ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা ও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়নের পলাতক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানকে আবারও চেয়ারম্যান পদে পুনর্বাসন করতে একটি গ্রুপ রাতের অন্ধকারে গোপন বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দারা।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিকদের এমন অভিযোগ করেন ইউনিয়নবাসী। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর ও যুবলীগের ক্যাডার বিনাভোটের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান যেন কোনভাবে ইউনিয়ন পরিষদে চেযারম্যান পদে পুনর্বাসন না হতে পারে সেজন্য গণমাধ্যম ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন ইউনিয়নের অন্যান্য বাসিন্দারা।
শুকানপুকুরী ইউনিয়নের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান আনিসুর রহমানের পক্ষে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। কাগজে কলমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হলেও বাস্তবপক্ষে তিনি ফ্যাসিস্টের দোসর ছিলেন। ভোটের নামে প্রহসন করে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। যার কারণে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদে আনিসুর রহমানও আত্নগোপনে চলে যায়।
তার কথা টেনে ধরে ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, যে চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। সে জনগণের কথা ভাবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি আমাদের দুর্ভোগে ফেলে আজও পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। আমরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি প্রতিনিয়তই।
তিনি আরও বলেন, জনগনের দুর্ভোগ কমাতে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করা হয়। প্যানেল চেয়ারম্যান-১ করা হয় ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুমন রানাকে এবং প্যানেল চেয়ারম্যান-২ করা হয় ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এরসাদ আলীকে।
এছাড়াও বাকি পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এখন পর্যন্ত বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান-১ খুব ভালোভাবে নাগরিক সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সহ আরও কিছু সদস্য তাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে একটি বিশৃঙ্খলার পায়তারা করছে এবং অর্থের লোভে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের দোসর ছাত্র আন্দোলনের মামলার আসামী যুবলীগের ক্যাডার আনিসুর রহমানকে চেয়ারম্যান পদে পুনর্বাসন করার গোপন বৈঠক করছে। যা ইউনিয়নবাসী কখনো মেনে নিবে না।
স্থানীয়রা জানায়, চলতি বছরের গত ১৩ জানুয়ারি নিজের সভাপতিত্বে এক ব্যক্তির বাড়িতে বসে গোপন বৈঠক করে রেজুলেশন করেন প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলী। সেখানেই অনস্থা আনেন বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের উপর। এটা স্পষ্ট ষড়যন্ত্র ও ফ্যাসিস্ট পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের পায়তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আরীর সঙ্গে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে সভা না করা এবং কোন ব্যক্তির বাসায় বসে সভা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি কেন পলাতক ও বিতর্কিত চেয়ারম্যানকেই পুনর্বাসন করতে চান এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বর্তমান দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।
এদিকে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানা বলেন, আমি জনগণের সেবা শতভাগ দিয়েছি এবং এখান থেকে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়াতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, গোপন বৈঠক করা হচ্ছে। এখানে যারা আমার বিরুদ্ধে অনস্থা এনেছেন তারা প্রত্যেকে আওয়ামী লীগের ইউপি সদস্য। আশা করি জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সঠিক বিচার করবেন।
এ বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ পরিচালক স্থানীয় সরকার(ভারপ্রাপ্ত) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, শুখানপুকুরি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২স্বাক্ষরিত একটি কাগজ পেয়েছি। যেখানে তিনি আগের চেয়ারম্যানকে বহাল রাখার আবেদন করেছেন। এটা আইনগত ভাবে তিনি করতে পারেন কিনা তা যাচা-বাছাই করা হবে। সেই সাথে সুষ্ঠু তদন্ত ও শুনানি শেষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#