# আলিফ হোসেন, তানোর………………………………………………………….
রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে মিজানুর রহমান মিনুর একচ্ছত্র আধিপত্যর অবসান হয়েছে। রাজশাহীতে সরকার বিনোধী আন্দোলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিপদের মূখে ফেলে মিনু গা-বাঁচিয়ে চলা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছে না। এছাড়াও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাংসদ এ্যাডঃ নাদিম মোস্তফার অনুসারীগণ মিনুকে ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্ত্ততি নিয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। তৃণমুলের অভিমত, মিনুর নিজেরই পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে।অথচ তিনি বার বার সরকার দলীয় নেতাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে দলকে বিপদের মূখে ঠেলে দিচ্ছেন।
রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে মিনুর আগের সেই অবস্থান নেই, অনেক আগেই তিনি তা হারিয়েছেন। ইতোমধ্যে এসব বিবেচনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিনুকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’র ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনুকে পদাবনিত করে যুগ্ম-মহাসচিব থেকে সরিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। এতে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে মিনুর প্রায় দীর্ঘ দু’দশকের একচ্ছত্র আধিপত্যর অবসান হয়েছে।
জানা গেছে, বিগত দিনে রাজশাহীতে বিএনপির দলীয় কর্মীসভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় এর উপস্থিতিতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় মিনু ও তার অনুগত ৪ জন নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব কারণে হাইকমান্ড মিনুর ওপর অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, একই সঙ্গে তৃণমূলের বড় একটা অংশ তার ওপর থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে মিজানুর রহমান মিনুর দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের একচ্ছত্র আধিপত্যর অবসান হয়েছে।
অন্যদিকে রাজশাহীতে এ্যাডঃ শফিকুল হক মিলন এবং সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ঘিরেই বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। এতে সাধারণ নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তবে কি রাজশাহীর বিএনপিতে মিনুর প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে ?
রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে মিজানুর রহমান মিনু একটি সুপরিচিত নাম। তিনি একাধিকবার রাজশাহী সিটিকর্পোরেশনের মেয়র, সদর আসনের সাংসদ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে নেতিবাচক দিকও কম নয়। রাজশাহী অঞ্চলে দীর্ঘ প্রায় দু’দশক তিনি বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। এ সময় তিনি নিজের একক ক্ষমতা প্রয়োগ এবং প্রভাব বিস্তার করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি গঠনে পদ বাণিজ্য, সরকার বিরোধী আন্দোলন- সংগ্রামে গা বাচিয়ে চলা, রাজপথে নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজে আত্মগোপন ও কমিটি গঠনে তার অনুগতদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকায় মিনু রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপিতে একক আধিপত্য বজায় রাখতে পরিক্ষীত ও ত্যাগী নেতা রাজশাহী জেলা
বিএনপির সভাপতি এ্যাডঃ নাদিম মোস্তফা ও তার অনুসারিদের কোনঠাসা করে রাখেন। রাজশাহী মহানগরীতে ওই সময়ে নাদিম অনুসারিদের বিনা বাধায় কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি তেমন কোনো সরকার বিরোধী কর্মসূচী পালন না করে নাদিম মোস্তফা ও তার অনুসারীদের ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠে মিনু অনুসারীরা। অনেকক্ষেত্রে ওই সময়ে মিনু অনুসারিদের বাধার কারণে নাদিম অনুসারিরা সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এসব কারণে একই দলে ও একই এলাকায় থেকেও তাদের বৈরিতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাজশাহী অঞ্চলে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীই নয় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপির হেভিওয়েট এই দুই নেতার বৈরিতা ও বিপরিতমূখী অবস্থান আলোচনা সমালোচনার বিষয় ছিল। এছাড়াও জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও বাঙলা সৃষ্টির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মিজানুর রমান মিনুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল যা চলমান রয়েছে।
এদিকে বিএনপির ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনুকে যুগ্ম-মহাসচিব থেকে সরিয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা করা হয়। আর জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রের বিশেষ সম্পাদক থেকে সরিয়ে নাদিম মোস্তফাকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। হেভিওয়েট এই দুই নেতাকে পদাবনতি করে বির্তকিত নেতা প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হককে পদোন্নতি দিয়ে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছিল যেটা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত মিজানুর রহমান মিনুর অনুসারি, তৃণমূলে নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা মিনুর বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও এ্যাডঃ শফিকুল হক মিলনের দিকে ঝুঁকেছেন। এতে বিএনপিতে মিনুর অবস্থান ক্রমেই মিয়ম্রাণ হয়ে উঠছে। এসব কারণে মিনু রাজশাহী বিএনপিতে নিজের অস্থিত্ব ও অধিপত্য টিকিয়ে রাখতে এ্যাডঃ নাদিম মোস্তফাকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। রাজশাহীতে এখন বুলবুল-মিলন বলয় ঘিরেই বিএনপির রাজনীতি আর্বতিত হচ্ছে বলে বিএনপির দায়িত্বশীলএকাধিক সূত্র এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
বিগত রাসিক নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির ঘটনায় তৃণমূল মিজানুর রহমান মিনুর দিকে অভিযোগ তীর ছুড়েছিল। এসব ঘটনায় রাজশাহী বিএনপির রাজনীতিতে মিনুর অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয়রা জানান, মিজানুর রহমান মিনু বিএনপিতে তার হরানো নিজের ক্ষমতা ও আধিপত্য ফিরে পেতে এবার নাদিম মোস্তফার শরনাপন্ন হয়েছেন। মিনু একদিন যেই নাদিম মোস্তাকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করেছিল সেই নাদিম মোস্তফাকে কাছে পেতে ফের নানা তৎপরতা শুরু করেছেন। কারণ তিনি দেরিতে হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বিএনপিতে তার এই দূর্দীনে নাদিম মোস্তফাকে ছাড়া রাজশাহী বিএনপির রাজনীতির মাঠে তার টিকে থাকায় কঠিন হয়ে পড়বে। তবে নাদিম মোস্তফার অনুসারীরা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী জেলা বিএনপির এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, বিপদে পড়ে মিনু ভাই এখন নাদিম ভাইকে কাছে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যখন তার সুদিন আসবে তখন তিনি আবার তাকে ছুড়ে ফেলে দিবেন কাজেই মিনু ভাইয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকায় হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় মিজানুর রহমান মিনুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। #