লিয়াকত হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক..
রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত -২ এ হোসেন আলী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আসামী করা হয়েছে নগরীর প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান শিশিল, মাহমুদ হাসান লিমন, তন্ময় হোসেন, বোয়ালিয়া মডেল থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) আমিরুল ইসলাম, বোয়ালিয়া মডেল থানার তৎকালীন এসআই আব্দুল আওয়াল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক ও আইএফআইসি ব্যাংক রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপককে। মামলা নম্বর ১৬৭/২৫ , মামলা যেসব ধারায় করা হয় তা হলো- ৩৪/১০৯/৪০৬/৪২০/৩৮০/৪৬২(ক)/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১।
মামলার বিবরণীতে বাদি হোসেন আলী উল্লেখ করেছেন সে পুরাতন সোনা কেনা-বেচা, প্লট, জমি কেনা-বেচাসহ সিনিজানাল সবজির ব্যবসা করেন। এবং মামলার ১ নং আসামি মাহমুদ হাসান শিশিল তার এক সময়ের বন্ধু আর ২ নং আসামি মাহমুদ হাসান লিমন ও ৩ নং আসামি তন্ময় হোসেন তার কর্মচারী ছিলো এবং তার বাসার বাজার-হাট করে দেওয়া ও তার বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়া করত সেই সাথে তার ব্যাংকি লেনদেন ও পরিচালনা করতো।
মামলার বিবরণীতে আরও উল্লেখ করেন আসামিগণ যোগসাজশ করে আমাকে পুলিশ দিয়ে অস্ত্র ও মাদক সহ ধরিয়ে দেয় এবং আমার অনুপস্থিতে আমি জেলে থাকা অবস্থায় আমার ব্যাংক থেকে আমার স্বাক্ষর জাল করে কয়েকটি চেকে মোট ৩৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নেয়। মামলার বিষয়ে আসামী পক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায়,এই হোসেন আলী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত আসামি ডাবলহ্যান্ড স্যুটার রুবেলের সহযোগী। ৫ আগষ্টের একটি ছবিতে তাকে দেখা যায় পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং হত্যা মামলার আসামি পরবর্তীতে ১০ আগষ্ট ছাত্র জনতার হাতে প্রাইভেট কারে দেশীয় অস্ত্র ও মাদক সহ আটক হয়।সেই ভিডিও সারা দেশে ব্যাপক ভাইরাল হয়। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন বোয়ালিয়া মডেল থানার তৎকালীন ওসি তদন্ত আমিরুল ইসলাম ও এসআই আব্দুল আওয়াল।
এছাড়াও আসামী পক্ষের মাধ্যমে জানা যায় হোসেন আলী নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করলেও সে ছিলো এই মামলার আসামী মাহমুদ হাসান শিশিলের বেতন ভুক্ত ম্যানেজার। শিশিল ঠিকাদারি সহ মেডিকেল যন্ত্রপাতি আমদানি করে পাইকারী বিক্রি করে। এই ব্যবসায় হোসেন আলী নগরীর বিভিন্ন সার্জিক্যাল দোকানে মাল বিক্রি ও টাকা কালেকশন করতো। এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে টাকা নিয়ে শিশিলের একাউন্টে জমা না করে নিজের একাউন্টে জমা করতো বিষয়টি যখন মাহমুদ হাসান শিশিল জানতে পারে তখন হোসেনের সাথে হিসাব নিকাশ করে পাওনা টাকা পরিশোধের সময় দিয়ে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
হোসেন যে সকল টাকা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে নিয়েছিলো সেই টাকা চেকের মাধ্যমে তার বউকে দিয়ে পরিশোধ করায়। হোসেন যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে টাকা নিজের একাউন্টে নিতো তার প্রমাণ স্বরুপ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর টাকা জমা রশিদের ফটোকপি শিশিলের নিকট সংরক্ষিত আছে এমনকি তার ব্যাংক স্টেটমেন্টে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে মামলার ১ নম্বর আসামী মাহমুদ হাসান শিশিল বলেন -“হোসেন আলী ২০১৭ সাল থেকে আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো, তাকে