের মাঝে চাল না দিয়ে প্রায় ২ টন চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
২৪ জুন নিয়ামতি ইউনিয়নের রুপারজোর গ্রামে জেলে পাড়ায় গেলে জেলেরা জানান, আমাদের এই জেলা পাড়ায় ৫৭ জন জেলে পরিবার রয়েছে। আমরা ২৪ পরিবারের মধ্যে নিবন্ধনকৃত দরিদ্র ২৪ জেলে এই বছর চাল পেয়েছি। আমাদের চেয়ারম্যান ৪ মাসে মোট এক কার্ডে ১৬০ কেজি চাল না দিয়ে দিয়েছেন ১০০ কেজি। বাকি চাল চেয়ারম্যান ও মেম্বার আত্মসাৎ করেছে।
জেলেদের চাল ও অন্যান্য বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে চেয়ারম্যানের হুমায়ুন কবির বলেন, বরিশালে মিটিংয়ে রয়েছি। বাকেরগঞ্জ এসে সাক্ষাতে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার বলেন, আমি ছুটিতে রয়েছি। তবে আমাকে না জানিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে চাল বিতরণের নিয়ম নেই।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. নাছির উদ্দিন বলেন, গত দুই দিনে আমার কাছে জেলেরা মুঠোফোনে অভিযোগ করেছে। আমি বারবার ফোন করে চেয়ারম্যান কে সঠিক নিয়মে চাল বিতরণ করতে বলেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, জেলে পরিবার প্রতি যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাই বিরতণ করতে হবে। সরকারি কোনো বরাদ্দের চাল কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#