মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের নামে চলছে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের সাধারণ মানুষ আজ দুর্ভোগের ভুক্তভোগী। রাস্তাঘাট নষ্ট, খড়-কাদা জমে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি, উন্নয়নের নামে অর্ধেক কাজ, আর তার উপর স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা—সব মিলিয়ে চিত্র যেন এক ভয়াবহ বাস্তবতা।
স্থানীয়দের অভিযোগ—জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় কিছু ইউপি সদস্য (মেম্বার) উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বরাদ্দকৃত টাকা নয়ছয় করে আত্মসাৎ করছেন। ফলে সঠিকভাবে রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না, আর রাস্তাগুলো অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে পড়ছে। রাস্তার কাজ মানেই অনিয়ম: নিম্নমানের ইট, অর্ধেক কাজ, পুরো বিল সরকারি বিধি অনুযায়ী গ্রামীণ রাস্তায় এক নম্বর ইট ব্যবহারের কথা থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে দুই কিংবা তিন নম্বর মানের নিম্নমানের ইট। অনেক জায়গায় ২০০ ফুট বরাদ্দে মাত্র ৮০-১০০ ফুট রাস্তা করে দেখানো হচ্ছে কাজ সম্পন্ন। এমন চিত্র তানরে প্রায় সাতটি ইউনিয়নে। বাধাইড় ইউপির নয়টি ওয়ার্ডে একই চিত্র।
শিবরামপুর সাইধারা,পাঁচন্দর, কৃষ্ণপুর, কাচারীপাড়া, মাড়িয়া, একান্ত পুর, ঝিনাখোর বিভিন্ন গ্রামে এই অনিয়মের চিত্র স্পষ্ট। সলিং করা রাস্তা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উঠে যাচ্ছে ইট, ভেঙে যাচ্ছে পাশের সীমানা বাঁধ।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, “এক নম্বর ইট কোথায়! মাটি ফেলে, খারাপ ইট দিয়ে কাজ করছে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে পুরো রাস্তা। অথচ বিল উঠছে পুরো টাকার।” পাকা রাস্তায় ধানের খড় আর কাদা: নষ্ট হচ্ছে সরকারি স্থাপনাও শুধু কাঁচা রাস্তার দুরাবস্থাই নয়, এখন তানোর উপজেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়কও নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের খড় ফেলার কারণে। ধান কেটে নেওয়ার পর কৃষকেরা খড় শুকাতে পাকা সড়কের ওপর তা ফেলে রাখছেন। এরপর বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে রাস্তার পিচ ও ঢালাই উঠে যাচ্ছে। বিশেষ করে তানোর- আমনুরা, তানোর-পাঁচন্দর, মুণ্ডুমালা থেকে করিমপুর হয়ে শিবরামপুর দিয়ে জুমারপাড়া পর্যন্ত সড়কে প্রতিনিয়ত খড় ও কাদার কারণে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও ট্রাক্টর, ভ্যানগাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মোহাম্মদ আলী বলেন— “পাকা রাস্তা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু খড় ও কাদার কারণে সেটাও এখন চলার অযোগ্য। দিনরাত গাড়ি বিকল হয়, দুর্ঘটনা হয়, কিন্তু কেউ দেখছে না।” প্রশাসন দেখেও দেখছে না: প্রশ্ন জনসচেতনতা ও জবাবদিহিতার জনগণের মাঝে অভিযোগ উঠেছে, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র পরিষ্কার হলেও স্থানীয় প্রশাসন কার্যত নিরব। রাস্তায় প্রতিদিন খড় পড়ে থাকলেও কোনো অভিযান নেই, রাস্তার কাজে দুর্নীতি হলেও নেই কোনো তদন্ত, বিল তোলার আগে নেই সঠিক যাচাই। বিষয়টি নিয়ে অনেকে বলছেন—জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রশাসনের “অঘোষিত সমঝোতা”র কারণেই এসব অনিয়ম প্রকাশ্যেই চলতে পারছে।
প্রশাসনের বক্তব্য: তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. লিয়াকত সালমান এই প্রতিবেদককে বলেন “রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজের মান নিয়ে আপস করা হবে না। যদি কোথাও বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ না হয় বা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার হয়, তাহলে বিল আটকে দেওয়া হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন— “পাকা রাস্তায় খড় বা কাদা ফেলার মতো কর্মকাণ্ডও বন্ধে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছি। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#