পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মারুফা মন্জুরি খান এর বদলীর সংবাদে। নিজ জেলা শহর পাবনাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার হওয়ার সুবাদে ধরা কে সরা জ্ঞান করতেন এবং বিভিন্ন অনিয়মে জর্জরিত করেছিল পাবনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি যেন পরিবারতন্ত্রের এক বিরল উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মারুফা মন্জুরি খান সৌমি।
বিগত সরকার দলীয় জেলা কমিটির উপদেষ্টা আব্দুল মতিন খান এর মেয়ে হিসাবে তার দম্ভ ছিলো স্পর্ধা দেখানোর মতো, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেও তিনি প্রভাব দেখাতেন তার পিতার নাম ভাঙিয়ে তিনি এও বলতেন রাস্ট্রপতির খুব কাছের লোক তার বাবা তার প্রমাণ মেলে গতবছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাবনার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ ফজলে রাব্বি স্মৃতি পরিষদের সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের অনুদানের আবেদন ফর্ম স্বাক্ষর করাতে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার কে আগে থেকেই নিষেধ করেন, তিনি যেন কালচারাল অফিসার কে না জানিয়ে সাংস্কৃতিক মন্ত্রানালয়ের কোন অনুদান ফরমের ফাইলে স্বাক্ষর না করেন। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন এই ফাইল টি স্বাক্ষর করবেন না। তখন তিনি উত্তরে জানায় আমি নতুন আপনাদের কাউকে তেমন চিনি না, জেলা কালচারাল অফিসার নিষেধ করেছেন তাই স্বাক্ষর করতে পারছি না।
বিষয়টি যখন পরের দিন জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল এর নিকট গিয়ে খুলে বলা হয় তখন জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে কল করে বলে কেন স্বাক্ষর করা হয়নি, তখন তিনি উত্তরে জানায় কালচারাল অফিসার এর নিষেধ ছিলো বলে স্বাক্ষর করিনি স্যার, কথাটি শুনে জেলা প্রশাসক বলেন কালচারাল অফিসার এর কথায় কি শেষ কথা আপনার যাচাই-বাছাই এর প্রয়োজন নেই। তখন নির্বাহী কর্মকর্তা দুঃখপ্রকাশ করে সেই ফিরিয়ে দেওয়া ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এ গেল একটা ঘটনা।
কালচারাল অফিসার এর গ্রুপিংয়ের কারনে পাবনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এখন বিভক্তি চরমে অবস্থান করছে কারণ কালচারাল অফিসার এর মনোনীত ও পছন্দের কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির কোন অনুষ্ঠানে কাউকে পারফর্ম করার সুযোগ তিনি দেন না। এবিষয়ে কয়েকবার জেলা প্রশাসক কে জানিয়ে ও কোন লাভ হয়নি কারণ তার বাবা তখন জেলা প্রশাসক এর ডান বামে সবসময় অবস্থান করতো এবং শিল্পকলার বিষয়গুলো ম্যানেজ করতো। জেলা শিল্পকলা একাডেমির অলিখিত মালিক হয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা।
গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আবারও পুরনো অবস্থানে ফেরার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন ভুক্তভোগী সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। বিগত কয়েক বছরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজিত অনুষ্ঠানে, কালচারাল অফিসার এর বাবা, চাচা, খালা দিয়ে বিচারক এর দায়িত্ব পালন করিয়েছেন এবং বিচারে স্বজনপ্রীতি করে যোগ্য শিশুদের প্রথম দ্বিতীয় না করে তার পছন্দসই শিক্ষার্থীদের বিজয়ী করেছেন।এবিষয়ে অনেক অভিভাবকদের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কালচারাল অফিসার মারুফা মন্জুরি খান এর বাবার দুইটি সংগঠন রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ ও মানবাধিকার নাট্য পরিষদ যে সংগঠন দুটির উল্লেখযোগ্য কোন অবদান নেই এমনকি জাতীয় অনুষ্ঠান গুলোও ঠিকমত পালন করে না। কিন্তু কালচারাল অফিসারের বাবার সংগঠন জন্য ইতিমধ্যে শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে দুটি সংগঠন কেই কিন্তু পাবনায় নিয়মিত সকল জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব করে থাকে সেসব সংগঠন এর অনেক সংগঠন কেই শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারে বিবেচনা করা হয়নি।
