1. admin@sobujnagar.com : admin :
  2. sobujnoger@gmail.com : Rokon :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:
সিংড়ায় মাদরাসা দারুস সুন্নাহ বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ সি ইউ সি সংগঠনের সামাজিক কর্মকান্ডে অবদান রাখায়  রোটারিয়ান ইফতেখার আলী বাবুকে সংবর্ধনা ডুমুরিয়ায় শওকত মোল্যা স্মৃতি উন্মুক্ত পাঠাগারের আয়োজনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি  অনুষ্ঠান  উপ-সম্পাদকীয়ঃ সীমান্ত হত্যা আর কত ! মোহনপুরে বাজার বণিক সমিতির সাথে জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা সভা ও সূধী সমাবেশ রূপসায় খান আলমগীর কবির স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্টের সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত অনিয়মঃ তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাচার রোধে হট্টগোল মারপিট গাইবান্ধা সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা মামলায় ,  গ্রেপ্তারী ওয়ারেন্ট বাঘায় নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচে হাজারো দর্শক পরমাণু বোমা ইরানের হাতের নাগালে

গ্রামোফোন কোম্পানিঃ এইচ. এম. ভি বা His Master’s Voice

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২
  • ১০৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

………..অর্বাচীন

‘গ্রামোফোন’-বাঙালি এককালে যাকে চিনতো ‘কলের গান’ নামে, তার অস্তিত্ব বেশ কয়েক দশক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। প্রায় আশি বছর ধরে বাঙালির গৃহ-বিনোদনের প্রধান উপকরণ ছিল কলের গান। বাঙালির সংগীত-সংস্কৃতির ইতিহাসেও গ্রামোফোনের গভীর সম্পর্ক রয়ে গেছে। গ্রামোফোনের কল্যাণে বাংলা গানেরও সেই সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতেরও প্রচার-প্রসার-রূপান্তর ঘটেছে। বহুকাল পর্যন্ত গ্রামকেন্দ্রিক লোকজগান ও ধর্মীয় সংগীত ছাড়া আর প্রায় সবধরণের সংগীতই বন্দি ছিল নবাব-নাজিম-রাজা-জমিদার-বিত্তশালী অভিজাতশ্রেণী কিংবা জাতে ওঠা শ্রেষ্ঠীর দরবার-জলসাঘর-বাগানবাড়ী-বৈঠকখানায়। এই অবস্থা থেকে সংগীতকে মুক্তি দিয়ে তা ক্রমে আমজনতার উপভোগের সামগ্রী করে তোলে গ্রামোফোন।

 

ছেলেবেলায় আমরা অনেক বনেদি বাড়িতেই এই কলের গান দেখেছি। শখ করে তা দেখতেও যেতাম। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখতাম, কীভাবে ঐ যন্ত্র দিয়ে গান বের হয়। পাড়ায় কারো বিয়ে-শাদী লাগলে দেখতাম, নিম গাছের মগডালে মাইক লাগিয়ে বাড়িতে রেকর্ড চালিয়ে গান বাজাতে। আবার গরুগাড়িতে কিংবা নৌকায় বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে যাবার সময় একটা গাড়িতে বা নৌকায় মাইক বসিয়ে রেকর্ড দিয়ে গান বাজানো হতো। সেসব এখন বিলুপ্তপ্রায়।

 

গ্রামোফোনের কল্যাণেই আবার অনেক নতুন সংগীতপ্রতিভার আবিষ্কার ও জন্ম সম্ভব হয়। বঙ্গদেশের কলের গানের আবির্ভাব ও গান রেকর্ডংয়ের রয়েছে শতবর্ষেরও বেশি সময়ের এক ঐতিহ্যময় ইতিহাস। এক অসম প্রতিযোগিতা-তবুও বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশি কোম্পানিও রেকর্ড তৈরি শুরু করে। এরকমই এক কোম্পানির কথা বলব আজ।

 

পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ট্রেডমার্ক কোনটি তা নির্ণয় করা সত্যিই কঠিন। তবেও আরো আশ্চর্য হতে হয় একটি কুকুর যদি কোন প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্রের টেডমার্ক হয়ে যায়! হ্যাঁ, সত্যিই তাই। হয়ত জন্তু হিসেবে প্রথম কোন যন্ত্রের ব্র্যান্ড অ্যামবাসেডর হিসেবে এই কুকুরের নাম সামনের সারিতে আসতেই পারে।

 

কুকুরটির নাম ‘নিপার’। টেরিয়ার কুকুর। যতটুকু জানা যায়, জন্ম ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে। কুকুরটি বলতে গেলে সারাটা জীবন কাটিয়েছিল গানবাজনার আবহাওয়ায়। ফ্রান্সিস ব্যারড নামের এক চিত্রশিল্পী এই কুকুরটিকে মডেল করে একটি ছবি আঁকেন যা একসময় উঠে আসে ইতিহাসেরই অংশ হিসেবে। কীভাবে তৈরি হলো এই ইতিহাস। আসুন জানি সেই গল্প।

