# বিশেষ প্রতিনিধি, বাঘা (রাজশাহী) থেকে………………………………
রাজশাহীর বাঘায় মহদিপুর উপর আতারপাড়া এলাকা থেকে বস্তাভর্তি ভারতের মাংস, মাংস বহনকরা, ২টি চার্জার ভ্যান, ১টি থ্রিহুইলার(সিএনজি)সহ চালককে আটক করে উপজেলার মীরগঞ্জ সীমান্তের বিজিবি। মঙ্গলবার(১৭-০১-২০২৩) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চালকসহ মাংসগুলো আটক করে মীরগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্পে নেওয়া হয়। ভ্যান-থ্রিহুইলার(সিএনজি) ও মাংসগুলো মীরগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্পে রেখে চালকদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
উপজেলার আলাইপুরের গাবতলী পাড়ার আলতাবের ছেলে চার্জার ভ্যান চালক মিঠন, বারশতদিয়াড়ের শুকুরের ছেলে জিয়ারুল হক ও মীরগঞ্জের মজিবর রহামানের ছেলে থ্রিহুইলার(সিএনজি) চালক আল আমিন সীমান্ত পথে আনা ভারতের মাংসগুলো বহন করছিল। পরে মীরগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্পে যান, উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য মোজাম্মেল হক, শফিকুর রহমান বাবু, আব্দুল মান্নানসহ সংরক্ষিত -১ এর মহিলা মেম্বর রাহেলা বেগম।
শফিকুর রহমান বাবু জানান, বিজিবির সাথে চুক্তি না থাকায় সেগুলো আটক করা হয়েছে। সপ্তাহের ৪/৫দিন ভারতীয় গরুর মাংস সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। বিজিবির সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে ২ মাসের অধিক সময় ধরে ভারত থেকে মাংস আনা হচ্ছে। মোজাম্মেল হক ও রাহেলা মেম্বর জানান,মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যানবাহন ও চালকসহ মাংসগুলো আটকের পরে ভ্যান,থ্রিহুইলার (সিএনজি) ও মাংসগুলো বিজিবি ক্যাম্পে রেখে চালকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মোজাম্মেল হক জানান, মাস দু’এক আগে আমি নিজেও প্রতিকেজি ৪০০শ’টাকা হিসেবে ৫ কেজি মাংস কিনেছিলাম। দেশি মাংসের মতো তেমন কোন স্বাদ পাইনি। তারা জানান, জব্দ করা মাংসের পরিমাণ সোয়া ১২ মণ বলে জেনেছি। তবে তাদের সাক্ষাতে সিজারলিষ্ট করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ৪ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২/১জন জানান, গোপন চুক্তি ছাড়া চালকদের ছাড়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, এলাকার ২/১ জন বিজিবির সাথে চুক্তি করে দেয়। কেউ চুক্তি না করে অতিগোপনে নিয়ে আসলে তারাই ধরিয়ে দেয়।
এরকম একজন হরিরামপুর এলাকার আজিবারের নাম শোনা গেলেও তা অস্বিকার করে আজিবার রহমান বলেন, কেউ শত্রুতা করে আমার নাম বলতে পারে। আমি এসব কাজের সাথে আমি জড়িত নই।
মীরগঞ্জ সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার কাজি কামাল জানান, উপজেলার মহদিপুর উপর আতারপাড়া এলাকা থেকে ২টি চার্জার ভ্যান, ১টি থ্রিহুইলার(সিএনজি)সহ ৯টি বস্তায় ৪৯০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়েছে । দেশী মাংসের দাম হিসেবে যার মূল্যে ধরা হয়েছে ২লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। মাংসসহ জব্দ করা ২টি চার্জার ভ্যান, ১টি থ্রিহুইলার(সিএনজি)ও ৯টি বস্তাসহ সর্বমোট ৭ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯০ টাকার মালামাল জব্দ করা হয়েছে। চার্জার ভ্যান, থ্রিহুইলার(সিএনজি) ক্যাম্পে রেখে মাংগুলো কাষ্টমস কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। চালকদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে বলেন, বিজিবি’র উপস্থিতি টের পেয়ে চালকরা তাদের যানবাহন ফেলে পালিয়ে গেছে। অন্য ৩জনকে দিয়ে যানবাহনগুলো ক্যাম্পে এনেছিলেন,তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ৩জনের নাম জানতে চাইলে তাদের নাম বলতে পারেননি নায়েক সুবেদার কাজি কামাল।
মাংস আনার বিষয়ে কারো সাথে তাদের চুক্তি নাই বলে দাবি করেন তিনি। আলাইপুর সীমান্তের বিজিবি’র কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আব্দুর রব বলেন, জড়িতদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমাদের টহলও জোরদার আছে। এর আগে ৩৫ কেজি ভারতীয় গরুর মাংস জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো গুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, প্লাষ্টিকের বস্তায় করে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে মাংস আমদানি করছে চোরাকারবারিরা। দেশিয় গরুর মাংসের দাম চড়া হওয়ায় ভারতের গরুর মাংস কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। আর বাংলাদেশি মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। দামে কম হওয়ায় ভালো মন্দ যাচাই না করে ভারতীয় মাংসের দিকে ঝুঁকছে মাংস ক্রেতারা।
২/৩ মাস ধরে ভারতে জবাই করা গরুর মাংসগুলো আলাইপুর-মীরগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে দেশে ঢুকানো হচ্ছে। কিন্তু জড়িতরাও তেমন আটক করা হচ্ছেনা। দেশীয় গরুর মাংস ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে গরুর মাংস আমদানির কারণে আমাদের বিক্রিও কমে গেছে। ভারতে গরু জবাই করে এসব মাংস আমদাদি করা হচ্ছে বলে জানান।
উপজেলার পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেরাজ সরকার ও সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মানিক সভায় বিষয়টি অবগত করেছেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) ডা.রোকনুজ্জামান বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা মাংসগুলো কিসের, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সেটা বলা মুশকিল। প্রমান সাপেক্ষে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার শারমিন আখতার বলেন, উপজেলার মাসিক সভায় সীমান্ত এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ থানার অফিসার ইনচার্জকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বাজারগুলোতে মনিটরিং করছি। ভারতীয় মাংস পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আশাদুজ্জামান আশাদ বলেন, দীর্ঘ সময় পলিথিন ও বস্তায় মাংস রাখার কারণে গুণগতমানও নষ্ট হবে। এসব মাংস খেলে বিভিন্ন রকম পেটের অসুখ দেখা দিতে পারে।#