আলিফ হোসেন, তানোর………………………………………………………..
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মাঠে নেমেছেন উপজেলা যুবলীগের অর্থ- বিষয়ক সম্পাদক, দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও তরুণ শিল্পপতি বেলাল উদ্দিন সোহেল। ফলে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে এবার মনোনয়ন যুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জের মূখে পড়তে হয়েছে বলে মনে করছে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে নেতিবাচক দিকও কম নয়। ফলে যেখানে এক সময় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী নেতৃত্ব এবং ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। এখন সেখানে তাকেই টেক্কা দিতে মাঠে নেমেছেন তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর তৃণমুলের নেতা দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল। ফলে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সুখের ঘরে এখন দাউ দাউ করে দুঃখের আগুন জ্বলছে বলে মনে করছেন তৃণমুলের নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এই দুই নেতা দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেছেন। তাদের তৎপরতায় আওয়ামী লীগে স্পষ্টত বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধীতা করে বেলাল উদ্দিন সোহেলের সঙ্গে প্রকাশ্যে মাঠে সরব স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একাধিক জৈষ্ঠ নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ। এদিকে পরিস্থিতি উপলব্ধি করে এলাকায় ঘন ঘন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে তৃণমূলের কাছে থেকে আশাব্যঞ্জক সাঁড়া পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। রাজনীতিতে নিজের টলমল অবস্থা শক্ত করতেই জাহাঙ্গীর আলমের এলাকায় এমন ঘন ঘন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বলে মনে করছে একাংশের নেতাকর্মী।
তৃণমূলের অভিমত, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পড়েছে চরম ঝুঁকির মূখে দলীয় মনোনয়ন নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ইতমধ্যে আওয়ামী লীগের আদর্শিক, প্রবীণ-ত্যাগী-পরিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা তাকে ত্যাগ করেছে পাশপাশি তৃণমূলের সিংহভাগ তার ওপর থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে এতে দলে তাঁর নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখায় কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু অনুগতদের ওপর নির্ভর করে চলেছেন। কিন্ত্ত দলের প্রবীণ,ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের পরিবর্তে অবমূল্যায়ন করেছেন। এছাড়াও করোনা কালীন সময়ে সরকারি সহায়তা নয়ছয়, মটর বাণিজ্যে, সরকারী খাদ্যগুদাম খাস পুকুর-জলাশয় নিয়ন্ত্রণ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, এমপির বিশেষ বরাদ্দ ইত্যাদি নানা প্রকল্পে তার নয়ছয় করার কথা এলাকার মানুষের মূখে মূখে প্রচার রয়েছে। আবার স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, আত্মীয়করণ, অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড ও সুযোগসন্ধানীদের অধিক মূল্যায়ন করা হলেও প্রবীণ,ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এছাড়াও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েও সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার-গতিশীল করতে ব্যর্থ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি তেমন কোনো ভুমিকা রাখতে পারেননি বলেও শোনা যাচ্ছে।
অসমর্থিত একটি সুত্র জানান, ইতমধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলা, পৌরসভা ও কাঁকনহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের বড় অংশের নেতাকর্মীগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছে বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে। এমনকি প্রার্থী পরিবর্তন করা না হলে চেয়ারম্যান বিরোধীরা তাকে পরাজিত করে প্রতিশোধ নিতে স্বাপক্ষ ত্যাগ করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে । এসব বিবেচনায় এবার তিনি আওয়ামী রীগের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হবেন বলে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, তরুণ, মেধাবী পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা বেলাল উদ্দিন সোহেল। তিনি দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতার ইচ্ছে প্রকাশ করে নির্বাচনের প্রস্ত্ততি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন, সামাজিক,সাংস্কৃতিক খেলাধুলা ও সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে তরুণ, পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ ও মেধাবী নেতৃত্ব হিসেবে তার একটা নিজ্বস্ব ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে।
এদিকে ভোটারদের অধিকাংশ তরুণ,এসব ভোটারদের মানসিকতা ও পচ্ছন্দ বিবেচনা করে তরুণ নেতৃত্ব বেলাল উদ্দিন সোহেলকে নির্বাচনে প্রার্থী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তৃণমুলের মতামত ও ভোটারদের মানসিকতা বিবেচনা করে প্রার্থী দেয়া হলে বেলাল উদ্দিন সোহেলের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।
এছাড়াও অন্যান্য সবকিছু তার অনুকুলে রয়েছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হলে তার বিজয়ের সম্ভবনা অত্যন্ত উজ্জল বলে মনে করছে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, রাজনীতির মাঠে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের চরম ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে তিনি অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন তার আগের সেই জনপ্রিয়তা এখন আর নেই। যে কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী তাঁর বিকল্প নেতৃত্বর দাবি করছেন।
এবিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, আওয়ামী লীগে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া বলে কোনো কথা নেই দলীয় সিদ্ধান্তই শেষ কথা। তিনি মনোনয়ন চাইবেন দেয়া না দেয়া এটা দলের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তারা সকলে তার জন্য কাজ করবেন। #