প্রতিমাসে ৭০০০ টাকা করে বেতন দিতাম এবং তার মেয়ের পড়ার খরচ বাবদ ৫০০০ টাকা দিতাম, পরবর্তীতে তার আচরণ সন্দেহজনক লাগে এবং আমি জানতে পারি সে আওয়ামী লীগের নেতা রুবেলের সাথে চলাফেরা করে। একপর্যায়ে সে রুবেলকে দিয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সে রুবেলের সহযোগী হিসেবে ছাত্র জনতার ওপর হামলায় অস্ত্র হাতে ছবি ভাইরাল হয় এবং কয়েকদিন পরেই তাকে গাড়িতে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ ছাত্র জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। সে এই মামলাটা করেছে সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট এবং আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য। সে একজন অকৃতজ্ঞ মানুষ তার বাবা অসুস্থ হলে আমি তার বাবার সম্পুর্ন চিকিৎসা খরচ বহন করেছি। আমার নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে জেনে আমি হতবাক হয়ে গেছি, আশা করি পুলিশ সঠিক তদন্ত করবে।
মামলার বিষয়ে ২ নম্বর আসামী মাহমুদ হাসান লিমন বলেন “হোসেন আমাদের সাথে চাকরি করতো, মাল বিক্রির টাকা অফিসের ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের একাউন্টে জমা দিতো বিষয়টি জানতে পারলে আমরা তার সাথে হিসাবে বসি এবং হিসাব করে দেখি সে প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে সেই টাকা পরিশোধের জন্য বললে সে তার স্বাক্ষরিত করা চেক তার স্ত্রীর মাধ্যমে আমাদেরকে প্রদান করে এবং তার স্ত্রী বলে আপনারা চেক দিয়ে টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন। তার নিকট আরও টাকা পাওনা আছে।
লিমন আরও বলেন ” ৭০০০ টাকার বেতনভুক্ত কর্মচারীর একাউন্টে এতো টাকা কিভাবে আসলো একটু সঠিকভাবে তদন্ত করলেই টাকা গুলো কার সেটা প্রমান হবে”, সে একজন সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্ত। এছাড়াও তার নামে ডাকাতিসহ একাধিক মামলা আছে। হোসেন আলীর এলাকায় খোঁজ জানা যায়, হোসেন আলী এক সময় তার বাপের দোকান জালিয়াতি করে সাহেব বাজারের একজন কাপড়ের দোকানদারের নিকট বিক্রি করে দেন এছাড়াও সে দীর্ঘদিন এলাকার মিসকি আলম নামের একজনের বাসায় ভাড়া থাকতো ঠিক মতো ভাড়া পরিশোধ না করার জন্য তাকে বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। মামলায় স্বাক্ষী হিসেবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা সকলেই তার পরিবারের। তার স্ত্রী শিশু কন্যা ও তার শ্বাশুড়ি। একজন শিশু মামলার বিষয় কতটুকু জানে যে তাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে তাছাড়া তার শ্বাশুড়ি ঢাকায় থাকে দীর্ঘ দিন থেকে সে রাজশাহীতে আসেনা এমনকি হোসেন জেলে থাকা অবস্থায় তাকে দেখতেও আসেনি।
বদলি হবার কারনে মামলার ৪ ও ৫ নং আসামী তৎকালীন ওসি তদন্ত আমিরুল ইসলাম ও এসআই আব্দুল আওয়ালের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মামলার অপর দুই আসামী ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহী শাখার ব্যাস্থাপক ও আইএফআইসি ব্যাংক রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান “নিয়মানুযায়ী চেক মারফত টাকা উত্তোলন করেছে তারপরও যেহেতু মামলা হয়েছে আমরা হেড অফিসে জানিয়েছি হেড অফিসের আইন বিভাগ যে দিক নির্দেশনা দিবে আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিব।
মামলার বিষয়ে বাদী হোসেন আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার বিষয়ে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল জানান, এধরণের মামলা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই তাছাড়া মামলার কাগজপত্র এখনো আমরা হাতে পায়নি। হাতে পেলে আদালতের নির্দেশানা মোতাবেক কাজ করবো।