 

ফ্রান্সিস ব্যারড ছিলেন এক চিত্রশিল্পী পরিবারের মানুষ। তার বাবা হেনরি, আর কাকা উইলিয়াম উভয়েই ছিলেন নামকরা চিত্রকর। তার দাদা মার্কও ছিলেন চিত্রকর। তারা থাকতেন ব্রিস্টলে। মার্ক ব্রিস্টলের প্রিন্সের থিয়েটারে ‘সিন’ আঁকতেন, মঞ্চসজ্জা করতেন। নিপার ছিল মার্কের প্রিয় কুকুর। মার্কের সাবক্ষণিক সঙ্গী ছিল এই কুকুর।

 

মার্কের সঙ্গে সঙ্গে নিপারও থিয়েটারে যেতো। মার্ক যখন কাজে ব্যস্ত থাকতেন, নিপার তখন সে মঞ্চের একপাশে ঘুমাত। অভিনয় শেষ হলে যখন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে মঞ্চে মার্কের ডাক পড়তো দর্শকদের থেকে অভিনন্দন নেয়ার জন্যে, তখন তার সঙ্গে নিপারও মঞ্চে উঠে পড়ত। এভাবেই গানবাজনা, অভিনয় জগতের সাথে নিপারের দিন কাটত।

 

মাত্র উনচল্লিশ বছর বয়সে ১৮৮৭ সালে মার্ক মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছোট ভাই ফ্রান্সিস নিপারের মালিক হন। তিনি নিপারকে তার স্টুডিও লিভারপুলের ল্যাঙ্কেশায়ারে নিয়ে আসেন।

 

ফ্রান্সিসের স্টুডিওতে ছিল একটি ফোনোগ্রাফ। এটি এমন এক যন্ত্র যা ধারণকৃত শব্দকে বাজানোর জন্য সেসময়  ব্যবহৃত হত। শব্দ ধারণের মাধ্যমটি ছিল চোঙ্গাকৃত বা চাকতির মতো। এই যন্ত্রটিও ফ্রান্সিস উত্তরাধিকারসূত্রে তার মৃত ভাইয়ের কাছ থেকে পান। ফ্রান্সিস প্রায় সময়ই লক্ষ্য করতেন, তিনি ফনোগ্রাফে তার ভাই মার্কের রেকর্ডকৃত কোন ভয়েস চালানো মাত্রই নিপার সেই ফনোগ্রাফের চোঙাকৃতি যন্ত্রটির সামনে বসে পড়ত। আর গভীর মনযোগ সহকারে সেই যন্ত্রটি দেখত। যন্ত্রটি থেকে বের হওয়া শব্দ নিবিষ্ট মনে সে শুনতে।

 

তারপর একদিন তিনি নিপারকে একটি ফোনোগ্রাফ যন্ত্রের সামনে বসিয়ে ছবি আকঁতে শুরু করেন। ১৮৯৮ সালে এই ছবির কাজ শেষ হয়। ফ্রান্সিস ১৮৯৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তার এই ছবি “Dog looking at and listening to a Phonograph” এই নামে রেজিস্ট্রেশন করেন। পরে তার নাম পছন্দ না হওয়ায় এই ছবির নতুন নাম দেন ‘His Master’s Voice’। এই ছবিটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন ফ্রান্সিস।

 

সে সময় ইংল্যান্ডে নানা কোম্পানির সিলিন্ডার রেকর্ড ও মেশিন খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ফ্রান্সিসের আশা ছিল কোনো ব্যবসায়ী ছবিটি নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন এবং তা কিনবেন। কিন্তু তার সেই চেষ্টা বৃথা গেল। ছবিটি কিনতে কেউ রাজি হল না। পরবর্তীতে ছবিটির জায়গা হলো স্টুডিওর এক কোণে।

 

সে সময় ফোনোগ্রাফের বদলে গ্রামাফোনের মেশিন বাজারে আসতে শুরু করেছে। টমাস আলভা এডিসনের আবিষ্কৃত ফোনোগ্রাফেরই উন্নত ব্রিটিশ সংস্করণ হচ্ছে এই গ্রামাফোন। ফ্রান্সিসের এক বন্ধু পরামর্শ দিলেন, বাজারে এক নতুন গ্রামোফোন মেশিন এসেছে। তার চোঙাটা পিতলের ফনোগ্রাফের মতো। ফ্রান্সিস তার ছবিটাতে কালো চোঙার বদলে যদি গ্রামোফোনের সোনালি চোঙা এঁকে দিতে পারেন, তাহলে ছবিটির জৌলুস বাড়বে এবং লোকেও হয়তো তা পছন্দ করবে।

 

