
# গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সরকারি খাস পুকুর ইজারায় গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদিত বাৎসরিক ইজারামূল্যের তুলনায় অনেক কম টাকায় ট্রেজারি চালান দেখিয়ে ইজারা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে বলে অভিযোগকারী দাবি করেছে। অনুমোদিত ইজারামূল্যের চাইতে কম টাকায় সম্পাদনকৃত ইজারা চুক্তি দলিল বাতিলের দাবি গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে গোদাগাড়ী উপজেলার সারাংপুর গ্রামের মোঃ মাহফুজুল বারী।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে সরকারি খাস পুকুরের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৬০টি। ১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার ৭৪৯টি খাস পুকুর ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজারা কার্যক্রমেই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ভূমি অফিস থেকে প্রকাশিত অনুমোদিত তালিকায় যেসব পুকুরের বিপরীতে নির্দিষ্ট বাৎসরিক ইজারামূল্য নির্ধারণ করা ছিল, বাস্তবে সে পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। বরং উপজেলা ভূমি অফিসের সাবেক সার্ভেয়ার মো. মোক্তারুজ্জামান নিজের ইচ্ছামতো কম টাকার ট্রেজারি চালান গ্রহণ করে ইজারা দলিল সম্পাদন করে দেন। নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, একটি পুকুরের ক্ষেত্রে যেখানে অনুমোদিত বাৎসরিক ইজারামূল্য ছিল ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা, সেখানে ট্রেজারি চালানে জমা দেখানো হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৫০ টাকা। আরেকটি পুকুরে ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা অনুমোদিত থাকলেও চালানে জমা দেখানো হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে অন্তত ৮৭টি খাস পুকুরের ইজারা অনুমোদিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে সম্পাদন করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, এসব অনিয়মের ফলে তিন বছরে আয়কর ও ভ্যাটসহ সরকারের প্রায় ৪৭ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগকারীদের দাবি। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ ও লিখিত অভিযোগ সুত্র বলছে, ইজারা অনিয়মের পেছনে একটি প্রভাবশালী ‘পুকুর সিন্ডিকেট’ কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার জাহানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. শরিফুল ইসলাম (বিশু)-এর নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক সার্ভেয়ার মো. মোক্তারুজ্জামানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমেই তিনি ইজারা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এর আগে মো. শরিফুল ইসলাম বিশু তার সহোদর ভাই মো. সেরাজুল ইসলামের মাধ্যমে গোদাগাড়ীর প্রায় ৩৬৭টি খাস পুকুর সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই রিটের নিষেধাজ্ঞাকে দীর্ঘদিন ব্যবহার করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৫৫টি খাস পুকুরের ইজারামূল্যের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ভুয়া ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে দলিল সম্পাদনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের একাধিক তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। এমনকি ৫৫টি ভুয়া ট্রেজারি চালানের বিষয়ে গত ২৯-১২-২০২৪ ইং তারিখ সোনালী ব্যাংক গোদাগাড়ী উপজেলা শাখা ম্যানেজার মোঃ সাইফুল ইসলাম উপজেলা প্রশাসনের নিকট প্রতিবেদন দিয়েছে। মো. শরিফুল ইসলাম বিশুর বিরুদ্ধে নওগাঁ, গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তিনি বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি বলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, অনুমোদিত দরের চেয়ে কম টাকায় সম্পাদিত সব ইজারা দলিল বাতিল এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাজস্ব আদায়ের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#