নিজস্ব প্রতিনিধি…………………………………………………………
খুলনা জেলার বড় বাজারের মেসার্স লোকনাথ ভান্ডার নামের এক আড়ৎ এর সত্তাধিকারী শ্রী গোপাল ঘোষ (৪৫) দ্বারা প্রতারনার শিকার হয়েছেন রাজশাহী বাঘা উপজেলার দীঘা বাজারের আম ব্যাবসায়ী রেজাউল করিম (৫০)। তিনি নিজে পাওনাদার হয়ে উক্ত আড়ৎদারের প্রতারনায় রবিউল ইসলাম নামের এক গোচ্ছিদারী আম ব্যাবসায়ীর দায়ের করা মামলায় আসামী হয়েছে।
রেজাউল করিম নাটোর জেলার লালপুর থানাধীন ধরবিলা এলাকার আবুল কাশেম সরকারের ছেলে। গোচ্ছিদার রবিউল ইসলাম বাঘা উপজেলার বাউসা ভেড়ালীপাড়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, গত ২০২০ ইং সালে মৌসুমে আম কেনা বেচা বাবদ ৭০টি চোতা মূলে গোচ্ছিদার রবিউলের কাছে রেজাউল করিম প্রায় ৭ লক্ষ টাকা পাওনা হয়। পরবর্তীতে এ টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন ভাবে সময় নিয়ে তালবাহানা করতে থাকে রবিউল। নিরুপাই হয়ে টাকা আদায়ের লক্ষ্যে রেজাউল করিম বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করে। এ বিষয়ে আপোষ মিমাংসার জন্য বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে পরপর দুইবার শালিস হয়। দ্বিতীয় দফার শালিসে সমাধানের পরিবর্তে হয় মারামারি। রবিউলের পক্ষের লোকজন রেজাউলের পক্ষের লোকজন কে মারধর করায় ঘটনার জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বাউসা দীঘা দন্দের নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়। কিন্তুু ভুক্তভোগী রেজাউল তার পাওনা টাকা আর ফেরত পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, পাওনা টাকা ফেরত পেতে রবিউলের বিরুদ্ধে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে ২বার এবং বাঘা থানা ১বার তিনবার রেজাউল কোন সময় কোন শসলিসে বলেনি যে সে রেজাউলের কাছে টাকা পাবে। অথচ আড়ৎদার গোপাল ঘোষ বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের শালিসে উপস্থিত সকলের সামনে তার বক্তব্যে তিনি বলেছেন, রবিউলের কাছে রেজাউলের টাকা পাওয়ার বিষয়টি সঠিক। এছাড়াও গোপাল ঘোষের কাছে রেজাউলে ২টি চেকের পাতা ও ১ টি স্ট্যাম্প জমা আছে। এখন প্রশ্ন হলো আড়ৎদারের কাছে জমা রাখা ব্যাবসায়ীর চেকের পাতা গোচ্ছিদারের হাতে গেল কি ভাবে? আর মামলাইবা করলেন কার পরামর্শে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রেজাউল করিম বলেন, রবিউল ইসলাম রাজশাহী ও নাটোরের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগানদার বা গোচ্ছিদার। তিনি অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন আম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আম ক্রয় করে খুলনার গোপাল ঘোষের আড়ৎ এ পাঠায়। আড়ৎদারের কাছ থেকে সে কমিশনের ভিত্তিতে আম পাঠায়। ব্যাবসায়ী হিসেবে রবিউলের সাথে ভালো সম্পর্কের সুবাদে সে বলে, খুলনার মেসার্স লোকনাথ ভান্ডার নামের আড়ৎ আমার পরিচিত। আড়ৎদারের সাথে সম্পর্কও খুব ভালো। আপনাকে দাদনের জন্য অগ্রীম টাকা নিয়ে দিতে পারবো। এছাড়াও ওই আড়তে আম পাঠাইলে অন্য আড়তের চেয়ে বেশী দরে বিক্রয় করে দেব এবং আমের মৌসুম শেষে টাকা পরিশোধ করে দিবে মর্মে প্রলভন দেয়।