সেই বন্ধুর পরামর্শে ফ্রান্সিস ছবিটির বদল ঘটালেন। তারপর ছবিটি নিয়ে গেলেন সেউডেন লেনের ছোট্ট এক অফিসে। অফিসটি ছিল সদ্য প্রতিষ্ঠিত গ্রামোফোন কোম্পানির বড়কর্তা উইলিয়াম ব্যারি ওয়েনের। শিল্প সমজদার হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। ফ্রান্সিস তার আঁকা ছবিটি উইলিয়ামকে দেখালেন। ওয়েন ছবিটি দেখে লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, ছবিটিতে যদি ফোনোগ্রাফ মুছে দিয়ে একটি গ্রামোফোন এঁকে দেওয়া হয় তবে তিনি একশ পাউন্ড দাম দিয়ে ছবিটি কিনতে রাজি আছেন।

 

ফ্রান্সিস তাই করলেন। সময়টা ছিল ১৮৯৯। তখন গ্রামোফোনের ডিস্ক রেকর্ডের লেবেলে একটি পরীর ছবি থাকতো। তার বদলে স্থান নিল ফ্রান্সিসের ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’। হিজ মাস্টার্স ভয়েজ ছবিটি রেকর্ডের লেবেলে অতি অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তখন বড় পোস্টার হাতেই আঁকা হত। কোম্পানি ফ্রান্সিসকে নিয়োগ করেছিলেন ঐ ছবিটির আরো কপি আঁকাবার জন্য।

 

১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ সালে গ্রামাফোন কোম্পানি ফ্রান্সিস ব্যারডকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ছবির জন্য একটি সম্মানী পত্র পাঠান। প্রতি পেইন্টিংয়ের জন্য ৫০ ডলার এবং সম্পূর্ণ কপিরাইটের জন্য ৫০ ডলার এই শর্তে ফ্রান্সিস চুক্তিবদ্ধ হন। ১৮৯৯ সালের ৪ অক্টোবর চুক্তিটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। ১৯০০ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রামাফোন কোম্পানির লোগো হিসেবে ছবিটি আত্মপ্রকাশ লাভ করে।

 

এইচ.এম.ভি (His Master’s Voice) এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, এই নিয়ে এক মজার ঘটনা না বললেই নয়। ‘দি গ্রামাফোন’ পত্রিকার সম্পাদক স্যার কম্পটন ম্যাকেনজি একবার ভারতবর্ষে বেড়াতে এসে নেপালে যান। তখন নেপালে বিমানপথ ছিল না। তাকে শেষ রেল স্টেশন থেকে পঁচানব্বই মাইল গরুর গাড়ীতে অতি কষ্টে গিয়ে কাঠমান্ডুতে পৌঁছতে হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিনি তার অতি পরিচিত ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েজ’ ট্রেডমার্কের বড় ডিসপ্লে দেখে অবাক হয়ে যান। হিমালয় বা মেরুপ্রদেশের বরফের রাজ্য-যেখানেই মানুষ আছে, গান-বাজনার সমাদর, রেকর্ড- রেডিওর প্রচার, সেখানেই পৌঁছেছে ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েজ’। তবে যতটুক জানা যায়, আরও একটি কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে নিপারকে ব্যবহার করেছিল। সেটি অবশ্য কোনো রেকর্ড কোম্পানি নয়, আর বিজ্ঞাপনটিও ঠিক ততটা জনপ্রিয় হয়নি।

 

ফ্রান্সিস  বৃদ্ধ হয়ে কাজ ছেড়ে দেবার পরেও এইচএমভি কোম্পানি তাকে ভুলে যায়নি। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন কোম্পানি তাকে নিয়মিত পেনশন প্রদান করেছে। ১৯২৪ সালে ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আর নিপার ১১ বছর বয়সেই মারা যায়। ব্যারড পরিবারের সবাই তাকে পরিবারের সদস্যের মতই ভালোবাসত। সে মারা গেলে স্টুডিও ঘরের পেছনের ছোট্ট বাগানে একটি মালবেরি গাছের নিচে তাকে সমাধি দেওয়া হয়েছিল।

 

একটি গ্রামোফোন মেশিনের সামনে বসা মার্কের আদরের কুকুর নিপারের ছবিটি যার নাম ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ বা সংক্ষেপে ‘এইচ এম ভি’ আজ নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত এক নাম। তার জনপ্রিয়তা এই সময়ে এসেও এতটুকুও কমেনি তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। বর্তমানে এইচ.এম.ভি (His Master’s Voice) সংগীত-বাণিজ্যে ৯২ বছরের এক ঐতিহ্যের অধিকারী রেকর্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

 

শিল্পী ফ্রান্সিসের আঁকা ছবির মধ্য দিয়ে তার প্রিয় কুকুর ‘নিপার’ হয়ে উঠলো গ্রামোফোন কোম্পানির ট্রেড মার্ক। এর সাথে নিপারকে আজ হয়তো সকলে ভুলে গিয়ে থাকতে পারেন, অথচ ট্রেড মার্ক  হিসেবে ‘নিপার’ কিন্তু বিখ্যাত হয়ে থেকে গেলো সকলের চোখের সামনেই। আর এভাবেই মানুষের সাথে ‘নিপার’ নামক এক কুকুরও স্মৃতি হয়েই বেঁচে রইল সে মানুষটার কীর্তির মাঝেই।# তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট