জিয়া রাজ…………………………………………..
জ্বালানি উপদেষ্টার তৌফিক ই এলাইহির বক্তব্যে হতাশ হয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন বাসা বাড়িতে দিনে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করতে। বিগত কয়েক মাস থেকে দেশে চলছে তীব্র জ্বালানি সংকট। ফলে সারা দেশে লোডশেডিং এর পরিমান দ্বিগুন হয়েছে। প্রতিদিন ২ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পায়নি কোন কোন অঞ্চলে। সেপ্টেম্বর নাগাদ লোডশেডিং কমে যাবে বলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হানিদ যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তার কোন প্রতিফলন আজও ঘটেনি। লোডশেডিং এর পরিমাণ আগের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এমনই আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্যে। তিনি দিনের বেলা বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে বলেছেন। এর আগে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে সরকার সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সকল সরকারি বেসরকারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সকল এনজিও অর্থাৎ সকল অফিস আদালতে এ নির্দেশ চালু রয়েছে।এবার বাসা বাড়িতে এ নির্দেশের আওতায় এসে যাচ্ছে।
দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যাহত রাখতে সরকার বাসা বাড়ির মত প্রকল্পগুলো স্থগিত করার চিন্তা ভাবনা মাথা এনে জ্বালানী সংকট কিভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে তা নিয়ে খুবই চিন্তিত। তাহলে ক্ষুদ্র শিল্পগুলোর কি হবে, একটু চিন্তা করা প্রয়োজন। সরকার যেভাবে ভাবছে তা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে দেশে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তারা আরো মনে করছেন লোড শেডিং আর বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ’র ব্যবহার কমিয়ে দেশের অর্থনিতিক চাকা কতটুকু সচল রাখা সম্ভব তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।
এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশের শীর্ষ সব শিল্প কলকারখানায়। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। পোশাক শিল্পসহ সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পযার্প্ত পরিমানে উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাপক ধ্বস নামতে পারে বলে আশংকা করছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। যে কোন উপায়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এসংকট নিরসনে আমাদের সবার আগে ভাবতে হবে উৎপাদনমূখী শিল্পে কি উপায়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা যায়।
গতকাল জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বসেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। সকল ব্যবসায়ীর দাবি যে কোন মূল্যে শিল্প কারকানায় জ্বালানী সরবরাহ বাড়াতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী সরকার যদি জ্বালানি সরবরাহ করতে ব্যার্থ হয় তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন ব্যাহত হলে রপ্তানি ব্যাহত হবে। রপ্তানি ব্যাহত হলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে। সরকার বলছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও জ্বালানি, এলএনজি গ্যাস ও ডিজেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে শিল্প কারখানায় পযার্প্ত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
ডিজেলের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় অনেক প্রতিষ্ঠানে।ফলে সরকার এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। প্রত্যেক এলাকায় ২ ঘন্টা করে লোডশেডিং করার কথা বললেও ৬-৮ ঘন্টা পযর্ন্ত লোডশেডিং হয়েছে। বর্তমানে জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিল্প মালিকদের দাবি বর্তমানে জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দিনে অর্ধেক সময়ও গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছেন না তারা। ফলে লোকশানের মুখে অধিকাংশ কলকারখানা। তাদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক লোন সহ সার্বিক খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়বে। নিঃশ্ব হয়ে পথে বসতে হবে অনেক প্রতিষ্ঠান মালিককে।
সরকার বার বার জ্বালানি সংকটের সমাধানের আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোন ফল পাচ্ছেন না জনগণ। ফলে সরকারের কোন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ। তাদের দাবি অতিদ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপের দিকে ধাবিত হবে।লোড শেডিং আর বাসা বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবহর কমিয়ে দিয়ে কলে কারখানায় উৎপাদন কতটুকু ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে নতুন ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।তবে সোলার প্যানেল ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এর ব্যবহারে সর্বোচ্চ সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আর তা যদি সম্ভব হয় তবে দেশের উৎপাদনমূখী প্রতিষ্ঠগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারে। দেশে চরম বিদ্যুৎ ঘাটতির আরো বেশি সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে। সেজন্য এখনই বিদ্যুৎ’র বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। তাহলে দেশ অর্থনৈতিক ঘাটতির থাবা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারে।
করোনার পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সারা বিশ্বের যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়েছে তার প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়েছে সেটা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। পৃথিবীর বাঘা বাঘা দেশগুলোও যেখানে অর্থনৈতিক খারাপ পরিস্থিতিতে টালমাটাল যেখানে বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশ সরকার সৃস্ট অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ না করা, বিলাশবহুল গাড়ি ও পণ্য আমদানি কমিয়ে আনা, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো, নতুন করে মেগা প্রকল্প হাতে না নেয়া, সরকারী কর্মকর্তাদের দূর্নীতি রোধ করা সহ নানা মূখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এত সব পদক্ষেপ নেয়ার পরও কতটুকু স্বস্তিতে দেশের জনগণ, কতটুকুই বা কার্যকর হচ্ছে সরকারের পদক্ষেপ গুলো সে বিষয়ে সরকারী নজরদারি থাকা জরুরী। প্রত্যেকটি বিষয়ে সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে তবেই দেশ ও দশের কল্যাণ সাধিত হবে।#