# আলিফ হোসেন, তানোর, রাজশাহী থেকে…………………………………………
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মান্দার ভারশোঁ ইউনিয়নের (ইউপি) মজিদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতি জেঁকে বসায় শিক্ষার মান নিম্নমুখী বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ- অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
স্থানীয়রা বলছে, মজিদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা আকুন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এসব কারণে বিপুল সম্পদ থাকার পরেও মাদরাসায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ মাদরাসার যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে,তা থেকেই মাদরাসার দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন সম্ভব ছিল। তারা এই মাদরাসার সম্পদের আয়-ব্যয় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিভাবক মহলের ভাষ্য, মাদরাসার নামে প্রায় ৬০ বিঘা ফসলী জমি রয়েছে। প্রতিবছর এক বিঘা জমির ইজারা মুল্য যদি ৩০ হাজার টাকা হয়। তাহলে ৬০ বিঘা জমি থেকে প্রতিবছর আয় হয় ১৮ লাখ টাকা। অথচ এসব টাকার হদিস নেই, অধ্যক্ষ-সভাপতি মিলেমিশে লোপাট করছে। ফলে হয়নি মাদরাসার কোনো উন্নয়ন। এখানো গড়ে উঠেনি মানসম্পন্ন একাডেমিক ভবন। প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষা উপকরণ নেই, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব ও লাইব্রেরি নেই, জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্ধারিত স্থান ও সীমানা প্রাচীর নেই। নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত হয় না, অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী অফিস সময় মানেন না এবং কর্মরত সিংহভাগ শিক্ষক-কর্মচারী জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষক আকতারুল ইসলাম কম্পিউটার চালাতে পারদর্শী নয়, কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ বাইরে থেকে করানো হয়। এতে একদিকে অর্থের অপচয়, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সকল তথ্য বাইরের মানুষের হাতে যাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষকেরা সৃজনশীল বোঝে না। বিজ্ঞান শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। অসমর্থিত সুত্র জানায়, নৈতিক শিক্ষার নামে জামায়াত মতাদর্শী লেখকের লেখা বই পড়ানো হয়।
জানা গেছে, বিগত ১৯৭৩ সালে মান্দার ভারশোঁ ইউনিয়নের (ইউপি) মজিদপুর গ্রামে মজিদপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা স্থাপন করা হয়। বিগত ১৯৮০ সালে মাদরাসা এমপিওভুক্তকরণ করা হয়। মাদরাসায় শিক্ষক রয়েছেন ২৮ জন ও কর্মচারী ৫ জন তবে নতুন করে আরো ৫টি পদে জনবল নিয়োগ প্রায় সম্পন্ন হবার পথে। তবে প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী নেই শিক্ষার মাণও নিম্নমুখী। চলতি শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ২০ জন শিক্ষার্থী ফরম পুরুণ করেন। তার মধ্যে ৩ জন ঝরে পড়ে ১৭ পরীক্ষা দিয়ে ১৩ জন কৃতকার্য হয়েছে। এমন প্রতিষ্ঠানে নতুন করে জনবল নিয়োগের প্রয়োজন আছে কি ? বরং যারা আছে তাদেরই এমপিও স্থগিত করা উচিৎ বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
অভিভাবক মহল শিক্ষকদের অফিস সময় নিশ্চিত, বিজ্ঞানাগার,কম্পিউটার
ল্যাব, লাইব্রেরী কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালনা কমিটি গঠন পাশাপাশি যে বিষয়ে শিক্ষার্থী সংকট সেই বিষয়ের শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পরিদর্শনের দাবিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওঃ হারুন অর রশিদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাদরাসা নিয়মমতো চলে। তিনি বলেন, মাদরাসার ৬০ বিঘা জমি আছে যা থেকে এবছর ৮ লাখ আয় হয়েছে। তিনি বলেন, জমি থেকে আয়ের টাকায় মাদরাসার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার সভাপতি ও উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাহাবুবা সিদ্দিকার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#