বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় বিনম্রচিত্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় শহীদ বীর সেনানীদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে পুস্পস্তবক অর্পন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা, হাসপাতাল, শিশুসদন, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন, বিজয় মেলা, পার্ক,জাদুঘর বিনা টিকিটে শিশুদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। এছাড়াও স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলা ধূলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের সঙ্গে সঙ্গে বিজয় উৎসবেও মেতে উঠে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা প্রাপ্তির ঐতিহাসিক দিন ১৬ ডিসেম্বর। জাতির প্রত্যাশিত রাষ্ট্র সংস্কার এবং দুর্নীতি ও নির্যাতন-নিপীড়নমুক্ত দেশ গঠনের দাবিটিও বিজয়ের নানা কর্মসূচিতে উচ্চারিত হয়েছে জোরেশোরে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে হারানো স্বজনের জন্য কেঁদেছে স্বজন। রক্তাক্ত পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্ম সমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণ।
দেড় দশক পর উৎসবের সমারোহে ৫৪ তম মহান বিজয় দিবসেবিজয উল্লাস করেছে বিএনপি-জামায়াত। পুস্পস্তবক অর্পন,আনন্দ র্যালি করেছে তারা। এতে অংশ নেয় দলটির হাজারো নেতা কর্মী। হাতে ও মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে বিজয় র্যালিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। দুইভাগে বিভক্ত হয়ে বিজয় র্যালি করেছে বিএনপি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শূভসূচনা লগ্নে শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান উপজেলা প্রশাসন,উপজেলা পরিষদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা,বাঘা থানা পুলিশ, বাঘা ও আড়ানী পৌরসভা,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সামাজিক সংগঠন,নাটোর পল্লীবিদুৎ সমিতি-২ এর জোনাল অফিস, বাঘা প্রেস ক্লাব, সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসসহ পেশাজীবি সংগঠন,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী দলসহ সর্বস্তরের জনগণ ।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গৃহিত কর্মসুচিতেও ছিল- সকাল সাড়ে ৯ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন। উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে আনুষ্ঠাকিভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সকাল ১১ টায় আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলার (চারু কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য) উদ্বোধন শেষে মেলার স্টল ঘুরে দেখেন-উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার,সহকারি কমিশনার (ভ’মি) সাবিহা সুলতানা ডলি,অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফম আসাদুজ্জামান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনাঅফিসার ডাঃ আশাদুজ্জামান,উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ফকরুল হাসান বাবলু,সহকারি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন,বীর মুক্তি যোদ্ধা জনাব আলী, উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিসার রাজন দাস সহ উপজেলা পরিষদের দপ্তর প্রধান।
উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক, সুশিল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ। সুবিধাজনক সময়ে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। হাসপাতাল, শিশুসদন, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন,বিনা টিকিটে শিশুদের পরিদর্শনের জন্য পার্ক,জাদুঘর উন্মুক্ত রাখা হয়। এছাড়াও স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলা ধূলার আয়োজন করা হয়।
শাহদৌলা সরকারি কলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কলেজ চত্বর শহীদ মিনারে ষ্পস্তবক অর্পন, জাতির শান্তি অগ্রগতি কামনা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আতœার শান্তি কামনা করে দোয়া মাহফিল ও খেলা ধূলাসহ সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়া। পরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরুস্কার বিতরন করা হয়।
এর আগে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাদ। অনুষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ জানিয়েছে, দেশের গান ও সংস্কৃতি তুলে ধরা এবং নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান খান মানিক বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসনের পতন ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন অভিযাত্রার প্রেক্ষাপটে এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল। বিএনপির আরেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যাচার, অনাচারের কারণে গত দেড় দশক মানুষ বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারেনি। উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবার স্বৈরাচারমুক্ত দেশে সবাইকে নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।’#