মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) প্রত্যন্ত পল্লী গুড়ইল আদিবাসী নতুনপাড়া গ্রামে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ জানুয়ারী শুক্রবার গভীর রাতে ওই আদিবাসী পল্লীতে এই হামলা,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এঘটনায় আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি, বাবুল, মিজান ও জুলফরের নেতৃত্বে অস্ত্র সজ্জিত বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আদিবাসী পল্লীতে হামলা,ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
শনিবার সকালে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা খবর সংগ্রহ করতে গেলে আদিবাসীরা ভুমিগ্রাসীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নাটের গুরু দুখু হাজিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।
আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা রুপেন মুর্মু(৪০),হিরা টুডু (৫৫) ও বেদেনা মুর্মু (৩৮) বলেন, গত শুক্রবার গভীর রাতে গুড়ইল গ্রামের মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি, বাবুল মৃধা, জুলফার ও মিজানের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর উপর বহালা বাড়ী গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর পুত্র ভুমিদস্যু শফিকুল ইসলাম ওরফে ভুলু বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস ভর্তি অস্ত্র সজ্জিত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের ওপর হামলা, লুটপাট ও বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় তারা বাধা দিতে গেলে তাদের উপর তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা এবং কয়েকজন নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা ও হুমকি দিয়ে বলে এরপর জমিতে গেলে তাদের বসতঘর জ্বালিয়ে এলাকাছাড়া করা হবে। আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের হামলা ভাঙচুর প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে তারা সেখান থেকে চলে এসে দুখু হাজির বাড়িতে অবস্থান নেয় ও ভূরিভোজন করেছে। তবে মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি বলেন, তিনি এসব জমির বর্গাচাষীদের দেখভাল করেন মাত্র।
তিনি বলেন, আদিবাসিদের কোনো কাগজপত্র নেই তারা জোরপুর্বক জমি দখল করতে গেলে বর্গাচাষিরা বাধা দেন। তিনি বলেন,আদিবাসি পল্লীতে কেউ আগুন দেননি, তারা নিজেরা পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন দেয়ার নাটক করছে।
শফিকুল ইসলাম ওরফে ভুলু বলেন, তিনি যাননি তার বর্গাদারেরা বাধা দিয়েছেন বলে তিনি শোনেছেন, জমির কাগজপত্র তার রয়েছে,আদিবাসীরা জোর করে তার জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ৭৯, গুড়ইল মৌজায়, ১৫১ নম্বর খতিয়ানের ৫টি দাগে মোট ১০ একর ৩০ শতক সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তির মালিক মৃত গোপাল ভট্রাচার্যের পুত্র শিবদাস ভট্রাচার্য দিগর। কিন্তু ১৯৭০ সালে তারা স্বপরিবারে ভারত চলে গিয়েছেন। এর পর থেকে এসব জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে শান্তিপুর্নভাবে আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন।
গ্রামবাসী বলেন, দুখু হাজির মদদে শফিকুল ইসলাম ভুলু গং জাল দলিল সৃষ্টি করে এসব সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। তারা বলেন, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে আদিবাসী পল্লীতে এমন হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই আওয়ামী মতাদর্শী ভূমিগ্রাসীরা এমন জঘন্য কাজ করেছে।
এবিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তানোর থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসির) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দারা।#