
মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপি মারাত্মক সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও সংঘর্ষ এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে দুই কর্মীর মৃত্যু ও একাধিক মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। অন্যদিকে একই আসনে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দলটি তাদের প্রার্থী হিসেবে সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে ঘোষণা দেয়।
ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি ও উপকমিটি গঠন করে সক্রিয় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। বিএনপির পক্ষ থেকে এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব, সাবেক নেতা কেএম জুয়েল, প্রবাসী শাহাদাত হোসেন শাহীন ও প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের স্ত্রী আভা হক। গত ২৭ অক্টোবর বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য কেবল তিনজনকে মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন ও সুলতানুল ইসলাম তারেক কে ডাকা হয়। দলীয় দ্বন্দ্বে বারবার ঘটেছে সহিংসতা।
২০২৫ সালের ১১ মার্চ তানোরে ইফতার মাহফিলে শরীফ উদ্দীনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন বিএনপি কর্মী গানিউল ইসলাম। ২৭ মার্চ কৃষকদল নেতা নেকশার আলীও একইভাবে প্রাণ হারান। এছাড়া ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও পাল্টা মামলা হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশি থাকলে সমস্যা নয়। সবাই ধানের শীষের সমর্থক। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হলে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। অন্যদিকে সুলতানুল ইসলাম তারেক জানান, বিএনপি বড় দল, প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিছু দ্বন্দ্ব হয়েছে, তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আছে,সংঘাতে না জড়ানোর। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে।
ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, দলের দুঃসময়ে যিনি কাজ করেছেন, নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন মনোনয়ন তারই প্রাপ্য। দল এমন প্রার্থী বেছে নেবে যিনি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তাদের প্রার্থীর পক্ষে গোদাগাড়ী-তানোর অঞ্চলে অসংখ্য ব্যানার-বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। ফলে বিএনপির অর্গানাইজেশনাল দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছে জামায়াত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি যদি নিরসন না হয়, তবে এই আসনে জামায়াতের অবস্থান শক্ত হতে পারে।#