# মোঃ ফিরোজ আহমেদ, আত্রাই প্রতিনিধি……………………………………………
নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় গত ১৫ সালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের ফলে ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী শাহাগোলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বন্যায় বিধস্ত হয়। বাঁধটি বিধস্ত হওয়ার র্দীঘ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও করা হয়নি নতুন সংস্কার। দীর্ঘ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও যখন এই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধটি সংস্কারে কোন দপ্তরের মাথা ব্যাথা নেই ঠিক তখনই স্থানীয়দের কাছে প্রশ্ন জাগে আসলে বাঁধটি সংস্কারের দায়িত্ব কার? বাঁধটি সংস্কারের জন্য স্থানীয়রা ইউনিয়ন পরিষদের দপ্তরে গেলে তারা বলেন বাঁধটি সংস্কারের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গেলে তারা বলে এটি ইউনিয়ন পরিষদে। এভাবেই সময় গড়িয়ে ৮টি বছর অতিবাহিত হলেও আজও সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এ বেঁড়ি বাঁধটি।
বাঁধটি সংস্কার না করার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই সারাটা বছরজুড়ে জলাবদ্ধতার মাঝে থাকতে হয় ফুলবাড়ী ও পূর্ব মিরাপুরের প্রায় হাজারো পরিবারকে। যাতায়াতের জন্য নৌকা হচ্ছে তাদের এক মাত্র অবলম্বন। বর্ষা মৌসুম ওই এলাকার হাজার হাজার কৃষক তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে জীবন যাপন করতে হয়। গত ১৫ সালের ২৩ আগস্ট ভোর রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আত্রাইয়ের ফুলবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার পর মির্জাপুর নামক স্থানে আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক ভেঙ্গে আশপাশের এলাকার শত শত বিঘা ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সাথে এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। এতে আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রায় ২ মাস পর বন্যার পানি নেমে যায়।
এদিকে বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার ৮ বছর অতিবাহিত হলেও আজও ভাঙ্গন মেরামতে কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। এ ভাঙ্গন মেরামত না করায় যোগাযাগের অত্র এলাকাবাসী চরম দুর্ভাগ পোহাতে হচ্ছে রাইপুর, ডাঙ্গাপাড়া, ফুলবাড়ি, পূর্বমিরাপুর, উদনপৈ মিরাপুর’সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার ভবানীপুর-মির্জাপুর হাটে যাতায়াতের জন্য এ পথই ব্যবহার করতে হয়। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ পথ দিয়েই হাট বাজারে নিয়ে আসতে হয়। বন্যায় বাঁধ বিধস্ত হওয়ার পর থেকে তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এদিকে বাঁধটি মেরামত না করার ফলে আগামী বন্যা মৌসুমে আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পরবে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
উদনপৈ গ্রামের সাবেক মেম্বার জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা এ ভাঙ্গন মেরামতের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারসহ এলাকার জনগণ বিভিন্ন মহলে অনেক বার অনেকের কাছেই ধর্না দিয়েছি। সকলেই আশ্বস্ত করলেও আজও মেরামত না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের আগেই সেখান পানি বন্ধী হয়ে পড়তে পারে অসংখ্য পরিবার। বর্তমানে বাঁধটি মেরামত না করার ফলে আমরা আমাদের কষ্টের ফসল নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছি। ফুলবাড়ি গ্রামের ডা.জিতু খন্দকার বলেন, আসন্ন বন্যা মৌসুমের আগে বাঁধটি মেরামত না করার ফলে আমাদের মাঠে কোন আবাদ করতে পারিনি। কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা ও জেলা শহরের সাথে যোগাযাগের দিন দিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের কয়েকটি গ্রামবাসীকে। তিনি দ্রুত বাঁধটি নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
ভবানীপুর জিএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, গত ১৫ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফুলবাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার ফলে এ রাস্তার উপর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধটি সংস্কার করা অতিব জরুরী। এ বিষয়ে সাহাগোলা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মামুনুর রশিদ বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি সংস্কার না করার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোমলমতি শিশু, বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে। তিনি আরোও বলেন, বাঁধটি সংস্কার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে নওগাঁ পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফাইজুর রহমান বলেন, আমার জানামতে আত্রাইয়ের ফুলবাড়ি নামক স্থানে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বাঁধ নেই। তবে আগে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় বাঁধটি নির্মাণ করেছিলো। বাঁধটি কোন দপ্তরের আওতাই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতায়।#