মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা না হলেও রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে অনেক আগেই। আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত ধরে নিয়েই নির্বাচনী মাঠ দখলে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দলীয়ভাবে অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির ভেতরে এখনো মনোনয়নপ্রক্রিয়া চলমান। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একক চাওয়া ক্লিন ইমেজধারী, জনবান্ধব ও নিবেদিতপ্রাণ কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, ব্যারিস্টার মাহফুজুল হক মিলন, সাজেদুর রহমান খান মার্কনি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। তবে এদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। মনোনয়ন দৌড়কে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে গ্রুপিং ও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব। যার জের ধরে তানোর উপজেলায় ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে দুটি হত্যাকাণ্ড। নিহতরা শরীফ উদ্দিনের বিরোধী গ্রুপের বলে এলাকায় পরিচিত। এই অবস্থায় দিনদিন জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছেন অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তাকে নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন। কারণ হিসেবে উঠে আসছে তার মানুষের পাশে থাকার দীর্ঘ ইতিহাস, করোনা মহামারির সময় এলাকার মানুষের পাশে থাকা, বিএনপির নির্যাতিত পরিবারগুলোকে নানাভাবে সহায়তা করা এবং সর্বশেষ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা) আর্থিক সহায়তা ও দান।
এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে সুলতানুল ইসলাম তারেক নিজেকে জনগণের একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার দান ও সামাজিক কর্মকাণ্ড উপাসনালয় ঘিরেই সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা, এমনকি জেলে থাকা নেতাদের পরিবারকেও সহায়তা করেছেন তিনি। ফলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য, দলের জন্য। এই এলাকার নেতাকর্মীরা বহুদিন ধরে নানা নির্যাতনের শিকার। আমি তাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন উপাসনালয়ে দান করেছি, এটা আমার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা। এতে যদি মানুষ উপকার পেয়ে থাকে, তবেই আমার কাজ সার্থক।”
তানোর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শামসুল আলম জানান, “তিনবারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন প্রচারণা চালালেও তিনি এলাকায় বিএনপিকে বিভক্ত করেছেন। তার কর্মকাণ্ড ঘিরেই দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী
সাজেদুর রহমান খান মার্কনি বলেন, “এবার বিএনপি ভাবনাচিন্তা করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বলে আমরা আশাবাদী। এলাকায় যারা গ্রুপিং করছেন ও দলকে বিভক্ত করছেন, তাদের কপাল পুড়তে পারে।” গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বলেন, “ক্লিন ইমেজ ছাড়া কোনো প্রার্থী দিয়ে এই আসনে জয় পাওয়া সম্ভব নয়। তৃণমূলে যে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন অবশ্য নিজেকে জনপ্রিয় দাবি করে বলেন, “কিছু ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে দল জানে কে মাঠে আছে, কে জনগণের পাশে। আমার ওপর আস্থা রয়েছে দলের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর।”
অন্যদিকে, জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “মানুষ এবার পরিবর্তন চায়। তারা আমাকে নির্বাচিত করবে। ১৯৮৬ সালেও এই আসন থেকে আমি এমপি ছিলাম। এবারও মানুষের রায় আমাদের দিকেই যাবে।” প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি (জাপা), এনসিপি কিংবা অন্য কোনো দলের তৎপরতা এই আসনে তেমন একটা চোখে পড়েনি।#