পরে খুলনা থেকে আড়ৎদার গোপাল ঘোষ বাউসার গোচ্ছিদার রবিউলের সাথে দিঘা প্রিন্স আমের আড়ৎ -এ আসে। মুখোমুখি তিন জনের কথা হয়। রবিউল বলে যে, আমার মাধ্যমে আম পাঠালে কোন রকম লেনদেনের সমস্যা হলে আমি দায়ভার গ্রহণ করবো এবং গোপাল ঘোষ বলে, আপনাকে ন্যায্য মূল্য দিব । তারপর আমি মেসার্স লোকনাথ ভান্ডারে রবিউলের মাধ্যমে গত ০২/০৬/২০২০ ইং তারিখ হতে ১৩/০৭/২০ ইং পর্যন্ত ৭০ টি চোতার মাধ্যমে মোট ৫ হাজার ৪’শ ২৮ ক্যারেট আম পাঠায়। লখনা, খিরসাপাত, হিমসাগর, ফজলী, ল্যাংড়া ও আশ্বিনা সহ বিভিন্ন জাতের আম পাঠায় যার আনুমানিক ওজন ৩ হাজার ৩’শ ৯৩ মণ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭’শ কেজি। যার আনুমানিক মূল্য ২৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ২’শ ৪৩ টাকা। এর মধ্যে ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫শ’ টাকা প্রদান করেন। বাকি থাকে ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭ ‘ ৪৩ টাকা। টিটি ও বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে মোট ৭ লক্ষ টাকা পাওনা থাকি। তারপর এই পাওনা টাকা চাইতে গেলে দিবো দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। উপায়ান্তর না পেয়ে বিষয়টি আপোষ ফাইসালার জন্য গত ২১/১০/২১ ইং তারিখে ৫নং বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে নালিশী প্রদান করলে সুকৌশলে আপোষ ফাইসালা না করে উল্টো রবিউলের পক্ষের লোকজন প্রভাষক নাসির ও আওয়ামীলীগ নেতা মজিবর কে মারপিট করেন। বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে মারপিটের ঘটনার নিষ্পত্তি হয়। কিন্তুু আমি আম ব্যাবসার পাওনা টাকা ফেরত না পেয়ে রবিউলের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় অভিযোগ করি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ০৯/০৮/২২ ইং তারিখ মঙ্গলবার পুলিশি তদন্তে যাওয়ায় রবিউল ইসলাম এর পক্ষে বাউসা ভেড়ালিপাড়া গ্রামের মৃত আক্কেলের ছেলে জহুরুল ইসলাম গত ১১/০৮/২২ ইং তারিখ সকাল ১০টার সময় পাওনা টাকার মিমাংসা না করলে হয় প্রাণে মেরে ফেলবে নয় মোটা অংকর চেকের মামলা দেবে বলে আমাকে হুমকি প্রদান করে। এ সময় শাহিন আলম (৩২), মশিউর রহমান (৩৩), শরিফ (৩৫) সহ আরও অন্যান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। হুমকির ঘটনায় আমি ১৫/০৮/২০২২ তারিখে বাঘা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জি,ডি) করি। যার নাম্বার ১২৮৫।
রেজাউল আরও বলেন, বাঘা থানায় অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। এ নিয়ে তিন বারের মতো শালিস বসে থানা চত্বরে গোল ঘরে। কিন্তুু সেখানেও নিষ্পত্তি হয় না। পরে বাধ্য হয়ে রাজশাহী আমলী আদালতের শরণাপন্ন হই। বিচার পাওয়ার আশায় রবিউল ইসলাম কে ১ নম্বর ও মেসার্স লোকনাথ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী গোপাল ঘোষ কে ২ নম্বর আসামি করে মামলা দায়ের করি।
অপরদিকে রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে রুপালী ব্যাংক এর বাউসা শাখার একাউন্ট নম্বর ৬০২৩০১০০০০৭৮৪ এর SBLT ৬১৬১১৩ নম্বর এর চেকটি ডিজওনার করে ০৬/১১/২০২২ ইং তারিখে রাজশাহীর বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪ এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৩৬ সি/২২ বাঘা।
রেজাউল বলেন, আমি ২০১৭-১৮ সালে ব্যাবসা করেছি সাদি এন্টারপ্রাইজ এর সত্তাধিকারী সানা ও দুলালের সাথে। পরে ২০১৯-২০ সালে ব্যাবসা করি গোচ্ছিদার রবিউল ইসলামের সাথে। ২০২১ সালে সরাসরি ব্যাবসা করি খুলনার মেসার্স লোকনাথ ভান্ডার এর সত্তাধিকারী গোপাল ঘোষের সাথে। রেজাউল করিমের দাবি তিনি ২০২০ এ-র হিসাব শেষে ৭ লক্ষ টাকা পাওনা রবিউলের কাছে। এ পাওনা টাকা ফেরত পেতে বারংবার বাউসা আম ব্যাবসায়ী সমিতীর সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য সদস্যদের কে বলেও কোন লাভ হয়নি।#