নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁও: নিয়োগ পরিক্ষায় বিশেষ সুবিধাভোগ, যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন-জোরপূর্বক গর্ভপাত ও বিচারকের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আদালত চত্বরে দোকান ঘর লীজসহ অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের ড্রাইভার (গাড়ীচালক) মোকসেদুল রহমানের বিরুদ্ধে। আদালতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা তাঁর দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তি চেয়ে বিচার বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেন ড্রাইভার মোকসেদুল রহমান।
বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও উৎকোচের বিনিময়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চাকুরী নেন মোকসেদুল। চাকুরীতে যোগদানের পর থেকেই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সদ্য বিদায়ী বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেনের নাম ভাঙিয়ে আদালত চত্বরের ব্যবসায়ীদের থেকে অর্থ আদায় ও এক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বাজার সদাই করে নিয়ে বিদায়ী বিচারককে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আরো জানা গেছে, বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেনের নাম ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিয়ে চাকুরীর যোগদানের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় জরাজীর্ণ বসতভিটা থেকে দৃষ্টিনন্দন বাড়িসহ কয়েক বিঘা জমির মালিক বনে গেছেন তিনি। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদাধিকার বলে কর্মচারীদের পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হওয়ায় ড্রাইভার মোকসেদুল কর্মচারীদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে উক্ত বিচারকের কাছে সুপারিশের মাধ্যমে পদোন্নতি পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের ড্রাইভার মোকসেদুল রহমান বিচারকের নাম ভাঙিয়ে আদালত চত্বরে তাঁর বাবা নূর মোহাম্মদের নামে ফলের দোকান বরাদ্দ নিলেও পরবর্তীতে সেটি কম্পিউটারের দোকান হিসেবে ব্যবহার করেন। এবং ভগ্নিপতির নামে একটি দোকান ঘর ও তাঁর নিকটতম আত্মীয়ের নামে জজ কোর্ট ক্যান্ট্রিন লিজ নেয়।
দীর্ঘদিন জেলা জজ অনুপস্থিত থাকায় বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেন দায়িত্বে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আদালত চত্বরে অস্থায়ীভাবে বেশকয়েকটি দোকান ঘর গড়ে তোলার অনুমতি দেন মোকসেদুল। তাঁর একক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে লিজ নেয়া ব্যাক্তিদের বরাদ্দ বাতিল করে স্বজনদের নামে করে নেন। আর বরাদ্দ বাতিলকৃতরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে আদালত চত্বরে দোকান ঘর লিজ নিয়ে ব্যবসা করে আসলেও কেউ কোন কিছু বলেনি। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের লিজ বাতিল হয়ে যায়। ড্রাইভার মোকসেদুল জজ সাহেবকে ভুল বুঝিয়ে লিজ নেয়া দোকান ঘরের বরাদ্দ বাতিল করেছে বলে অভিযোগ তুলেন তাঁরা। এটা আমাদের সঙ্গে খুবই অবিচার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে যে অবিচার হয়েছে তা নতুন জজ মহোদয় দৃষ্টিতে নিবেন বলে আশা তাদের।
আরো জানা গেছে, আদালতে চাকুরী নেওয়ার পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন মোকসেদুল। যৌতুক না দিয়ে পরকিয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রী আফরোজা বেগমের উপর চলতো নিয়মিত নির্যাতন। এবং কি স্ত্রীর অমতে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটায় বলেও অভিযোগ ওঠে। নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলে নিরুপায় হয়ে তাঁর স্ত্রী বাবার বাড়িতে ৭লাখ টাকা এনে দিলেও থামেনি নির্যাতন।
মোকসেদুলের দাবি সে জজ সাহেবের ড্রাইভার যৌতুক লাগবে ২০ লাখ। পরে মারধর করে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বেরও করে দেয়। এসবের প্রতিবাদ করায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের বিচারকের এজলাস কক্ষে ডেকে জোরপূর্বক স্ত্রীকে তালাক দেয়। স্বামীর বিচার চেয়ে থানা-পুলিশের দারস্ত হয়েও পাননি বিচার। পরে কোন উপায় না পেয়ে যৌতুক ও পরকিয়ায় বাধা দেওয়ার কারণে স্ত্রীকে নির্যাতন, পুলিশ মামলা না নেওয়ার অভিযোগ ও স্বামী মোকসেদুল রহমানের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর স্ত্রীর পরিবার। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও বিচারাঙ্গণে যেন একটি ত্রাসের নাম ড্রাইভার মোকসেদুল রহমান।
অভিযোগকারীরা জানান, বর্তমানে ঠাকুরগাঁও বিচারাঙ্গণে যেন একটি ত্রাসের নাম ড্রাইভার মোকসেদুল রহমান। এমন কোন অপরাধ নেই যেটা সে করেনা। অন্যায়ভাবে কয়েকজন দোকানিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নিজের পরিবারের নামে দোকান বরাদ্দ নিয়েছে। ক্যান্টিনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় দেড় লাখ টাকা। সেটা আদালতের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এতো কিছুর পরেও কিভাবে সে বহালতবিয়তে থাকে? তাঁর সব অপরাধ কি মাপ।
যেখানে কোন কর্মচারী তাদের সারাজীবন চাকুরী করে একটি দোকানও বরাদ্দ নিতে পারেননি। সেখানে ড্রাইভার মোকসেদ পাঁচ বছরের চাকুরী জীবনে তার পরিবারের তিনজন সদস্যের নামে তিনটি দোকান বরাদ্দ পেয়ে গেল। অনুসন্ধান করলে পাঁচ বছরে সে কি কি করেছে তা সব বেড়িয়ে আসবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ড্রাইভার মোকসেদুল রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার নামে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহিন। একটি চক্র তাঁর বিরুদ্ধে লেগেছে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম জানান, এই আদালতে নতুন যোগদান করায় সেভাবে কিছুই বলতে পারছেন না। তবে ড্রাইভার মোকসেদুল রহমানের বিষয়ে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আবুল মনসুর মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে রিসিভ করেননি।#