মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) মোহর উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম জেঁকে বসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা দেখে যে কেউ হতবাক হবে। একটা মানসম্মত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমান কোনো সুযোগ-সুবিধাও এখানে নাই।
জানা গেছে ,বিগত ১৯৯৩ সালে রাজনৈতিক নেতার ইচ্ছে পুরণে রাজনৈতিক বিবেচনায় মোহর গ্রামে মোহর উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে স্কুল এমপিও ভুক্ত করা হয়। স্কুলে ১২ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, কম্পিউটার শিক্ষক রেহেনা খাতুন নিজেই তেমন কম্পিউটার চালাতে পারেন না বা দক্ষ নয়। এমনকি স্কুলে কোনো কম্পিউটার নাই। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার শিক্ষা (হাতে-কলমে) অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা বলেন, সরেজমিন তদন্ত করলেই এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও স্কুুুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া হয় না।এঘটনায় এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানাগার নাই। বিজ্ঞান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বসে বসে বেতনভাতা ভোগ করছেন। এছাড়াও লাইব্রেরী নাই, তবে লাইব্রেরিয়ান রুমা খাতুন বসে বসে বেতনভাতা ভোগ করছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।অভিভাবক মহল এসব শিক্ষকের এমপিও স্থগিতের দাবি করেছেন।
এদিকে স্কুলের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে গত বুধবার এলাকাবাসি ডাকযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা বলছে, কম্পিউটার শিক্ষক কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারলেও সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বসে বসে সরকারি বেতন-ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন শিক্ষক যেটা নীতিমালা পরিপন্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালায় বলা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষককে ওয়েবসাইট তৈরীসহ (অনলাইন)-এর যাবতীয় কাজ করতে হবে।এছাড়াও কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার অনুমোদিত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার}, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার বগুড়া}, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি মেহেরপুর, যুবউন্নয়ন অধিদপ্তর {মশরপুর নওগাঁ} এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট অর্জনকারীদের এমপিওভুক্ত করা যাবে বলে জানান ডিআইএ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, কম্পিউটার শিক্ষক কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারায় স্কুলের সিংহভাগ কাজ বাইরে থেকে করতে হয়। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের যেমন অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকটি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্কুলের উন্নয়নে বিপুল অঙ্কের টাকা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি টাকারও উন্নয়ন কাজ না করে এসব টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, কম্পিউটার শিক্ষক তেমন কম্পিউটার চালাতে পারে না এটা সত্য।তিনি বলেন, যন্ত্রপাতি রয়েছে তবে ঘরের সংকট থাকায় বিজ্ঞানাগার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ঘর না থাকায় লাইব্রেরী করা যাচ্ছে না। তবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
এবিষয়ে কম্পিউটার শিক্ষক রেহেনা খাতুন বলেন, কম্পিউটারের দু’একটা জটিল কাজ বাইরে থেকে করা হয় সত্য, তবে ক্লাস না নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#