এখানেই শেষ নয় শিল্পী দের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারেও রয়েছে চরম পক্ষপাত। অফিসের কাজেও অনিয়ম দৃশ্যমান যেমন কোন সরকারি চাকরি করা কেউ শিল্পকলা একাডেমি তে চাকরি করতে পারে না শিল্পকলার বিধি মোতাবেক কিন্তু পাবনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি তে মুনতাকিম মোঃ ইব্রাহীম তন্ময়, উচ্চাঙ্গ নৃত্য প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত এবং সন্জ্ঞিব কুমার দাশ তবলা প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এই দুইজনই সরকারি চাকরি করেন। এছাড়াও নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অপপ্রয়াসে গত ৫ বছরেরও বেশি সময়ের আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য ফর্ম জমা নিয়েও। আজ অবধি সদস্য পদ দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন এই কালচারাল অফিসার, বারবার বলার পরও এবিষয়ে কর্ণপাত করেননি তিনি। সে কারণে জেলা শিল্পকলা একাডেমি দীর্ঘ ৬ বছর অবৈধ কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ১৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সেগুনবাগিচা রমনা ঢাকা থেকে, বাশি/প্রশা:/জেশিএ/সাঃ/গ-৪২/৮৮/৯৭(১-৫) স্মারকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পাবনা এর এডহক কমিটি অনুমোদন। সূত্র জেলা প্রশাসক পাবনা এর ২৩-০৫-১৮ তারিখের জেশিএ/পাবনা/কমিটি/২০১৫/৩২৪ সংখ্যক পত্র। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী স্বাক্ষরিত পত্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পাবনার সভাপতি হিসাবে জেলা প্রশাসক, সদস্য হিসাবে ১/রবিউল ইসলাম রবি ২/আবুল কাশেম ৩/আশরাফ আলী, এবং সদস্য সচিব কালচারাল অফিসার জেলা শিল্পকলা একাডেমি পাবনা করে ৫ সদস্যর এডহক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ঐ পত্রে উল্লেখ করা হয় এই এডহক কমিটি আগামী ৯০ দিন অর্থ্যাৎ ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখের মধ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমির গঠনতন্ত্র মোতাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পাদন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুমোদন এর জন্য প্রেরণ করার অনুরোধ করা হলো।
কিন্তু বাস্তবতা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসেও সদস্য পদ প্রদান করা হয়নি এবং কার্যনিবাহী কমিটির নির্বাচন ও সম্পাদন হয়নি। গত ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড.সৈয়দ জামিল আহমেদ স্বাক্ষরিত স্মারক নম্বর ৪৩.২০.০০০০.০১২.১৯.০০৩.২১.২৯৯(ক) অফিস আদেশ পত্রে ৩৫ জন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার কে বদলিপূর্বক নিয়োগ এর আদেশ একাডেমির স্বার্থে অবিলম্বে কার্যকর হবে মর্মে জানানো হয়েছে সেখানে পাবনা জেলা কালচারাল অফিসার মারুফা মঞ্জুরি খান কে নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি তে বদলি করা হয়েছে খবরে পাবনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খুশির খবর হিসাবে গ্রহণ করেছে সবাই এবং খুব দ্রুততম সময়ে মারুফা মঞ্জুরি খান কে পাবনা থেকে বদলী করে পাবনায় পদায়ন করা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার কে এম আরিফুজ্জামান কে যোগদান করানোর জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম এর প্রতি প্রত্যাশা করছেন সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মী।
জেলা কালচারাল অফিসার মারুফা মঞ্জুরি খান কে পাবনা থেকে বদলী করায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড.সৈয়দ জামিল আহমেদ এর প্রতি কৃতজ্ঞগতা প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত পাবনা শিল্পকলা একাডেমি থেকে মারুফা মন্জুরি খান কে বদলী করার জন্য জেলা প্রশাসক কে আহবান জানিয়েছেন একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন, লালন স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল করিম মনি,সূচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ এর সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ,পাবনা থিয়েটার ৭৭’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, উত্তরণ পাবনার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর কবীর হৃদয়,উচ্চারণ আবৃত্তি অনুশীলন কেন্দ্র’র সভাপতি কবি ও আবৃত্তি প্রশিক্ষক সৈয়দা জহুরা ইরা, তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’র প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের খান প্রিন্স, ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ ফজলে রাব্বি স্মৃতি পরিষদ,পাঠশালা’র সাধারণ সম্পাদক শিশির ইসলাম, পথ সাহিত্য সংসদের সভাপতি আর কে আকাশ,গন্থমেলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সালেক শিবলু, আরশিনগর বাউল শিল্পী সংস্থা পাবনার সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক,মনোয়ারা হালিম পাবলিক লাইব্রেরী’র সভাপতি প্রভাষক এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ প্রমুখ।#