চৌধুরী নুপুর নাহার তাজ
সংবাদশ্রমিক মে দিবস—শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক, প্রতিরোধ আর সংগ্রামের ইতিহাস বহন করে। এই দিনে সারা বিশ্বে শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা হয়, সম্মান জানানো হয় তাঁদের শ্রমকে। কিন্তু এই দিনটিতেও একদল শ্রমজীবী মানুষের কথা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়,তাঁরা মফস্বল সাংবাদিক, যাঁরা নীরবে, নিরলসভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর সংগ্রহ করে পৌঁছে দেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে।
মফস্বল সাংবাদিকরা প্রকৃত অর্থেই সমাজের নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, নিপীড়ন আর মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র তুলে ধরেন। অথচ তাঁদের অধিকাংশই কাজ করেন বিনা পারিশ্রমিকে, কিংবা সামান্য কিছু সম্মানীর বিনিময়ে। যা তাদের জীবনের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম মফস্বলের প্রতিনিধিদের “অফিশিয়াল” স্বীকৃতি দেয় না। ফলে তাঁরা থাকেন আইনি সুরক্ষা ও কর্মজীবী সুযোগ-সুবিধার বাইরে। নেই স্বাস্থ্যসেবা, নেই ঝুঁকি ভাতা। অথচ মাঠে তাঁরাই প্রথম ছুটে যান। বন্যা হোক, অগ্নিকাণ্ড হোক কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা। পকেটের টাকায় যাতায়াত, নিজের ফোনে খরচ করে ছবি পাঠানো, রিপোর্ট লেখা,সবই যেন তাঁদের নিত্যদিনের রুটিন।
তবুও তাঁদের অভিযোগ কম, দায়বদ্ধতা বেশি। কতজন জানেন, অনেক মফস্বল সাংবাদিক আজও জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা ছাড়াই দিন পার করছেন? কেউ কেউ পেশা বদলে ফেলেছেন, কেউ কেউ হারিয়ে গেছেন নিশ্চুপ অভিমানে। অথচ তাঁদের হাত ধরেই অনেক জাতীয় সংবাদ জন্ম নেয়।
মে দিবস তাই শুধুই কারখানার শ্রমিক, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিকের নয়—এটি মফস্বল সাংবাদিকদেরও দিন। যাঁরা প্রতিদিন খবরে প্রাণ দেন, অথচ থাকেন অন্তরালে। তাঁদের শ্রম, ত্যাগ আর সাহসকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। আজকের দিনে তাই একটাই কথা বলতে ইচ্ছে করে মফস্বল সাংবাদিকরাও শ্রমিক, এবং তাঁদের শ্রমের মর্যাদা ও ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়া তাঁদের অধিকার।#