মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মহানগর ক্লিনিকের ভুয়া চিকিৎসকদের ভুল অপারেশনে এক নারী রোগীর জীবনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রোজিনা খাতুন (৩৫) গত ২৮ আগস্ট সিভিল সার্জন, রাজশাহী জেলার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১০ জুলাই রাতে পেটব্যথা নিয়ে রোজিনা তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখানে মহানগর ক্লিনিকের দালাল বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাকে উক্ত ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ক্লিনিকের ম্যানেজার মামুন ও অন্যান্য সহযোগীরা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জানান, জরুরি ভিত্তিতে এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করতে হবে, তানাহলে মৃত্যু হতে পারে। পরদিন ১১ জুলাই সকালে ক্লিনিকের পরিচালক হেলাল উদ্দিন, তার স্ত্রী কামরুন নাহার স্মৃতি, সহকারী পরিচালক জাহিদ হাসান ও তথাকথিত ডাক্তার ফজলে রাব্বীসহ অন্যরা যোগসাজশে রোজিনার অপারেশন করেন। দুই দিন পর তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বাসায় ফেরার পর তীব্র জ্বর ও পেটব্যথা দেখা দেয়। পুনরায় ক্লিনিকে গেলে কর্তৃপক্ষ শুধু সাপোজিটরি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। অবশেষে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা জানান, মহানগর ক্লিনিকের অপারেশন সম্পূর্ণ ভুল ছিল এবং এতে রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুনরায় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ভুক্তভোগী।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মহানগর ক্লিনিকের অপারেশন পরিচালনাকারীরা ভুয়া চিকিৎসক। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বড় ডাক্তার পরিচয়ে প্রতারণামূলকভাবে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এর আগে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ও নানা অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
ভুক্তভোগী রোজিনা বলেন, প্রতিবাদ করলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ উল্টো হুমকি দিয়ে জানায়, “থানা, পুলিশ, কোর্ট, সাংবাদিক সবাই আমাদের পকেটে। বাড়াবাড়ি করলে উল্টো মিথ্যা মামলা হবে।” অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব-৫, সেনা ক্যাম্প ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আফিয়া আক্তার বলেন, “আমি সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সিভিল সার্জন জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তানোর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও বলেন, “আমি ইতোমধ্যেই ক্লিনিকটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে অভিযুক্ত ক্লিনিক মালিক হেলাল উদ্দিন দাবি করেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। এসব ঘটনা ঘটেনি।#