# কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ …………………………………………..
নওগাঁর আত্রাই নদীর দেশীয় মাছ থেকে উৎপাদন পুষ্টিগুন সমৃদ্ধি শঁকটি মাছ এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সম্পন্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে রাসায়নিক মুক্ত ভাবে উৎপাদিত শত শত টন শুঁকটি মাছ বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আড়ৎতে। এই অঞ্চলে উৎপাদিত শুঁকটির একটি অংশ বিভিন্ন হাত ঘুরে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এতে বেকারত্ব দূর হবার সাথে সাথে গ্রামীণ বিলাঞ্চলের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
শুঁকটি উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করতে ও এই কাজে কর্মরতদের দক্ষতা বাড়াতে আগামি দিনে ট্রেনিং ও লোন প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছে স্থানীয় মৎস্য অফিস।
সরেজমিনে আত্রাই নদীর বিভিন্ন শুঁকটি চাতাল ঘুরে শুঁকটি উৎপাদনকারীদের সাথে কথা বলে ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরেই বর্ষা মৌসুমে আত্রাই নদী,খাল,বিল থেকে প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মাছ আহরণ করা হয়। আহরনকৃত মাছ বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির পরেও ছোট আকারের প্রচুর পরিমান মাছ অবিক্রিত থেকে যায়। যা এক সময়ে নষ্ট হত অযত্নে ও অবহেলায় কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবৎ আত্রাই নদী,খাল-বিলের উচ্ছিষ্ট এই মাছ দিয়ে শুরু হয়েছে শুঁকটি উৎপাদন।
আত্রাই নদীর অধ্যুষিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের মধ্যে গুড়নই,বিশা ইউনিয়নের খরসতি,হাটকালুপাড়া ইউপি’র হাট মোজাহারগঞ্জ, চকসিমলা, কালিকাপুর ইউনিয়নের বড় কালিকাপুর, বামনিগ্রাম, আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের শুকটিগাছা, সিংসাড়া, ভোঁপাড়া ইউনিয়নের ভঁড় তেঁতুলিয়া, তিলাবাদুরী, জামগ্রাম, সাহাগোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে শত শত অস্থায়ী শুঁকটি মাছের চাতাল। প্রতিটি চাতালে শুঁকটি মাছ উৎপাদনের বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন অন্তত দশ থেকে পনর জন করে নারী-পুরুষ শ্রমিক। এই শ্রমিকদের অধিকাংশ শুকনো মৌসুমে কৃষিকাজ করলেও বর্ষাকালে বেকার। শুঁকটি উৎপাদন শুরু হওয়ার পর এখানে কাজের সুবাদে দুর হয়েছে এদের বেকারত্ব জীবন।
আত্রাই নদীর অধ্যুষিত উপজেলার ভর-তেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁকটি উৎপাদনকারী এবং শুঁকটি ব্যবসায়ী শ্রী রামপদ শীল জানান, শুকনো মৌসুমে খেত-খামারে কৃষি কাজ করি,বর্ষা কালে কোন কাজ থাকে না। ফলে আগে প্রায় চার মাস বেকারত্ব থাকতে হতো। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে- অনাহারে জীবন কাটত। কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুমে শুঁকটি উৎপাদন করি। এতে যে লাভ হয় তাতে আমার পরিবারে স্বচ্ছলতা এসছে। একই এলাকার শুঁকটি চাতালের নারী শ্রমিক অছিয়া বেগম জানান, বর্ষা ছাড়া অন্য সময়ে বিভিন্ন কাজ করি। বর্ষা মৌসুমে তেমন কোন কাজ থাকে না। কিন্তু শুঁকটির চাতাল হওয়ার পর এখানে কাজ পাওয়ায় এবং সারা বছরই আয় রোজগার হয়।
শুঁকটি উৎপাদন বিষয়ে আত্রাই উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার পলাশ চন্দ্র দেব নাথ জানান, আত্রাই অঞ্চলের এক শত সত্তর থেকে এক শত আশি মন শুঁকটি উৎপাদন হয়। এটি অত্রন্ত লাভ জনক হওয়ায় দিন দিন এর প্রসার বাড়ছে। এখানকার শুঁকটিতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার হয় না। ফলে এখানকার উৎপাদিত শুঁকটি অত্যান্ত সু-স্বাদুহয়।
তিনি আরো বলেন,আগামীতে শুঁকটি উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষিত করতে ট্রেনিং দেওয়া ও লোন সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই ভবে মাছ সংরক্ষণের জন্য একটি সংরক্ষণগার নির্মানের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি এতে দ্রুত আত্রাইয়ে এই শিল্পটি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষণগার নির্মানের টিম বাংলাদেশ ফিসারিজ উন্নয়ন করপোরেশন প্রকল্পের সহকারী প্লানিং অফিসার মোহম্মাদ হাসান, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার শ্রী পলাশ চন্দ্র দেব নাথ, সিনিয়র সাংবাদিক কামাল উদ্দিন টগর, আত্রাই শুঁকটি উৎপাদনকারী সমিতির সভাপতি জব্বার সরদার, সাধারণ সম্পাদক শ্রী রামপদ শীল, প্রমূখ #