1. admin@sobujnagar.com : admin :
  2. sobujnoger@gmail.com : Rokon :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ:
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছুটা সফলতা দেখালেও এখন পর্যন্ত তা রয়েই গেছেঃ জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব- আখতার হোসেন উপ-সম্পাদকীয়: সর্বনাশা কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হোক ভোলাহাটে হাঁড় কাঁপানো শীত, সরকারিভাবে দেখা মেলেনি  গরম কাপড়-চোপড়ের ভোলাহাটে থানা পুলিশের মাসিক আলোচনা সভা মান্দায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত  রাজশাহীতে কোরিয়ান কোচের অধীনে ক্রীড়া উচ্চতর তায়কোয়ানদো প্রশিক্ষণ সমাপ্ত গোদাগাড়ীতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা    গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষে ১৩ জন আহত চসিক মেয়রের সঙ্গে চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ গাইবান্ধার  পলাশবাড়ীতে আওয়ামীলীগের নেত্রী হয়ে গেলো জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি

উপ-সম্পাদকীয়: সর্বনাশা কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হোক

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

৥ মোঃ আলফাত হোসেন৥

বাংলাদেশের ক্রম বর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে অন্যদিকে পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষায় বেড়েছে কীটনাশকের ব্যাবহারও।

কিন্তু আশঙ্কাজনকভাবে ৯০ এর দশক থেকে বর্তমান সময়ে এসে দেশে কীটনাশকের ব্যাবহার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকরা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না,ফলে জীববৈচিত্র্য  প্রকৃতি যেমন হুমিকির মুখে ঠিক তেমনি আজ আমরা মানুষ জাতি ভয়াবহ বিপর্যস্ত।

আধুনিক বা উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের কৃষি। বর্তমান সময়েও কৃষির সঙ্গে অনেক তরুণ জড়িত হচ্ছে ভাগ্যের চাকা বদলানোর আশায় এবং অনেকে শখ করে শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে এই পেশাকে জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমানে অল্প সময়ে লাভবান হওয়ার জন্য কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হরেক রকমের রাসায়নিক সার। কৃষি ফসল যাতে বিনষ্ট না হয় বা পোকামাকড়ে যাতে আক্রমণ না করে, সেজন্য ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। ফলে কৃষক ফসল বাঁচানোর জন্য বা পোকামাকড় দমন করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত হারে কীটনাশক ব্যবহার করছে, যা মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকারক এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে ফসলের উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে। কীটনাশকের কারণে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা,বাগেরহাট  উপকূলীয় অঞ্চলে বহু খাল,বিল,নদী-নালা-হাওর  মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বহু প্রজাতির পাখি অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফসল রক্ষাকারী পোকামাকড় ধ্বংস হওয়ার কারণে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে।

কৃষিজমি বিশেষ করে ধানের জমিতে একসময় শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছ দেখা যেত। এখন এগুলো একেবারেই অনুপস্থিত। প্রকৃতির লাঙ্গল বলা হয় যে কেঁচোকে, তাও এখন আর কৃষিজমিতে পাওয়া যায় না। ফসলের জমিতে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য পাখপাখালির বিচরণ এখন কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ফসলের মাঠে ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত ভ্রমর আর মৌমাছির গুঞ্জনও কমে গেছে নানা রকম বিষাক্ততায়। এছাড়া কৃষি পরিবেশে বিদ্যমান নানা রকম সরীসৃপ আজ বিলুপ্তপ্রায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে প্রবেশ করায় মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। নানা ধরনের ফলমূলে রাসায়নিক পাউডার দিয়ে কাঁচা ফল পাকানো হচ্ছে, এমনকি টমেটো পর্যন্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় টসটসে করে পাকানো হচ্ছে। শুঁটকি মাছে ডিডিটি পাউডার ব্যবহারের কথা শুনা যায়। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে জমির উর্বরতা ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক।

মাত্রাতিরিক্ত এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির গুণাগুণ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি। আবার জমিতে ব্যবহƒত এসব কীটনাশক বন্যার পানিতে মিশে চলে যায় খাল-বিল-জলাশয় বা বিভিন্ন নদ-নদীর পানিতে। ফলে এসব পানি ক্রমেই বিষাক্ত বা দূষিত হচ্ছে এবং এতে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। আবার এসব বিষাক্ত পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নানা ধরনের রোগজীবাণু সৃষ্টি করছে। এসব কীটনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।

বিগত কয়েক দশক ধরে দেখা যাচ্ছে, আগের মতো বিলে-ঝিলে মাছ পাওয়া যায় না এবং সামান্য কিছু মাছ পাওয়া গেলেও আগের মতো স্বাদ পাওয়া যায় না। এর একমাত্র কারণ কীটনাশক ব্যবহারে পানির দুর্গন্ধ বা দূষিত হয়ে পড়ছে, ফলে পানির মাছ মারা যাচ্ছে। আবার খাল-বিলের পানিতে এখন মাছ খুব একটা বড় হয় না এবং আগের মতো সব ধরনের দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাজারে যেসব চাষের মাছ পাওয়া যায়, সেগুলোর পুষ্টিগুণ একেবারেই নেই। দেশীয় মাছের বৃহত্তম উৎস নদীনদী-খালবিলে এখন প্রাকৃতিকভাবে মাছ খুব কম হয়। এর প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার।

মানুষ কারণে-অকারণে জেনেশুনে এসব কীটনাশক ব্যবহার করছে। এসব কীটনাশক বাজারে সহজলভ্য এবং কম দামে পাওয়া যায়। ফলে কৃষক ফসল বাঁচাতে কিংবা ফসল টাটকা রাখতে অবাধে ব্যবহার করছে এসব কীটনাশক। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা এসব কীটনাশক ব্যবহারে কৃষককে উৎসাহিত করছে এবং অনেক সময় বিনা মূল্যে সরবরাহ করছে। কৃষক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে যাচ্ছে এসব বিষাক্ত কীটনাশক।

সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগরের পূ্র্ব কৈখালী গ্রামের একজন কৃষক বলেন,আমার অসম্ভব মাথাভার লাগছিল,সাথে বমি ও হচ্ছিল, আমি কিছুই যেন দেখতে পাচ্ছিলাম না”, অক্টোবর মাসের শেষ সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আইসিইউ)-এর একটি বিছানায় চিকিৎসাধীন মিকাইল হোসেন আমাদের বলেন, তাঁর পেছনে তাঁর পিতা-মাতা চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর গ্রামের গ্রাম্য ডাক্তার রুহুল আমীন লক্ষ্মণ বলেন, “সেইদিন সন্ধ্যায় তাকে আমরা তড়িঘড়ি হাসপাতালে পাঠাই। এইজন্যই সে যাত্রা তিনি প্রাণে বেঁচে যান। হাসপাতালে যাইতে আর একটু বিলম্ব হলেই তা মারাত্মক প্রমাণিত হত। মিকাইল পণ করেছেন, এই জীবনে আর কখনও কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করবেন না; মিকাইল ভুগছিলেন পেশির খিঁচুনিতে। বিপদ কেটে গেলেও আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন,গ্রামে এমন আরো কয়েকজন রোগী তাঁরা মিকাইলের অসুস্থতা মনে করে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। যখন আমরা তাঁর সাথে কথা বলেছিলাম, সেইসময়ে তিনি পুরো দুই সপ্তাহের জন্য হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

১৯ বছরের কৃষি শ্রমিক মিকাইল হোসেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন; সঙ্গে ছিলেন তাঁর উদ্বিগ্ন মা-বাবা

তিনি বাংলাদেশে প্রস্ততকারক কোরিয়ান ড্রাম তৈরি হাতে চালিত স্প্রে-পাম্প ব্যবহার করেছিলেন – মেশিনটির মাধ্যমে স্প্রে করা সহজ হলেও এবং কাজটি ঝটপট করে ফেলা গেলেও – কীটনাশক বহুগুণ বেশি বিপজ্জনক। এই মেশিন খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি কীটনাশক স্প্রে করে,মিকাইল বলেন।

এসব কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। কৃষককে প্রাকৃতিক উপায়ে কীটনাশক তৈরি করে কৃষিজমিতে ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক কীভাবে তৈরি করতে হয় তার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষকের ফসল উৎপাদনে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে হবে, যাতে কৃষক প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল লাভ করতে পারে।

পরিশেষে সব ধরনের কীটনাশকের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রিতে তদারকি বাড়াতে হবে এবং যততত্র এসব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। মানবশরীর ও জীববৈচিত্র্যের জন্য এসব কীটনাশকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্বন্ধে কৃষককে বোঝাতে হবে। এসব কীটনাশক ছাড়াও যে সুন্দর ও পুষ্টিকর ফসল উৎপাদন সম্ভব, তা প্রচার করতে হবে এবং কৃষককে বোঝাতে হবে। তাছাড়া একটি ফসল বাঁচাতে হাজার হাজার জীব ও প্রাণীর মৃত্যুসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে হয় এবং জীববৈচিত্র্যের জীবনপ্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অনুনমোদিত রাসায়নিকের এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার রুখবার কোনও উপায় নেই,আমি মনে করি উপায় আছে সরকারের পাশাপাশি এনজিও প্রতিনিধি ছাড়া সকল সচেতন নাগরিকের সচেতনতা ও কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম জানাতে হবে সকল ধরনের চাষী-কৃষকদের তাহলেই রুখে দেওয়া সম্ভব সর্বনাশা কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করা। #  লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট,

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট